বলিউড কাঁপানো সেই নায়িকাদের অজানা অধ্যায়-
বিনোদন ডেস্ক রিপোর্টার : বলিউড পৃথিবীর বৃহৎ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে অন্যতম। জগতজোড়া জনপ্রিয়তার জন্য হলিউডের পরেই উচ্চারিত হয় বলিউডের নাম। চাকচিক্য ভরা বলিউডে সুযোগ পেতে তাই মুখিয়ে থাকে গ্ল্যামার ছড়ানো অসংখ্য অভিনেতা অভিনেত্রী। অনেকেই সুযোগ পেয়ে নিজের যোগ্যতায় টিকে আছেন, আবার অনেকেই ঐশ্বর্যময় বি-টাউনে প্রতিযোগিতায় না পেরে উঠে হারিয়ে গেছেন অতল গহ্বরে।
বলিউডের মতো বিশাল একটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন প্রচুর অভিনেতা, অভিনেত্রী, শিল্পী, কলা কুশলী আর নির্মাতা। প্রবল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার যুদ্ধে তাদের অবতীর্ণ হতে হয় প্রতিনিয়ত। বলিউডের আকাশে এক সময় দ্যুতি ছড়ানো এই সব মুখগুলি কোথায় হারিয়ে গেলো সে খবর কেউ রাখে না, সবাই চলতি হাওয়ার পন্থি।
চাকচিক্যময় নতুন আবেদনময়ীদের নিয়ে মেতে থাকে সবাই। অথচ একটা সময়ে তাদেরকে বিনোদিত করেছে সেইসব হারিয়ে যাওয়া তারারা। এক সময়ের হৃদয় জয় করা হারিয়ে যাওয়া মহিমা চৌধুরি, কিম শর্মা, মমতা কুলকার্নি, উর্মিলা মাতন্ডকার এবং আনু আগারওয়ালকে নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
মহিমা চৌধুরি ছিলেন বলিউডের এক সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। বলিউডে ১৯৯৭ সালে ‘পরদেশ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক ঘটে তার। এই ছবির মাধ্যমেই ভারতীয় চলচ্চিত্রে ‘সেরা উঠতি নারী অভিনেত্রী’র পুরস্কার জয় করেন। মহিমা দাগ: দ্য ফায়ার, পেয়ার কই খেল নেহি, ধারকান সিনেমার মতো ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে বলিউডে তার অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। শুধু তাই নয়, বলিউডের সব খানের(শাহরুখ, আমির এবং সালমান খান) সাথেই অভিনয় করে সাফল্যও অর্জন করেন মহিমা। বলিউডে তার সবই ঠিকঠাক চললেও একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জন্য নগ্ন হয়ে পোজ দিলে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। ফলে বলিউডে তার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যায়।
স্বামী ববি হাজ্জাজের সাথে ছাড়াছাড়ির ঘটনায় সর্বশেষ খবরে আসেন বলিউডে এক সময়ে ঝড় তোলা অভিনেত্রী মহিমা চৌধুরি।
বলিউডের এক সময়ের আবেদনময়ী অভিনেত্রী কিম শর্মা। আদিত্য চোপড়ার ‘মোহাব্বাতিন’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনা আর খ্যাতির শীর্ষে চলে এসেছিলেন। বলিউডে পা রাখার আগে বিজ্ঞাপন জগতে নিজের সাক্ষর রাখেন কিম শর্মা। সানসিল্ক, পেপসি এবং সাফারির বিজ্ঞাপনে কাজ করেও খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। একিন, তুমসে আচ্ছা কোন হে, ক্যাহ তা হ্যায় দিল বার বার, টম ডিক এন্ড হেরি ইত্যাদি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সফল হননি। তাকেও কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে হয়েছে।২০১১ সালে ‘লুট’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিলো এই সেনসেশনাল বলিউড অভিনেত্রীকে।
নব্বইয়ের দশকে যে ক’জন অভিনেত্রী বলিউডে কাঁপন তুলেছিলো, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান স্কেস সিম্বল নায়িকা মমতা কুলকার্নি। ১৯৯৩ সালে সাইফ আলী খানের সাথে জুটি বেধে মুক্তি পাওয়া পাওয়া সিনেমা ‘আশিক আওয়ারা’। নিজের প্রথম ছবিতে সাইফ আলী খানের সঙ্গে অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার লাক্স অ্যাওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার পুরস্কার জিতেন তিনি। বলিউডে ১১ বছরের অভিনয়জীবনে তিনি বেশ কয়েকটি ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন।
আন্ডারওয়ার্ডের একজন মাধক পাচারকারী ভিকি গোস্বামীর সাথে সম্পর্ক গড়ে সর্বশেষ খবরে আসেন বলিউডে এক সময়ে ঝড় তোলা অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি। দুবাইতে যাবজ্জীবন কারা দণ্ডপ্রাপ্ত মাদক ব্যবসায়ী ভিকি গোস্বামীকে মুক্ত করতে ২০১২ সালের নভেম্বরে তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন মমতা।
মমতা অভিনীত সবশেষ ছবি মুক্তি পায় ২০০২ সালে। এরপর দীর্ঘ একযুগ ধরে তিনি স্বেচ্ছায় অভিনয় জগৎ ত্যাগ করেন। অভিনয় জগৎ থেকে বের হয়ে ধর্মচর্চায় ব্যস্ত আছেন এক সময়ের যৌন আবেদনময়ী অভিনেত্রী।। নিজের জীবন নিয়ে ‘অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান যোগিনী’ শিরোনামে একটি আত্মজীবনী বইও লিখেতে চান এই অভিনেত্রী। ভিকির মতো মমতাও ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
বলিউডে উর্মিলার আগমন ঘটে একজন শিশু শিল্পী হিসেবে। নায়িকা হিসেবে বলিউডের আগে তার অভিষেক ঘটে মালায়লাম চলচ্চিত্রে। গ্ল্যামার আর আকর্ষণীয় ফিগারের জন্য চাহিদার তুঙ্গে ছিলেন এই অভিনেত্রী।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে বলিউডের নায়িকা হিসেবে অভিনয় জগতে পা রাখেন উর্মিলা। সে সময় শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘চমৎকার’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। তবে ১৯৯৬ মালে ‘রঙ্গিলা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। ওই ছবিতে ব্যাপক খোলামেলা হয়ে ক্যামেরার সামনে এসে তাক লাগিয়ে দেন। ‘রঙ্গিলা’র মাধ্যমেই মূলত বলিউডে নিজের অবস্থান পাকাপাকি করেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি, একে একে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন উর্মিলা।
২০০৮ সালের পর দীর্ঘ ছয় বছর চলচ্চিত্রে বাহিরে থাকলেও মাঝখানে ‘আজব’ নামের একটি ছবিতে তাকে দেখা গিয়েছিলো।
বলিউড ইতিহাসের অন্যতম বাণিজ্যিক সফল ছবি ‘আশিকি’। এই ছবিতে অভিনয়ের পর রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া অভিনেত্রীর নাম আনু আগারওয়াল। কিন্তু আশিকির জনপ্রিয়তা তার ধরে রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ এরপর যতো ছবিতেই তিনি অভিনয় করেছেন, তার প্রতিটিই অর্থনৈতিকভাবে চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ হয়। ফলত তার ক্যারিয়ার বলিউডে আর দাঁড়াতে পারেনি।
এমনিতেই বলিউডে ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন আনু, তারউপর ১৯৯৯ সালে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। দীর্ঘ একমাস কোমায় থাকার পর বেঁচে উঠলেও শরীরে একপাশ অবশ হয়ে যায়। এরপর থেকে একাকী জীবনই বেছে নেন তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। আর তার বলিউডে ফেরা হয়ে উঠেনি।