• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

ফিলিপাইনে বাংলাদেশের টাকা হ্যাককারী ৬ চক্রের নেপথ্যে বাংলাদেশী গডফাদার ?


প্রকাশিত: ৭:৪৫ পিএম, ১০ মার্চ ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৫ বার

লাবণ্য চৌধুরী   :   যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের টাকা হ্যাক করার ঘটনা তদন্তে ৬ জনের বিরুদ্ধে  চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। চক্রটি bangla-taka froat-www.jatirkhantha.com.bdbangla taka-1-www.jatirkhantha.com.bdবাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা শোধের নামে ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিং করে। ঘটনার নেপথ্য কয়েক বাংলাদেশী গডফাদারের সন্ধান করছে ফিলিপাইনের মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চিত থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে ফিলিপাইনের মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ।

ফিলিপাইনের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) যে ছয়জনকে শনাক্ত করেছে তারা হলেন- মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার লাগ্রোসাস, আলফ্রেড সান্তোস ভারজারা, এনরিকো তিয়োডোরো ভাসকুয়েজ, উইলিয়াম সো গো ও কাম সিন অং (কিম অং)।ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) এদের পাঁচজনেরই অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই পাঁচ অ্যাকাউন্টেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার এসেছিল বলে ডেইলি ইনকোয়ারারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এরপর ওই অর্থ তুলে নিয়ে ক্যাসিনোর মাধ্যমে হাতবদল করে ‘সাদা টাকা’ হিসেবে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও এর পক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ এখনও তদন্তকারীদের হাতে আসেনি।ফিলিপাইনের একটি আদালত ওই পাঁচ ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ছয়জনের সংশ্লিষ্টতার সব অ্যাকাউন্ট ছয় মাসের জন্য জব্দ করার আদেশ দিয়েছে। এ ছাড়া উইলিয়াম সো গো এর কোম্পানি সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিংয়ের সব ব্যাংক হিসাবও জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘এএমএলসির তদন্ত অনুযায়ী, সুইফটের (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মাধ্যমে একটি অননুমোদিত পেমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে, যাতে বড় অংকের অর্থ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর হয়েছে’, বলেছে আদালত।ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ১৫ মে আরসিবিসিতে মার্কিন ডলারের ব্যাংক হিসাব চালু করেন ক্রুজ, লাগ্রোসাস ও ভাসকুয়েজ। প্রাথমিকভাবে তারা সবাই ৫০০ ডলার করে রাখেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে মিলিয়ন ডলার যাওয়ার আদেশের আগ পর্যন্ত ওই সব অ্যাকাউন্টে কোনো ধরনের লেনদেন হয়নি।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ক্রুজ, লাগ্রোসাস, ভারজারা, ভাসকুয়েজ ও গো এমন কোনো আয়ের উৎস দেখাননি যা তাদের অ্যাকাউন্টে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢোকার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারে।ইনকোয়ারার লিখেছে, ৮১ মিলিয়ন ডলারের বেশিরভাগই মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোয় রূপান্তর করা হয়। তারপর এই অর্থ রিজল ব্যাংকের চীনা বংশোদ্ভূত এক ফিলিপিনো নাগরিকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। তিনি ওই অর্থ তুলে নিয়ে যান দুটি ক্যাসিনোতে- সোলায়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো এবং সিটি অফ ড্রিমস অ্যান্ড মাইডাসে।

ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী ক্যাসিনোতে জুয়ায় জেতা অর্থ থেকে নির্ধারিত ট্যাক্স দিলে তা বৈধ আয় বিবেচিত হয়। সেভাবে হাতবদলের পর ওই অর্থ ফিলিপাইন থেকে বাইরে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও সেগুলো আবার বিদেশি মুদ্রায় রূপান্তর এবং অন্য কোনো দেশে যাওয়ার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে বলা হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ শোধের কথা বলে ৮১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে ইনকোয়ারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
ভাসকুয়েজের অ্যাকাউন্টে ২৫ মিলিয়ন ঢুকেছিল কাঁচপুর, মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জাইকার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ শোধের কথা বলে।আইটি প্রফেশনাল লাগ্রোসাসের অ্যাকাউন্টে ৩০ মিলিয়ন ডলার নেওয়ার ক্ষেত্রেও জাইকার ঋণ শোধের কথা বলা হয়। এখানে দেখানো হয় ঢাকা মাস র্যানপিড ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।

একটি আইপিএফএফ প্রকল্পে কনসালটেনসি ফিস হিসেবে ক্রুজের অ্যাকা্উন্টে নেওয়া হয় ৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভেড়ামারা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্সি ফিস হিসেবে বাকি ১৯ মিলিয়ন ঢোকে ভারজারার অ্যাকাউন্টে।রিজল ব্যাংকের মাকাটি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখায় খোলা পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা সরানো হয় বলে ইনকোয়ারার জানিয়েছে।

ব্যাংকের ওই শাখার প্রধান এখন তোপের মুখে রয়েছেন। এই অ্যাকাউন্টগুলো খোলার ক্ষেত্রে ‘তোমার গ্রাহককে ভালোভাবে জান’ এই নীতি না মানার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।যে পাঁচ অ্যাকাউন্টে অর্থগুলো জমা হয় তার একটির মালিক গো দাবি করেছেন, তার অজ্ঞাতসারে ওই হিসাব খোলা হয়েছে।

তবে ব্যাংকের ওই শাখা ম্যানেজারের এক প্রতিনিধি ইনকোয়ারারকে বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশেই ওই অ্যাকাউন্টগুলো কয়েক মাস আগে খোলা হয়েছিল। আগামী ১৪ মার্চ ফিলিপাইনের সিনেট কমিটিতে বিষয়টি শুনানিতে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বক্তব্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এএমএলসি ছাড়াও ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এই ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্তে নেমেছে ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট ও গেমিং করপোরেশনও, যারা ক্যাসিনোর অনুমোদন দিয়ে থাকে।