• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে জঙ্গি দলে যোগ দেয় খুনি নিবরাস?


প্রকাশিত: ৫:৩৪ পিএম, ৫ জুলাই ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৯৭ বার

আসমা খন্দকার  :  গুলশান হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে আলোচিত খুনি নিবরাস ইসলাম অনেক দিন ধরে nibras-www.jatirkhantha.com.bdহতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছিল। তার টুইটার অ্যাকাউন্টে পাওয়া কিছু টুইট বিশ্লেষণ করে এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আর এটি হয়ে থাকতে পারে হৃদয়ঘটিত কোনো সমস্যা থেকে। কোনো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন অথবা প্রেমে ব্যর্থতায় সে এমন বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।

সম্ভবত হতাশা থেকে হঠাৎ করে জীবনবিমুখ হয়ে ভুল পথে পা রাখে। আর এই হতাশাকেই ষোল আনা কাজে লাগিয়ে থাকতে পারে আইএস, হিজবুত তাহরীর বা অন্য কোনো জঙ্গী সংগঠন। কারণ কোনো মানুষ যখন জীবন সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তখন খুন-খারাপি থেকে শুরু করে কোনো ধরনের অঘটন ঘটাতেই দ্বিধাগ্রস্ত হয় না। এদের কেউ কেউ ইহকালের বঞ্চনাকে পরকালের প্রাপ্তি দিয়ে পুষিয়ে নিতে চায়। হুর-পরী আর অনন্ত সুখের লোভ দেখিয়ে সহজেই তাদেরকে কাবু করা যায়।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ইসলামী জঙ্গী সংগঠনগুলোর সদস্য বাড়ানোর কৌশল সম্পর্কে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। সেখানে সংগঠনগুলোর ম্যানুয়েল পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, হতাশা, দুর্দশাগ্রস্ত, জীবনবিমুখ এবং ধর্ম সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ-তরুণী জঙ্গী সংগঠন আইএসের প্রধান টার্গেট।

নিবরাসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের অক্টোবরে সে টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলে। আর টুইট আছে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে করা কয়েকটি টুইটে তার অভিমান, হতাশা, অসহায়ত্ব ফুটে উঠে। অন্যদিকে ওই সময় থেকে সে জঙ্গী সংগঠন আইএসের ভারতীয় একনিষ্ঠ সমর্থক মেহদি মাসরুর বিশ্বাস (টুইটারে নাম @ShamiWitness) এবং পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক আঞ্জেম চৌধুরীকে অনুসরণ করতে থাকে।

মেহেদি মাসরুর ইন্টারনেটের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদেরকে আইএসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়, নানা যুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি আগ্রহীরা কীভাবে সীমান্ত পার হয়ে আইএসে যোগ দিতে পারেন সেই পথও বাতলে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে বর্তমানে সে কারাগারে আছে।

আঞ্জেম চৌধুরীও একইভাবে তরুণ-তরুণীদেরকে আইএসের দাওয়াত দিয়ে থাকেন বলে বৃটিশ গোয়েন্দারা মনে করেন। তাকেও একাধিকবার জেলে যেতে হয়েছে।প্রায় দুইবছর আগে বেশ কিছুদিন তিনি নিয়মিত টুইটার ব্যবহার করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে প্রমাণ রয়েছে।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর নিবরাস একটি টুইট বার্তায় লিখে, আমি তোমাকে সবচেয়ে ভাল জানি। একদিন সেটি তুমি উপলব্ধি করবে। (I do know you best. One day you will realised.)

এর দুদিন পর সে আরেকটি টুইটে লেখে, আমাকে তোমার আর প্রয়োজন নেই। সুখে থেকো তার সঙ্গে। সবাই আমার চেয়ে অনেক ভালো। আমাকে কোথায় পাবে তা তুমি জানো (You don’t need me anymore. Be happy with him. Everyone is better then me. You know where to find me.)।

ক্ষোভ-অভিমান দূরে ঠেলে একই দিনে আবার একটি টুইট করে সে। এতে তার হাহাকার ও প্রিয়জনের কাছে ফেরার আকুতি ফুটে উঠে।

টুইটে নিবরাস লিখে, আমি চিরদিন তোমার জন্যে এখানে আছি। যখনই আমাকে তোমার প্রয়োজন পড়বে। আমি শুধু একটা ফোন কল দূরত্বে আছি। কিন্তু, মনে হচ্ছে তুমি আমার জায়গাটা অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছো। তোমাকে আমি দ্বিধাগ্রস্ত দেখতে চাই না (I am always there for you. When you need me. I m just a call away. But it seems you replaced me. Don’t want you to be confused anymore)।

একইদিন আরও একটি টুইট করে নিবরাস ইসলাম। আর এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে কতোটা অস্থিরতায় ভুগছিল সে। এই টুইটে লেখা হয়, ‘কিন্তু, তোমার কাছ থেকে কিছু দিনের জন্য দূরে থাকাই ভালো হবে, যাতে তুমি হয়তো বুঝতে পারো, আসলে তুমি কী চাও (But It will be good if I away from You for a while. So that you can understand what you really want)

একই টুইটে ফের তার ওই প্রিয়জনের কাছে ফেরার করুণ আর্তি। ‘আমি তোমার থেকে মাত্র একটা ফোন কল দূরে আছি। আমি এখানেই (I m just a call away from you. I m here)

ওই প্রান্ত থেকে প্রিয় মানুষটি সাড়া দিয়েছিল কী-না তা স্পষ্ট নয়। ধারণা করা যায়, হয়তো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। আর সে কারণেই সে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে পরিচিতজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে। চলতি বছরের শুরুর দিকে হয়তো একেবারেই লাপাত্তা হয়ে যায়।

অনেকদিন খোঁজ না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। এটি উঠে এসেছে সাদমান জামান সরকারের ফেসবুক স্ট্যাটাসে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সাদমান জামান সরকার বন্ধু নিবরাসের টাইমলাইনে লেখে, তুই একটা দায়িত্বহীন ও নির্বোধ ছেলে। তুই তোর মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে অনেক মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিস। আমি জানি তুই সব নোটিফিকেশন দেখবি। আর তা দেখার সঙ্গে সঙ্গে তুই খালাম্মাকে ফোন দিবি, তিনি খুবই উদ্বিগ্ন (Tui akta irresonsible chele ar ekta stupid-fuck! Yous witched your phone off and kept so many people worried! I know you’ll check your notifications, and if you do see this, please call aunty! She is really worried!)

একইদিন নুসরাত নাসিম মেরাজি নামের আরেক বন্ধু লিখেছে, তুমি কোথায়? তোমার ফোন বন্ধ কেনো? দোস্ত, এই ম্যাসেজ দেখে থাকলে দয়া করে একটা ফোন কর অথবা ম্যাসেজ পাঠাও। প্লিজ, তোমার ফোন চালু করো (Where are you? Why your phone is off? Please call if you see this dost. Or smg. Turn your phone on.)।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি রোজা বারি নামে নিবরাসের এক বন্ধু স্ট্যাটাস দেয়, পাশা, তুমি কোথায় (Where you at pasa) ?

নিবরাসের মতো অভিজাত পরিবারের ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া তরূণ-তরুণরীরা পরিবার, স্বজন ও নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। প্রেমে ব্যর্থতা, বিচ্ছেদ বা অন্য কোনো আঘাতে তারা সহজেই ভেঙ্গে পড়ে। এদের অনেকেই মাদকে আসক্ত হয়, জড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খল জীবনে। কেউ কেউ হয়তো ধর্মে আশ্রয় খুঁজতে গিয়ে ভুল করে জঙ্গী সংগঠনের ফাঁদে পা দেয়। নিবরাসের ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটিই হয়েছে।