ফ্যাসিস্টরা কলকাতায়-পার্কে আড্ডায় কামাল অসীম-অপু উকিল
বিশেষ প্রতিনিধি/কলকাতা প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালানোর নির্দেশদাতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতে পালিয়ে গেছেন। একাধিক সূত্রে এর সত্যতা মিলছে। কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন এ খবর প্রচার করছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও সেখানে সাবেক সাংসদ অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল ও হাজী সেলিমের এক ছেলে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ সময় আসাদুজ্জামান খানের মুখে সাদা দাড়ি দেখা যায়। পরে পার্কে কিছু বাংলাদেশি জড়ো হয়ে যাওয়ায় তারা দ্রুত সটকে পড়েন। এ ছাড়া কিছু অপরিচিত লোকজন ভিডিও করতে বাধা দিচ্ছিলেন। তবে সেখানে থাকা কয়েকজন বাংলাদেশি তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বুধবার (২ অক্টোবর) বক্তব্য দিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক (মুখপাত্র) লে. কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারতে অবস্থানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনারা টিভিতে দেখে যা জানেন, আমিও সেভাবেই জানি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈধভাবে গেছে নাকি অবৈধভাবে গেছে সে সম্পর্কে র্যাবের কাছে কোনো তথ্য নেই। এখানে র্যাবের কোনো ধরনের উদাসীনতা বা গাফিলতির বিষয় নেই। আমাদের যে দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্বে) মো. শাহ আলম বলেন, আমি গণমাধ্যমে খবর দেখেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন কলকাতার একটি পার্কে দেখা গেছে। তারা কীভাবে গেছেন সে তথ্য ইমিগ্রেশন পুলিশে নেই।
তিনি বলেন, এতোটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যাদের দেখা গেছে তারা কেউ ইমিগ্রেশন ক্রস করেননি। ইমিগ্রেশনে তাদের দেশত্যাগের কোনো তথ্য নেই।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহ আলম বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবরে দেখেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে কলকাতার একটি পার্কে দেখা গেছে। তারা কীভাবে সেখানে গেছেন, সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। ইমিগ্রেশনে তাদের দেশত্যাগের কোনো তথ্য নেই।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তাঁর স্ত্রী লুত্ফুল তাহমিনা খান ও মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানসহ ১০ জনের দেশত্যাগে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।
এদিকে ফ্যাসিস্টদের কলকাতায় আত্মগোপনে দেখা যাওয়ায় অনলাইনে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদ হাসান খান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, কীভাবে ভারতে গেলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? এর জবাবদিহি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিতে হবে। বাহেস্তি জুয়েল নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, এত বড় জঘন্য লোক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি কিভাবে ভারতে পালিয়ে গেলেন? যারা সরাসরি ধ্বংসলীলায় মেতে ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় না আনতে পারলে ,,,দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে না, এটা জাতির কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে থাকবে!!
বদরুল আমিন খান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে সীমান্তের কাঁটাতার টপকে ভারতে প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৪০০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। ইকো পার্কে রাতে সাধারণত কলকাতার স্থানীয়রা আড্ডা দেয়ার সুযোগ পান। সাথে থাকে ডিনারেরও ব্যবস্থা। নিরাপদ ভেবে সেখানে বসেই আড্ডা দিচ্ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাথে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল ও হাজী সেলিমের ছেলেসহ আরও কয়েকজন।
বাহ কী দারুণ, এদিকে আমরা ইউনুসের মাথা খারাপ করে ফেলতেছি, এইটা লাগবে ঐটা লাগবে। আর ওরা কী নিশ্চিন্ত লাইফ কাটাচ্ছে।মোহাম্মদ শওকত হোসেন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ভারতের দালালেরা ভারতে থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক! সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল কে এবার দেখা গেল কলকাতায় ইকো পার্কে…।
গত ১৪ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আছেন- এমন সন্দেহে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতে পালানোর বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গণ-অভ্যুত্থানের দুই মাসের মাথায় এসেও অনেকে গ্রেপ্তার না হওয়া নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন নেতারা।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী-সংসদ সদস্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের কাউকে কাউকে ভারতের বিভিন্ন মাজার ও পার্কেও দেখা গেছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, হত্যা মামলার পরেও এসব আসামি কীভাবে পালালেন, কারা তাঁদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে, এসব বিষয়ে জনমনে যথেষ্ট প্রশ্ন ও উদ্বেগ আছে।