• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ফাঁসি ঠেকাতে হরতাল-দেশ কলঙ্কমুক্ত করতে বাঁধা


প্রকাশিত: ২:২৯ এএম, ১৯ নভেম্বর ১৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫১ বার

saka_mujahid-hang moment-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান:   দেশ কলঙ্ক মুক্ত হওয়ার প্রহর গুনছে দেশবাসি। সাকা মুজাহিদের ঐতিহাসিক ফাঁসির রায়ের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে।চলছে ক্ষণ গণনা।প্রস্তুত ফাঁসির মঞ্চ। সেখানে চলছে মহড়া। দেশবিরোধী দুবৃত্তচক্রের নাশকতার আশংকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। নেমেছে বিজিবি’ও। তারপরও ফাঁসি ঠেকাতে হরতাল দেয়া হয়েছে।

ফলে কঠোর নিরাপত্তাবলয় এখন রাজধানীতে। গতকাল দুপুরে নাজিমুদ্দীন রোডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা। পুলিশ, র‌্যাব ও কারারক্ষীরা সতর্ক পাহারায়। কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ও আশপাশে ফুটপাতের সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে টহল দিচ্ছিলেন বিজিবির সদস্যরা।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ও অপহরণের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আসামি পক্ষের আপিলের পর চলতি বছর ১৬ জুন আপিল বিভাগ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর পর তারা উভয়ই সাজা বাতিল চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন। গতকাল তাদের আবেদন দুটি নিষ্পত্তি করেন সর্বোচ্চ আদালত। ইতিপূর্বে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন। আসামি পক্ষের আপিলের পর চলতি বছর ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

গতকাল আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন খারিজের পরপরই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আনন্দ মিছিলে সাকা চৌধুরীর মামলার সাক্ষী, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সংগঠক, কবি-সাহিত্যিক, সর্বস্তরের পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এর পর মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেন তারা। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার এ দুই যুদ্ধাপরাধীর রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

মুজাহিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে ফরিদপুরবাসী। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় মুজাহিদের জন্মস্থান ফরিদপুর জেলা শহরে আনন্দ মিছিল বের হয় এবং মিষ্টি বিতরণ করেন সর্বস্তরের মানুষ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘অপরাধ করে কেউ কখনও পার পায় না; দেরিতে হলেও বিচার হবেই।’

বুধবার বেলা ১১টা ৩৫ মিনিট। কানায় কানায় পূর্ণ এজলাসকক্ষে পিনপতন নীরবতা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চ এজলাসে বসে আদেশে বলেন- ‘ডিসমিসড’। এর মধ্য দিয়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ হয়ে যায়। বহাল থাকে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড। রিভিউ খারিজের মধ্য দিয়ে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধের দায়ে সাকা মুজাহিদের সকল খেল খতম হলো।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরে সাত দিন নয়, আরও আগে সম্ভব। এরই মধ্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে জেল কোড অনুযায়ী প্রাণভিক্ষার জন্য সাত দিন অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে বিশ্বের আর কোথাও এমন স্বচ্ছতা রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজের পর এখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের রায় কার্যকরে কোনো আইনগত বাধা নেই। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রায় কার্যকর হবে। যেহেতু রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে গেছে, তাই আদেশও খুব শিগগির পাওয়া যাবে। এর পর দুই আসামিকে রায় জানানো হবে। আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তারা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রায় কার্যকর করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে। সরকার তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে কি-না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দলটির বিষয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। আদালতের মাধ্যমেই সবকিছু ফয়সালা হবে।’
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, রায়ের অনুলিপি এখনও কারা কর্তৃপক্ষ পায়নি। সেটি পাওয়ার পর কারাবিধি অনুযায়ী তাদের পড়ে শোনানো হবে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।

রায়ের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু বলেন, রায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সবাই সন্তুষ্ট। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ রায় কার্যকর করতে হবে। অপর প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, সাকা-মুজাহিদ রায় বাতিলে নানা রকম কূটকৌশল চালিয়েছিল। সত্যের জয় হয়েছে; ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারাবিশ্বের মানবজাতির জন্য একটা উদাহরণ।

সাকা-মুজাহিদের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে তার দায়িত্ব আসামিকে আদালতে নিরপরাধ হিসেবে প্রমাণ করা। তিনি সেই লড়াই করেছেন এবং হেরে গেছেন। এখন আইনগত আর কোনো প্রক্রিয়া নেই। সরকার চাইলে দ াদেশ মওকুফ করে দিতে পারে অথবা কমাতে পারে। আর ন্যায়বিচারের জন্য আসামিরা সর্বশেষ আল্লাহর দরবারেই ফরিয়াদ জানাতে পারেন।

মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ রায়ে আমরা হতাশ ও বিস্মিত। আমার বাবা বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বাবার সঙ্গে দেখা করে চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার বিষয়টি এবং প্রাণভিক্ষা চাওয়া-না চাওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে চাই। মুজাহিদের ভাই মোহাম্মদ খালেছ বলেন, মুজাহিদ অপরাধ করেনি। তাই মুজাহিদ ক্ষমাও চাইবে না।