বঙ্গবন্ধু কারাস্মৃতি গ্যালারিতে আবেগে আপ্লুত-অশ্রুসিক্ত শেখ হাসিনা-রেহানা
এস রহমান : বঙ্গবন্ধু কারাস্মৃতি নির্দশন গ্যালারিতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন
শেখ রেহানা। গ্যালারি ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে দুই বোনের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিল।চোখের কোনে চিক-চিক করছিল জল। ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীরা জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন এ তথ্য।
আজ শনিবার বৃষ্টি’র মধ্যই পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করতে গিয়ে বাবার স্মৃতিচিহ্ন দেখে আবেগঘন-নির্বাক হয়ে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা।
আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন জাতিরকন্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কারাস্মৃতি নির্দশন গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা যখন ঘুরেঘুরে দেখেন, তখন দুই বোনের চোখ জলে চিক-চিক করতে দেখি। দুই জনকেই খুব আবেগাপ্লুত দেখা যায়। আমি দেখেছি, বাবার স্মৃতিচিহ্নগুলো বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে আবেগঘন করে তোলে।
কারা কর্তৃপক্ষ জাতিরকন্ঠকে জানায়, শনিবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমেই শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানা ও ববিকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাস্মৃতি জাদুঘরে যান। জাদুঘরের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
রাজনৈতিক জীবনে বহুবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খেটেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলন ছাড়াও ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন জেল খেটেছেন এই সংগ্রামী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র ৮০ দিনের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এরপর স্মৃতি জাদুঘরের বঙ্গবন্ধু কারাস্মৃতি নির্দশন গ্যালারিতে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ছবি ঘুরে-ঘুরে দেখেন তারা। সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু যে কক্ষটিতে বন্দি ছিলেন, সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন রেহানা। কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার, হাড়ি-পাতিলসহ বেশ কয়েকটি আসবাবপত্র রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রায় আধা ঘণ্টা এ কক্ষটিতে অবস্থান করেন।
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবার বন্দি থাকার কক্ষ ও ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজসপত্র দেখেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চেহারায় যেন পাহাড়সম বেদনা ভর করে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর কারা স্মৃতি জাদুঘর থেকে বেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী পুরাতন কারগারের বর্তমান নকশা দেখেন। এ সময় একজন কর্মকর্তা নকশার বিভিন্ন অংশ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট তুলে ধরেন।
সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চার নেতা কারাস্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে প্রবেশ মুখেই রয়েছে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লাশ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যে জায়গাটিতে মরদেহ রাখা হয়েছে সেই স্মৃতি চিহ্ন। জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে প্রবেশের আগে এ জায়গাটিতে এসে খানিক সময় দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। জাদুঘর প্রাঙ্গণে থাকা জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
এরপর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সেখানে প্রবেশ করেন। কক্ষটিতে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। কারাগার পরিদর্শন শেষে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন রেহানার চেহারায় বিষাদের ছায়া ছিল।
১৭৮৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে নির্মিত হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। প্রথমে এটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নামে পরিচিত ছিল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ইংরেজ, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের নানা ঘটনার সাক্ষী। চলতি বছরের জুলাই মাসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে স্থানাস্তর করা হয়।