ফেসবুকে আনাসতাসিয়াদের আর্তনাদ-২০০ নারীর ধর্ষণ বর্ণনায় তোলপাড়
ইউক্রেন থেকে শিখা ভৌমিক : পথটা দেখিয়েছেন নারীকর্মী আনাসতাসিয়া মেলনিচেংকো। তার দেখানো পথে অন্তত ২০০ নারী ফেসবুকে নিজের ধর্ষণ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।তারা তুলে ধরেছেন জীবনের কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকারের ঘটনা। অথচ ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন ভয়ে মুখ খোলেননি এসব নারী।
ইউক্রেনে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের ফেসবুকে ধর্ষণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই যেমন এসব নারীদের বাহবা দিচ্ছেন; আবার অনেকে কড়া সমালোচনা করছেন।
বার্তাসংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, সামাজিক বাধা বা ট্যাবু ভেঙে ইউক্রেন ও প্রতিবেশী রাশিয়ার দুই শতাধিক নারী ফেসবুকে নিজেদের ওপর চলা যৌন নির্যাতনের কথা লিখেছেন।
তাদের এই উদ্যোগ ছোট হলেও প্রতিক্রিয়া বড়। ইউক্রেনের একজন আইনপ্রণেতা জানান, ফেসবুকে নারীদের এসব পোস্ট পড়ে আইনজীবীরা তাদের ওপর চলা যৌন সহিংসতা বিষয়ের আইন নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।
সহকারী আইনজীবীরা এ ব্যাপারে স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন।রাশিয়ার শিল্প সমালোচক আশিয়া বাজদিরিয়েভা লেখেন, স্কুলে পড়ার সময় এক যুবক তাকে অনুসরণ করত। সুযোগ বুঝে একদিন তার ওপর সে যৌন নির্যাতন চালায়।
চার সন্তানের মা ভালেরিয়া বেজলেপকিনা এক পোস্টে লেখেন, ওই সময় তার বয়স ছিল ১৯ বছর। প্রায় ছয় ফুট লম্বা ওই যুবক তার এক বন্ধুর বন্ধু। একদিন ফাঁকা রাস্তায় পল তাকে ধর্ষণ করে। সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ভালেরিয়া সেদিন কিছু বলেননি।
রেস্তোরাঁ সমালোচক অরোরা অগোরোদনিক ফেসবুকে লেখেন, তিনি দরিদ্র পরিবারে বড় হয়েছেন। সেখানে যখন-তখন তার ওপর চলত যৌন নির্যাতন।মেলনিচেংকো এভাবে যৌন সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্ষণের ব্যাপারে নারীদের নীরবতার দেয়াল ভেঙে দেন।
তিনি বলেন, ’আমাদের সমাজে যৌন নির্যাতনের জন্য নারীকেই দোষ দেয়া হয়। তাই নারীরা আত্মীয়-স্বজন বা পুলিশকে জানাতে চান না।’ইউক্রেনে সাড়ে চার কোটি লোকের বাস। গত বছর দেশটিতে ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় ৩২০টি মামলা হয়েছে।
দেশটির লা স্ত্রাদা এলাকার আন্তর্জাতিক নারী অধিকার সংস্থার আইনজীবী আনা সায়েংকো বলেন, যৌন সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে কখনও খুব বেশি ভাবা হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা সঙ্গে সঙ্গে কোনো থানায় ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যান না।
এ ব্যাপারে সচেতন হতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সায়েংকো বলেন, যৌন নির্যাতনের সঙ্গে সঙ্গেই নারীকে পুলিশের কাছে যেতে হবে।ফেসবুকে নারীদের দেয়া স্ট্যাটাসে কয়েকজন পুরুষও মন্তব্য করেন।
তারা এর সমালোচনা করে বলেছেন, এভাবে নারীরা নিজেদের জনসমক্ষে বিবস্ত্র করছেন।তবে মনস্তাত্ত্বিক আলেভতিনা শেভচেংকো বলেন, নির্যাতনকারীরা সব সময় চায় নির্যাতিতরা মুখ না খুলুক। আর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নারীরা গোপন করে যাওয়ায় আখেরে তাদেরই লাভ হয়।
সামাজিক বাধা ভেঙে ফেসবুকে এগিয়ে আসা সাহসী নারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেলনিচেংকো।
তিনি বলেন, অন্য নারীরাও যেন এগিয়ে আসেন। কেউ যেন নিজেকে একা না ভাবেন।