• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রহসন ও সাজানো’ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ২০০ পৌরসভায়: বিএনপি


প্রকাশিত: ৯:৫৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৩১ বার

vote-countingস্টাফ রিপোর্টার:  পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে ‘প্রহসন ও সাজানো’ অভিহিত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি।বুধবার ২৩৪ পৌরসভার ভোট শেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নির্দেশ দেন।

এসময় অন্তত ২০০ পৌরসভার ভোটকেন্দ্র দখল করা হয়েছে অভিযোগ করে ওইসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোটের দাবিও জানান তিনি।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আমারা যে আশঙ্কা করেছিলাম, তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বার বার বলেছি, পৌর নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হবে।

আজ সারাদিন গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় ভোটগ্রহণের যে চিত্র আমরা দেখেছি, তা গণতন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।ভোট উৎসব তো দূরের কথা- মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, মারামারি, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, সহিংসতা পুরো নির্বাচনটাকে একটা ট্র্যাজেডিতে পরিণত করেছে।

অন্তত ২০০ পৌরসভার ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। এটা উল্টো প্রমাণ করার জন্য এই পৌর নির্বাচনটি প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ১৫৭টি পৌরসভার সহস্রাধিক কেন্দ্র দখলের খবর এসেছে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন,এটা আরও বেশি হবে; ২ শতের কম হবে না। এখনও আমাদের কাছে সব তথ্য এসে পৌঁছায়নি।

একইসঙ্গে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভোট গণনায়ও আমরা আশঙ্কা করছি। রেজাল্ট শিটও তারা পরিবর্তন করতে পারে। আমরা দলের নেতা-কর্মীদের বলব, যে কোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকুন-ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে থাকবেন। রেজাল্ট শিট যেন রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নিয়ে আসেন।

পৌর নির্বাচন কতজন প্রার্থী বর্জন করেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে বর্জনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা যতটুকু জানি আটজনের মতো করেছেন।
আমাদের কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশ ছিল, নির্বাচন বর্জনের কোনো সুযোগ নেই, নির্বাচন স্থগিত বা পুনরায় নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের দাবি করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা সেই দাবি জানিয়েছে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা ও সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরেকবার ধ্বংস করল।ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রকাশ্যে সিল মারা, কেন্দ্র দখল করা এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে সরকারি দল বেশিরভাগ পৌরসভার কেন্দ্র দখল করে নিয়ে গেছে।

প্রায় দেড় সহস্রাধিক কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা প্রশাসনের সাথে যুক্ত হয়ে এজেন্ট বের করে দিয়ে ভোট দিয়েছে।আমরা আশঙ্কার সঙ্গে আরেকবার লক্ষ্য করলাম রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রকে ব্যবহার করা হল নির্বাচনকে প্রহসনের পরিণত করতে।
গণমাধ্যমকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, প্রথম থেকেই সাংবাদিকরা যাতে সুষ্ঠু ও সত্য চিত্র তুলে ধরতে না পারেন সেজন্য সংবাদকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করার বিধান দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এসব কিছু প্রমাণ করে এই নির্বাচন প্রহসন ও সাজানো নির্বাচন ছিল। যেভাবে নির্ধারিত ছিল, সেভাবেই হয়েছে সবকিছু।
তিনি বলেন, পৌর নির্বাচন আবারও প্রমাণ করেছে, এই সরকারের ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দ্বারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী ভয়াবহ চেহারা জাতির সামনে উন্মেচিত হয়েছে।

দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রের অভিযোগ জানানোর পরও প্রতিকার মেলেনি দাবি করে করে মির্জা ফখরুল বলেন, যেসব কেন্দ্র থেকে আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে জালিয়াতির মহাৎসব হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় সুস্থ পরিবেশে ভোট দাবি করছি।

নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভার কাছে ২০ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক, আবদু হালিম, এজডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামীমুর রহমান শামীম, ২০ দলীয় জোটের শরিক এনডিএলর খন্দকার গোলাম মূর্তজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।