• সোমবার , ১১ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আড়ালে রেখে জুবিলী ব্যাংকের মূলধনী ব্যবসা


প্রকাশিত: ৭:৩০ পিএম, ১১ অক্টোবর ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার

এস রহমান : বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আড়ালে রেখে জুবিলী ব্যাংকের মূলধনী ব্যবসা নিয়ে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশ jubili-bank-bangobandu-mardarar-www-jatirkhantha-com-bdব্যাংকের নির্দেশনা থোরাই কেয়ার করে এই অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এমবিআই মুন্সী।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের বার্ষিক মূলধনের বিপরীতে মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে জুবিলী ব্যাংকের পরিচালক দেখানো হয়। কিন্তু সে সময় তার কী পরিমাণ শেয়ার ছিল তা উল্লেখ নেই। ১৯৯১ সালের ২৩ জানুয়ারি জুবিলী ব্যাংকের দাখিল করা ১৯৯০ সালের বার্ষিক মূলধন বিবরণী অনুযায়ী, ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকা।

ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদ পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেয় ব্যাংকটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭০ বছর এটি সমবায় ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হতো।

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল ফারুক, রশিদ ও বজলুল হুদা ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসা করে যাচ্ছে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড। দেশের সবচেয়ে পুরনো এই ব্যাংকটিতে শেয়ার রয়েছে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) রশীদের নামে রয়েছে ৮৫ হাজার শেয়ার। এছাড়া, মেজর (অব.) বজলুল হুদার নামেও বেশ কিছু শেয়ার রয়েছে। জুবিলী ব্যাংকের কোনও শাখা নেই। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুরে একটি মাত্র কার্যালয়ে কার্যক্রম চলছে এ ব্যাংকের।

আরজেএসসি এর তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর তিন খুনি জুবিলী ব্যাংকের মালিকানায় ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন এ তথ্য গোপন করেছে জুবিলী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ বিষয়ে ব্যাপক খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জাতিরকন্ঠকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জুবিলী ব্যাংকের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি অসৎ উদ্দেশ্যে তথ্য গোপন করা হয়, তাহলে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, আরজেএসসি কে শেয়ার ধারণের তথ্য জানানোর কথা থাকলেও ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা করা হয়নি। এমনকি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদের নামে কী পরিমাণ শেয়ার ছিল, তার তথ্যও আরজেএসসিতে জমা দেওয়া হয়নি। পরে কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদের নামে থাকা ৮৫ হাজার শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সংস্থাটি।

ওদিকে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মেজর (অব.) বজলুল হুদা দুবছর ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। সে তথ্যও গোপন করা হয়েছে। ব্যাংকটির ১৯৯২ সালের বিবরণীতে তাকে আর পরিচালক উল্লেখ করা হয়নি। তার শেয়ারের বিষয়েও সরকারকে কোনও তথ্য দেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, গত জুনে জুবিলী ব্যাংকের এক শেয়ার হোল্ডার অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে।এ থেকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের মুনাফা পাচ্ছে তাদের পরিবার। যা দেশবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে এবং জঙ্গি অর্থায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এরই অংশ হিসাবে জুবিলী ব্যাংকে থাকা দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার জন্য গত ২৯ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এটি পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত না থাকায় বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে অপারগতা জানিয়ে গত ২৬ জুলাই মন্ত্রণালয়কে ফিরতি চিঠি দেয় বিএসইসি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এরপর ব্যাংকটিতে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়। পাশাপাশি আরজেএসসিকেও এসংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে আরজেএসসি ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জুবিলী ব্যাংকের বার্ষিক মূলধন বিবরণী যাচাই করে দেখে যে, ব্যাংকটিতে বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর (অব.) বজলুল হুদারও শেয়ার রয়েছে।