‘বন্দুকযুদ্ধ’ অবিলম্বে বন্ধ করুন-সরকারের প্রতি ৩৪ বিশিষ্টব্যক্তির আহ্বান
ডেস্ক রিপোর্টার : তথাকথিত টার্গেট কিলিং তদন্তের লক্ষ্যে আটককৃত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পুলিশের হেফাজতে একের পর এক হত্যাকরা হচ্ছে। আমরা যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান বলে বিশ্বাস করি এবং সকল নাগরিকের সমানভাবে আইনের আশ্রয় পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে বলে জানি, তাদের কাছে এই বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্তবিবৃতিতে এসব কথা বলেন দেশের বিশিষ্ট ৩৪ জন ব্যক্তি।তারা বলেন, প্রচলিত আইনে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ বলে কোনো শব্দ নেই। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত আইনের শাসনের ধারণায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো অপরাধীকে, তা সে যতোই দুর্ধর্ষ হোক না কেন, বিনা বিচারে হত্যা এমনকি নির্যাতন করার অধিকার প্রদান করা হয়নি।
লেখক (ব্লগার), পুস্তক প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, সাধু, পীর-ফকির, পুরোহিত, ধর্মযাজক, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, নাট্যকর্মী, সমকামী এ্যাকটিভিস্ট ও এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে যে নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে তাতে আমরা আর সকলের মতই অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত ও স্তম্ভিত। এই সব খুনের হোতা, কথিত জঙ্গি-সন্ত্রাসিদের গ্রেফতারে পুলিশবাহিনী বিশেষভাবে তৎপর হবে সেটা আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে পুলিশ বিচারবহির্ভুত হত্যাকা- ঘটাবে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী মাদারিপুরে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বি শিক্ষককে খুনের চেষ্টার ঘটনাস্থল থেকে আটক ২০ বছর বয়সী ছাত্র গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশ হেফাজতে হত্যার শিকার হয়েছে। এর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই খিলগাঁওয়ে আরেকজন ছাত্র শরিফুল (২৫) তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়।
সে অভিজিত রায়ের হত্যাকারী বলে সন্দেহভাজন বলছে পুলিশ, আর নিহতের পরিবার বলছে তার নাম মুকুল রানা এবং তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। এভাবে গত তিন সপ্তাহে সন্দেহভাজন বাইশ ব্যক্তি হত্যার শিকার হলেন।
এছাড়া যশোরে জামিনে মুক্তি পাওয়া মোঃ হেমায়েতকে (২৭) কারা ফটকে নিরাপত্তা কর্মীর সামনেই গুলি করে হত্যা এবং চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরায় পুলিশ সুপার জনতার হাতে বাঁশ তুলে দেয়ার ঘটনা ভয়াবহ ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস যথেষ্ট ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ হলেও এর আগে কখনও এভাবে পদ্ধতিগত ও ধারাবাহিক গুপ্তহত্যা কিংবা এত অল্পসময়ের ব্যবধানে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনপ্রদীপ বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে নিভে গেছে কি না সন্দেহ। দেশের নাগরিকরা তাদের পরিবার পরিজনের নিরাপত্তায় স্বাভাবিকভাবেই ভীত হয়ে পড়ছেন।
অথচ এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের থেকে জনগণ ও ভুক্তভোগী পরিবার আদৌ কোনো আশা-ভরসা বা বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস পাচ্ছে না। উপরন্তু, এইসব ঘটনার বিষয়ে সরকারি মহল থেকে অবিশ্বাস্য এবং অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়ায় রাষ্ট্রের ওপর নাগরিকের আস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ছে।
আমরা এই নিষ্ঠুর, যুক্তিহীন, হঠকারী ও বেআইনি হত্যাকান্ড-অবিলম্বে বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানাই। আর মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত আদালতের কাছে নিবেদন করি তারা যেন স্বপ্রণোদিত হয়ে এইধরণের হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনেন।
বিবৃতিদাতারা হচ্ছেন- ড. শাহদীন মালিক, ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক পারভিন হাসান, অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, ড. স্বপন আদনান, ড. শহীদুল আলম, ড. বীনা ডি কস্টা, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. ফস্টিনা পেরেরা, ফরিদা আখতার, আফসান চৌধুরী, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, এডভোকেট কামরুন নাহার, অনীশ বড়ুয়া, জাকির হোসেন, মোঃ নূর খান, লুবনা মরিয়ম, রাজিয়া কাদির, সইয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, সাফিয়া আজিম, মুক্তাশ্রী সাথী চাকমা, রেহনুমা আহমেদ, নাসরিন সিরাজ, লীসা গাজী, রেজা রহমান লেনিন, মাহীন সুলতান, হানা শামস আহমেদ,তাসাফি হোসেন, ত্রিমিতা চাকমা ও শিরীন হক।