• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ আজ শুরু হচ্ছে


প্রকাশিত: ৯:৩১ পিএম, ১২ জুন ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৭১ বার

wc2014------1

ক্রীড়া প্রতিবেদক : একটা ছোট্ট গোলক। সেটাই কাঁপাচ্ছে আশ্চর্য গোলক এই পৃথিবীকে। মাঠে সেই গোলক লড়াইয়ের অনিন্দ সুন্দর শৈলি আজ ‘ভাইরাস’ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বময়। প্রতি চার বছর পর পর কিছু দিনের জন্য ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। সেই গোলকের নাম ফুটবল।

অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকঘণ্টার। সাম্বার দেশ ব্রাজিলের সাও পাওলোর মাঠে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ, বিশ্বকাপ। যাকে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ক্রীড়াঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়োজন। বিশ্বের সেরা সব ফুটবল শিল্পীর নয়নাভিরাম নৈপুণ্য, ঝলক আর পায়ে-বলের অপার সৌন্দের্যের সার্থক প্রদর্শনী দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী।

যদিও মাত্র ৩২ টি দেশের খেলা তবে পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে উদ্মাদনা থাকবে না এই বিশ্ব টুর্নামেন্টটি নিয়ে। উদাহরণ তো বাংলাদেশ নিজেই। বিশ্বকাপে কোনোকালেই অংশ নিতে পারেনি দেশটি। অদূর ভবিষ্যতে নিতে পারবে তারও কোনো সম্ভাবনা নেই, কিন্তু ঘরে ঘরে এখন তুমুল প্রতীকি লড়াই। ঘরে ঘরে উড়ছে ভিনদেশি পতাকা। দেয়ালজুড়ে বিচিত্র আঁকিবুকি। হবেই বা না কেন!

World-Cup-----3বিশ্বের কোন হুজুগটাতে সঙ্গ দেয়নি বাঙালি? তার ওপর এতো হুজুগ নয় নির্ভেজাল বিনোদনের তুমুল লড়াই। তাই পুরো দেশ রাজনীতির মত করেই দুটি দলে বিভক্ত, আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। সাথে অবশ্য ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, স্পেন এসব দেশেরও সমর্থক আছে। তবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের লড়াইয়ের তুলনা নেই। রেকর্ড পরিমাণ লম্বা লম্বা ভিনদেশি পতাকা টাঙানো হচ্ছে। ঈদের বাজারের মতই দোকানে বিকোচ্ছে বিভিন্ন দেশের জার্সি আর পতাকা। অবস্থা এমন যে বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হয়েছে ভিনদেশি পতাকা নামিয়ে স্বদেশি পতাকার সম্মান রক্ষা করার। অনেকেই প্রতিবাদ করছেন, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের এই দেশে কেন দেদারসে ওড়বে ভিনদেশি পতাকা। কিন্তু বাস্তবতা হল হুজুগে বাঙালিকে আসলে এই মাসজুড়ে আর থামানো যাবে না। মধ্যরাতে বল গড়াবে ব্রাজিলের মাঠে আর উম্মাতাল হয়ে ওঠবে বাংলাদেশ। সিলেটও এর বাইরে নয়। সে তো পাঠক, প্রতিবেদক সবাই বুঝতে পারেন। না পারলে আজ রাত ২ দুটোর পর একটু বাতাসে কান পাতলেই গোউল গোউল শব্দের মুর্হুমুর্হু উচ্ছ্বাসেই ধরা পড়বে সকল বাস্তবতা।

উল্লেখ্য, বাছাই পর্বে ধাপে ধাপে যুদ্ধ করে ৩১ দেশকে জায়গা করে নিতে হয়েছে চূড়ান্ত পর্বে। আর স্বাগতিক হিসেবে ব্রাজিল খেলছে সরাসরি। এবারের আসর সামনে রেখে প্রাক বাছাই থেকে শুরু মূলপর্বের জন্য লড়াই করে বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ফিফার পূর্ণ সদস্যভুক্ত ২০৮টি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

সাম্বার দেশে বিশ্বকাপ, বিপরীত চিত্রও :

world cup football- jatirkhanthaবিশ্বকাপের আয়োজনে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সত্তর হাজার কোটি টাকা খরচ করছে ব্রাজিল সরকার। নেইমার-ফ্রেড-অস্কারদের জন্য গলা ফাটাতে তৈরি সাম্বার দেশ। দেশ-বিদেশের মিডিয়া, নামীদামী লোকজন থেকে শুরু করে অগুন্তি সমর্থক। হোটেল, পানশালা, খোলা রাস্তায় উচ্ছ্বাসের ছবি। তবে বিপরীত চিত্রও আছে। খোদ ব্রাজিলে বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতেছেন একদল মানুষ। আর একদল বলছেন এই বিশ্বকাপ চাই না। দেশের অর্থনীতি যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন কেন সাধারণ মানুষের করের টাকায় ফুটবলের উতসব? প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। কোপাকাবানার সৈকতে, রিওর রাস্তায়, সাও পাওলোর সাবওয়েতে। সর্বত্র সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ।

১৯৫০-এর পর ২০১৪। আর একটা বিশ্বকাপের আয়োজন করতে লেগে গেল ছয় দশকেরও বেশি সময়। সমীক্ষা বলছে, তারপরও ফুটবলের দেশের ষাট শতাংশ মানুষ বলছেন, এই বিশ্বকাপ তাঁরা চান না। এমনকি প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন একসময়ের বিশ্বজয়ী রোমারিও, বেবেতোর মতো ফুটবলারও।

জিনিসের দাম, যাতায়াতের খরচ আকাশছোঁয়া, চাকরি নেই, ছেলেমেয়ের স্কুলের খরচ কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না, সামাল দেওয়া যাচ্ছে না অসুখ-বিসুখের খরচ, নেই কোনও সামাজিক সুরক্ষা। সেদিকে নজর না দিয়ে বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম তৈরিতে কেন টাকার অপচয় করছে সরকার? প্রশ্ন তুলছেন পেলের দেশের মানুষ। সাতষট্টি শতাংশ ব্রাজিলবাসীর মতে বিশ্বকাপ ডেকে এনেছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

ব্রাজিলের অর্থনৈতিক বিকাশ হার মাত্র এক দশমিক সাত শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রায় সত্তর হাজার কোটি টাকা সরকারি খরচের পরও এই হার শূন্য দশমিক দুই শতাংশের বেশি বাড়বে না। উল্টো, বিপুল খরচের ধাক্কায় বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে ব্রাজিলের কারেন্সি রিয়ালের দাম।

ব্রাজিলের সরকার কিন্তু সমালোচনা শুনতে নারাজ। তাঁদের আশা, বিশ্বকাপ দেখতে আসবেন প্রায় সাঁইতিরিশ লক্ষ মানুষ। পর্যটন থেকে সরকারের ভাঁড়ারে আসবে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিরিশ হাজার কোটি টাকা। খরচের বাকিটা আখেরে উন্নত করবে দেশের পরিকাঠামো।

প্রেসিডেন্ট যাই বলুন না কেন, ফুটবল যে দেশের শিরায়-ধমনীতে সেই দেশের বড় একটা অংশের মানুষ বলছেন বিশ্বকাপ চাই না। বিশ্বকাপের সময় সারা পৃথিবীর চোখের সামনে বিক্ষোভের আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। সাও পাওলোর মাঠে বল গড়ানোর কয়েকঘণ্টা আগেও তাই তাল কাটছে সাম্বার ছন্দে।