বনভূমি দখলবাজ রিসোর্টে ডিসি’র হানা
শ্রীপুরে ৭৭টি রিসোর্ট-প্রতিষ্ঠানের দখলবাজি-
মোস্তফা কামাল প্রধান গাজীপুর থেকে : অবশেষে বনভূমির রিসোর্টে হানা দিল গাজীপুর ডিসি। শিল্প-কারখানা, প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীদের জবরদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বন বিভাগ। এসব বনভূমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে বন বিভাগ। একের পর এক রিসোর্ট, বাগানবাড়ি, পোলট্রি খামার ও প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে বনের জমি। জবরদখলদারীদের বিরুদ্ধে গত ১৬ বছরে সবচেয়ে বড় চলমান এই অভিযান।
গত ১৭ এপ্রিল থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৮.৭৯ একর বনভূমি। এর মধ্যে শুধু গতকালই উদ্ধার করা হয়েছে ১.২৬ একর জমি। উদ্ধার করা এসব জমির বাজারমূল্য অন্তত ৫০ কোটি টাকা। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
ধারাবাহিক এই উচ্ছেদ অভিযানে গতকাল নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুম মুনিরা কাইসাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রুবিয়া ইসলাম, সহকারী বন সংরক্ষক মোজাম্মেল হোসেন এবং রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা।
আজ ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নলজানী এলাকার সজনী ফিলিং সিটিতে অভিযান চালিয়ে ৮০ শতক, মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকে বাড়ি এলাকায় শালবন গ্রিন রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে ৩০ শতক এবং শ্যামলী পিকনিক স্পটে অভিযান চালিয়ে ১৬ শতক জমিসহ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের জবরদখলে থাকা মোট ১.২৬ একর জমি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার গাজীপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হকের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ম্যাক্সভ্যালি রিসোর্টের দখলে থাকা ৮৫ শতক, অনন্ত ভবনের দখলে থাকা ৯৫ শতক, রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টের দখলে থাকা ৬৩ শতক এবং গ্রিনটেক রিসোর্টের দখলে থাকা ৫৪.৫৪৭ শতক বনভূমি উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে সদর উপজেলায় মোট দুই একর ৯৭ শতাংশ বনভূমি দখলমুক্ত করা হয়।
গত সপ্তাহে শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসার নেতৃত্বে পরিচালিত পৃথক অভিযানে ফজলু পোলট্রি ফার্মের দখল থেকে ১.৩৫ একর, আল নূর হ্যাচারির দখল থেকে ১.৪১ একর, মাটির মায়া ইকো রিসোর্টের দখল থেকে ১.৫ একর এবং ফাউগান ইকো রিসোর্টের দখল থেকে ৩০ শতাংশ বন বিভাগের জমি উদ্ধার করা হয়। শ্রীপুর উপজেলায় উদ্ধার করা মোট জমির পরিমাণ ৪.৫৬ একর।
সহকারী বন সংরক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তি ছাড়াও বনভূমি জবরদখলকারী হিসেবে ৭৭ প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছিল। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছিল।
শুনানি শেষে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ ওই তালিকা অনুযায়ী যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। বনভূমি উদ্ধার ও জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ ও প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বুধবার তিনটি প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা ১.২৬ একর বনের জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সদর উপজেলা এবং শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন রিসোর্ট ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা ৭ একর ৫৩ শতাংশ বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে উদ্ধার করা জমির পরিমাণ ৮.৭৯ একর।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে নদী, খাল ও বনভূমি দূষণের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’