ফের সোনালী ব্যাংকে লুটপাট ৬৫৬ কোটি !
এস রহমান : ফের সোনালী ব্যাংকে লুটপাট হয়েছে ৬৫৬ কোটি ! অনিয়ম দুর্নীতি ও জালিয়াতির কারণে ২০০৯-১০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ৬৫৬ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অডিট অধিদফতরের ২২টি অনিষ্পন্ন নিরীক্ষা আপত্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এসব নিরীক্ষা আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি দ্রুত এসব নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি এবং দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আবদুস শহীদ, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, পঞ্চানন বিশ্বাস, অফসারুল আমীন, রেবেকা মমিন, মইন উদ্দীন খান বাদল, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ও রুস্তম আলী ফরাজী উপস্থিত ছিলেন।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে ঋণ পুনঃতফসিল করায় খুলনার দৌলতপুর শাখা সোনালী ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে ৬১ কোটি ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ঋণের গ্রাহক ইস্টার্ন ট্রেডার্সের আসল ঋণ ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ঋণের সুদের পরিমাণ ২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঋণ হিসাবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং গ্রাহকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদীয় কমিটি এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অপসারণের সুপারিশ করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যাতে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে পুনরায় ঋণ গ্রহণ না করতে পারে, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্যান্য ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করার সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, ব্যাংকে দায়বদ্ধ মালামাল ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিক্রি এবং ঋণ হিসাবে জমা না করায় খুলনার দৌলতপুরের কলেজ রোড শাখার ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি ১২ লাখ ৭৪৬ টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান আকবর আলী অ্যান্ড সন্স ও মিতালী ট্রেডার্স।
ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ মালামাল ব্যাংকের অগোচরে বিক্রি করায় এবং অনাদায়ী পিএসসি ঋণ আদায় না করে ঋণ পুনঃতফসিল করায় ঢাকার বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখার ১১ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান অ্যাজাক্স জুট মিলস। অ্যাপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের মালামাল রফতানির মাধ্যমে সমন্বয়ের শর্ত আরোপ না করে মেয়াদী ঋণে পরিণত করা এবং ঘাটতি মালের মূল্য আদায় না করে ঋণ পুনঃতফসিল করায় ক্ষতির পরিমাণ ৭০ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ক্ষমতা বহির্ভুতভাবে এইচ এস ফ্যাশন লিমিটিড ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং মালামাল রফতানি না করে ঋণের টাকা অন্য খাতে বিনিয়োগ করায় ব্যাংকের ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রফতানির সামর্থ যাচাই না করে নাসের গার্মেন্ট ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিপুল পরিমাণ ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং ঋণের টাকা যথাযথভাবে আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুনঃতফসিল করার পরও কিস্তির টাকা নিয়মিত আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ১৪৩ কোটি ৪৫ টাকার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নাম মুন্নু ফেব্রিকস। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা না নিয়ে জালালাবাদ ফার্মাসিউটিক্যালসের ঋণ দফায় দফায় পুনঃতফসিল করায় ব্যাংকের ৩৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জাস গার্মেন্ট ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের রফতানি বিলের দায় এবং ডাউন পেমেন্ট আদায় না করে ঋণ পুনঃতফসিল করায় রমনা করপোরেট শাখার ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহিলা শাখার ব্যবস্থাপক ক্ষমতা বহির্ভুতভাবে জিহাদ গার্মেন্টের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন করায় ব্যাংকের ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ শাখায় বন্ধক থাকা সম্পত্তি ব্যাংকের অগোচরে বিক্রি করে ঋণ হিসাবে জমা না করায় ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখানে ঋণ গ্রহীত প্রতিষ্ঠান ফেইম লেদার।