বঙ্গবন্ধু সেতুরক্ষা বাঁধে ভাঙন কেন?
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধে দ্বিতীয় দফায় ভাঙন নিয়ে তোলপাড় চলছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে এ অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব প্রান্তের দক্ষিণের গরিলাবাড়ী অংশে সেতু রক্ষা গাইড বাঁধে মঙ্গলবার বিকেল থেকে দ্বিতীয় দফায় ভাঙন শুরু হয়। এতে রাত ১০টা পর্যন্ত ১ হাজার মিটার অংশ ধসে ব্লক ও পাথর দিয়ে তৈরি গাইড ওয়ালটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মধ্যে পড়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বঙ্গবন্ধু সেতু।বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিবিএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন হোসেন। এর আগে শনিবার থেকে অব্যাহতভাবে বাঁধে ধস ও ভাঙন দেখা দিলেও তা রোধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি বিবিএ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ সেতুর নিকট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এবং যমুনার পানি কমে যাওয়ায় এই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধটি দ্রুত মেরামত করা না গেলে একদিকে সেতুটি হুমকির মুখে পড়বে, অন্যদিকে আশপাশের প্রায় ৭ থেকে ৮টি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হঠাৎ করে তীব্র ভাঙ্গনের ফলে চরম বিপাকে পরেছে ভাঙন কবলিতরা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) সাইট অফিসের প্রকৌশলীরা নদী শাসনের জন্য অদক্ষ লোককে নিয়োগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন রিভার ট্রেনিং এন্ড ওয়াটার (আরটিডাব্লিউ এন্ড ব্লিডিং) রক্ষনাবেক্ষণ প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরি করছেন। সেতু নির্মাণের সময় তৎকালীন এমএল মনিকো কোম্পানিতে তিনি রুম বয় হিসেবে বাগবাড়ি ক্যাম্পে কাজ করতেন।
পরবর্তীতে জোমাক-এমএল মনিকো জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিতে নদী সার্ভেয়ার ও মারগানেট ওয়ান নামক আরেকটি কোম্পানিতে আর টি ডাব্লিউ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন। এরপর বিবিএ সাইট অফিসে আর টি ডাব্লিউ এন্ড বিল্ডিং সেকশনের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী হিসেবে চাকুরী করছেন। ফলে যমুনা নদী শাসনের দক্ষ লোকবল না থাকায় গত শনিবার থেকে বাঁধ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বক্তার বক্তব্য রেকর্ড করা আছে।
স্থানীয় দক্ষিণ বেলটিয়া গ্রামের আব্দুল আলীম ও চাঁন মিয়া শিকদারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিবিএ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে এখানে সব অবৈধ কাজই করা সম্ভব। তেমনি বালুখেকোরা তাদের টাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাঁধের অংশ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলণের কারণে বাঁধে ভাঙন ও ধস শুরু হয়েছে। বিকেল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ হাজার মিটার বাঁধ নদী গর্ভে চলে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেতু এলাকায় তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব কালিহাতী উপজেলার গরিলাবাড়ি এলাকায় সেতুর দক্ষিণের গাইড বাঁধে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষার্থে যমুনা নদীতে সিসি ব্লক ও কার্পেটিং করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) সাইট অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. শাহীন হোসেন বলেন, সেতুর দু’পাশের ৬ কিলোমিটার এলাকায় যেকোন ধরনের ঘটনাই সেতুর জন্যেই হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে বঙ্গবন্ধু সেতু হুমকিতে রয়েছে।
এর আগে গত শনিবার বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি প্রকৌশলী মো. ওয়াসিম আলী জানিয়েছিলেন, মূল সেতুর বাইরে ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তা ভেঙে যায়নি। ধসের অংশটুকু সেতুর মধ্যে পড়ে না।