বঙ্গ ললনার রোমাঞ্চ শাড়িতে শরীর খোলে..
দিনা করিম : ললনার পুজো মানে এখন শরীর, শিহরন আর শাড়ি। এই বারো হাতের সম্মোহনেই লুকিয়ে আছে আজকের পুরুষের শারদীয় রোম্যান্স।ওই বুঝি আঁচলটা গেল সরে…বা দৈবাত্ খসেই পড়ল…। শরীর জড়ানো এই বারো হাতেই ফুটে ওঠে শরীরী বাঁকঝোঁক। শরীরের কিছুটা খোলা আর কিছুটা ঢাকার মধ্যে যে উষ্ণতা ধরা পরে, তা যেন আর অন্য পোশাকে কিছুতেই আসে না।
শাড়ি অত্যন্ত প্রিয় অভিনেত্রী কিরণ খেরের। সেরা সব শাড়ি পরেন তিনি। কিরণ বলছেন, শাড়ি তাঁর কাছে কোনও ফ্যাশন নয়। আস্ত একটা ভারতবর্ষ যেন। “ভারতবর্ষের ঐতিহ্য আর আধুনিকতা মিশে আছে শাড়ির শরীরে। শাড়ির ছড়ানো রং, সুতোর বুনোট, কারুকাজ আমাকে ভারতবর্ষকে চিনতে শেখায়। যে কোনও লুকেই এই বারো হাতের উপস্থিতি সকলের নজর কেড়ে নেয়।
কেউ যদি এলিগেন্ট লুক চান তো তাঁকে শাড়ির কাছে আসতেই হবে। আবার কেউ যদি দুঃসাহসী হতে চান শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরার নেই। শাড়িতেই শরীর খোলে,” মুচকি হাসলেন কিরণ। অন্য দিকে রিলেশনশিপ ম্যানেজার সুনয়নার মতে, “আসলে পুজোর সঙ্গে শাড়ির একটা ভক্তিযোগ আছে। সেখানে শাড়িটাই চলে।
সারা বছর শাড়ি পরার কথা না ভাবলেও পুজোতে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না। আর যে কোনও বয়সের পুরুষই হোক না কেন, শাড়ির প্রতি আকৃষ্ট তারা হবেনই। শরীর আরও খোলামেলা হয় শাড়ির খামখেয়ালে।”
পুরুষের চোখে কেমন করে আকর্ষণীয় করে তুলবেন শাড়িতে?
অল্পবয়সিদের রেডি শাড়ি
শরীর বুঝে শাড়ি বাছুন, বলছেন অভিনেত্রী গার্গী রায় চৌধুরী। নিয়ন রঙের একই শেডের হাল্কা থেকে গাঢ় হয়ে আসা শিফন, ক্রেপ বা জর্জেট শাড়ির এ বারে খুব কদর। “যে কেউ আবার ফ্যাশনের সঙ্গে পা মেলাতে কেবল শিফন, ক্রেপ, জর্জেট শাড়ি প্লিজ পরে বসবেন না। এই ধরনের শাড়ি পরলেই যে রোগা লাগবে এমনটাও নয়। টোনড বডি ছাড়া কিন্তু এই ধরনের শাড়ি পরা যায় না। মানে খুব রোগা বা মোটা কেউ কেবল রোগা দেখাতে শিফন শাড়ি পরবেন না। আপনার চর্বির খাঁজে খাঁজে যদি এই শাড়ি লেগে থাকে তাহলে সেটা যে কী ভয়ানক দেখতে লাগবে সেটা প্লিজ ভেবে নিয়ে শাড়ি বাছুন” গার্গীর সতর্কবাণী।
ফ্যাশন মানে যা চলছে তা পরা নয়, ফ্যাশন মানে শরীর বুঝে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করা। একরঙা হ্যান্ডলুমের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট পিঠ কাটা ব্লাউজ পরলেও পুরুষের চোখে আপনি রমণীয় হয়ে উঠতে পারেন। হল্টার ব্লাউজ দিয়ে ক্লিভেজ দেখালেই যে পুরুষ বশ করা যায় তা কিন্তু নয়, আপাদমস্তক ঢেকেও আপনি হয়ে উঠতে পারেন মোহময়ী। “ভাবুন তো রেখাকে!” হরিণচোখে বিস্ময় ফুটিয়ে বললেন গার্গী।
তবে এ রকমটাও মনে করার কারণ নেই যে শিফন শাড়ি না পরলে পুজোই মাটি। ড. রূপালি বসু তাঁর পুজো সম্ভার সাজিয়েছেন এক অভিনব ‘কাট-পেস্ট’ শাড়ি দিয়ে। গরদের রেশম বুনোটে তিনি মিশিয়ে দিচ্ছেন বেনারসির আভিজাত্য। যে কোনও দুটো প্রদেশের ট্র্যাডিশনকে মিশিয়ে কাট-পেস্ট করে তিনি তৈরি করছেন এক অনন্য ট্রেন্ডি লুক। অল্পবয়সিদের মধ্যে এখন শাড়ি পরার খুব চল। সেই কথা মাথায় রেখে রূপালি তৈরি করেছেন রেডি শাড়ি। পুরো শাড়িটাকেই হাল্কা কাপড় দিয়ে ফ্রেমিং করে দিচ্ছেন রূপালি। আলাদা করে যাতে ফলস্ বসানোর ঝামেলায় কাউকে আর যেতে না হয়।
ব্লাউজের বাঁকঝোঁক
শাড়ি তো হল। কিন্তু ব্লাউজ নিয়ে কী ভাবছেন রূপালি?
“শাড়ি আসলে শরীরকে বেঁধে রাখে। এই বাঁধনে যে কোনও শাড়ির সঙ্গে আমার প্রথম পছন্দ হাতকাটা, পিঠ খোলা ব্লাউজ। ওই বাঁধন ছেঁড়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে শরীরী সম্মোহনের রহস্য,” আবেগ জড়ানো স্বর রূপালির।
বিকিনি ব্লাউজ দিয়ে ক্লিভেজ দেখানোই কিন্তু আজকের নারীর শাড়ি পরার শেষ কথা নয়। ভারী চেহারায় সেক্সি লুক আনতে কাঞ্জিভরম, হাই হিল কনুইয়ের আগে অবধি ডিপ কাট ব্লাউজের আবরণও শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতা দিতে পারে বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য।
জেন ওয়াইয়ের জন্য প্রণয় বৈদ্য হেঁটেছেন অন্য পথে। “এ বারে বানিয়েছি জেন ওয়াই শাড়ি। খুব জমকালো সেই শাড়ির নাম লহেঙ্গা শাড়ি। আঁচলের দিকটা ভারী। কুঁচির দিকটা তিন লহরী দিয়ে স্টিচ করা। দেখতে অনেকটা লহেঙ্গার মতো। কিন্তু আসলে শাড়ি। রয়েছে কলিদার লহেঙ্গা শাড়িও। কোমরের ঘের থেকে পা পর্যন্ত যার কলিদার কাট। হাঁটু থেকে আরও একটা ঘেরা দেওয়া যেতে পারে যাতে একটা ডিভা লুক আসে, বললেন প্রণয় বৈদ্য।
টোনড্ শরীরে স্টোনের জাদু
নানা ডিজাইনারের অভিমত নিয়ে জানা গেল স্টোনের কাজ করা শাড়ি এ বার অনেকেই পরতে চাইছেন। সি-থ্রু, নেট, শিফন, ক্রেপের ওপরেই এই কাজগুলো খোলে আর নিজের টোনড বডিকে এই ধাঁচের ফেব্রিকে জড়িয়ে রেখে সেক্স অ্যাপিল তৈরি করতে এই শাড়ির কোনও বিকল্প হতে পারে না।
“শাড়ির মধ্যে দিয়েই একজন নারীকে চেনা যায়। শাড়িই বলে দিতে পারে নারীর অন্তরের কথা। আর সেই কারণেই যুগ যুগ ধরে শাড়ি পুরুষদের মন টেনেছে,” শাড়ির রহস্য তুলে ধরলেন বাচিক শিল্পী রায়া ভট্টাচার্য। প্রাদেশিক শাড়ি, বিশেষত দক্ষিণী শাড়ির প্রতি তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। কাঞ্জিভরমের মতো ভারী সিল্কের সংগ্রহে তিনি সকলকে চমকে দিতে পারেন। ইদানীং যদিও লাইটওয়েট কাঞ্জিভরম তাঁর পছন্দের তালিকায়। শাড়ি কিনতে গিয়ে সময়ের খেয়াল না থাকলেও মঞ্চে নিজের পারফর্ম্যান্সের কথা মাথায় রেখে উজ্জ্বল রঙের চওড়া পাড়ের শাড়ি পরতেই পছন্দ করেন রায়া।
উত্সবের দিনগুলোয় এ শহরের নন্দিনীদের সাবেক শাড়িতেই দেখতে ভালবাসেন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা। বললেন, “পুজোয় বাঙালি মেয়়েদের শাড়িতেই ভাল দেখায়। তাঁত, হ্যান্ডলুম, ক্রেপ, জর্জেট, সিল্ক এমব্রয়ডারি যে কোনও শাড়িই এ দিনগুলির উপযোগী। শাড়ির সঙ্গে লেগিংসের মতো এক্সপেরিমেন্টাল সাজের কথাও ভাবা যেতে পারে। তবে তাতে স্বচ্ছন্দ হতে পারলে, তবেই। চন্দ্রাণীর মতে, রঙের ক্ষেত্রে পুজোর ফ্যাশনে ‘ইন’ অ্যাসিড কালার্স। অর্থাত্ বিভিন্ন রঙের ফ্লুরোসেন্ট শেড। তবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ওই রং নয়়। বরং বাকি পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রংগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাতে বোনা লিনেন রোম্যান্স
গড়িয়াহাটের শাড়ির দোকান থেকে বুটিকের কেনাকাটায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে এ বারের শেষ পুজো বাজারে ক্রেপ, জর্জেটের রাজত্বে জায়গা দখল করে নিচ্ছে হ্যান্ড ওভেন লিনেন শাড়ি। এথনিক ম্যাট লুকের বাজারে এই হাল্কা ফেব্রিক ঘন করে তুলবে প্যান্ডেলের অব্যক্ত রোম্যান্স। “হাতে গুলে রং তৈরি করা হয় বলে এই শাড়িতে যে কোনও রং খুব উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়। আর মাখনের মতো নরম ফেব্রিক আমাদের মতো গরমের দেশের জন্য একেবারে আদর্শ” হাসতে হাসতে বললেন স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর বুটিকে লিনেনের স্টক প্রায় শেষ। হল্টার ব্লাউজ দিয়ে মিক্স অ্যন্ড ম্যাচ করে লিনেন পরে চলে যান প্যান্ডেলে, সন্ধিপুজোর পদ্ম আপনার শরীরেই প্রথম পাপড়ি মেলুক।