‘প্রশান্তি’র বিল না দিয়ে লাশ বেঁধে রাখার প্রপাগান্ডা-
স্টাফ রিপোর্টার : হাসপাতালের বিল না দিয়ে রোগীকে লাশ বলে বেঁধে রাখার প্রপাগান্ডা ঘটেছে মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালে। এ ঘটনা ঘটিয়েছেন নোয়াখালী থেকে আসা এক রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালের বিল উঠেছিল দেড় লাখ টাকা। কিন্তু প্রপাগান্ডার সুযোগে ২০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। এর আগে এনিয়ে মিডিযায় চলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রচারনা।রোগীর পরিচিতি এক স্বজন সাংবাদিক এ নিয়ে ”হাসপাতালে টাকার জন্য লাশ আটকে রাখার” উদ্দেশ্য প্রণোদিত খবরটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। তারপর ওই সাংবাদিকের আক্ষেপ বিষয়টি তিনি ঢাকার অন্তত ৩০-৪০ সাংবাদিককে ম্যাসেঞ্জারে জানিয়েছেন। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য ওই অফিসের কয়েকজন সহকর্মী ছাড়া আর কেউ এটা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। কেউ নিউজ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। পরে প্রপাগান্ডায় ব্যর্থ হয়ে ওই সাংবাদিক ফোনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর পরই ২০ হাজার টাকা নিয়ে লাশ স্বজনদের দিয়ে দেওয়া হয়।
পরে ওই সাংবাদিক তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেন, রোগীর ভাই এবং আরেক আত্মীয় তখন একবারও বলেননি, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি টাকা নিয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে সব ডকুমেন্ট রেখে দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, ভর্তির সময় ২৯ হাজার ও লাশ নেওয়ার সময় ২০ হাজার টাকা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক দিন আগে এক সাংবাদিক আমার কাছ থেকে ডা. পারভেজের ভাই রুবেলের নম্বর নেন। তারপর টিভিতে দেখলাম, তাদের কাছ থেকে জোর করে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে এবং সব কাগজপত্র রেখে দিয়েছে। তাদের কাছে এখন কোনো প্রমাণ নেই।
স্ট্যাটাসে আরো বলা হয়, এমনকি সাগরিকার নির্বাহী পরিচালক বিষয়টি নিয়ে দৌড়ঝাপ ও বিকাশে টাকা পাঠানোর পরও স্বজনরা বেশি টাকা নেওয়ার কথা তাঁকে বলেননি। স্বজনরা সকাল থেকেই বলেছেন, তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। তারপর সাগরিকার নির্বাহী পরিচালক ৪০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিলে, আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে উনাকে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলি। কিন্তু এখন এসব অভিযোগ শোনার পর কষ্ট পাচ্ছি।জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ওইরোগী। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ওই রোগীকে ‘কথিত’ আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর ক্রমাগত টাকার চাপ দেওয়া হয় রোগীর পরিবারকে।
এসব বিষয় নিয়ে ওই হাসপাতালে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,
ডাক্তাররা রোগী কে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তো কারো হাতে নেই। স্বয়ং আল্লাহর হাতে। চিকিৎসাধীন রোগী নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কর্মকর্তা ডা. মহিন উদ্দীন পারভেজ
বেঁধে রেখে চিকিৎসা দেয়ার সময় ওই ছবি তুলে রেখে রোগীর স্বজনরা লাশ বেঁধে রাখার অভিযোগ তুলে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অনেকটা সুস্থ থাকার পরও ১৪ জুন ভর্তি হওয়ার পরই তাকে প্রায় জোর করেই আইসিইউতে পাঠিয়ে দেন আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. এস এম আলীম।১৮ জুন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মহিন উদ্দীন পারভেজ। এরপর হাসপাতালের বিল চাওয়া হয় স্বজনদের কাছে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এই বিল নিয়েই টাকা না দেয়ার ধান্ধায় শুরু নানা প্রপাগান্ডা ।
বিল এর টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় রোগীর স্বজন রুবেলের মোবাইল কেড়ে নেন ডা. আলীমের ম্যানেজার সাইফুল। তাকে এক রুমে আটকে রাখা হয়। বলা হয়, টাকা না দিলে তাকে র্যাবে দেওয়া হবে। তার ভাইয়ের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে দিয়ে দেওয়া হবে বলে অভিযোগ তোলা হয়। অথচ ম্যানেজার জানালেন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ সম্পর্কে প্রশান্তি হাসপাতালের মালিক ও আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. এস এম আলীম বলেন, রোগীকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন আমি সেখানে ছিলামই না। রুবেল যেসব কথা বলেছেন, তা মিথ্যা। তাকে পাগলের মতো মনে হয়েছে। তা ছাড়া আমরা এই হাসপাতালে করোনার কোনো রোগী ভর্তি করাই না। শ্বাসকষ্ট হলে ভর্তি করানো হয়। পরে তিনি বলেন, হাসপাতালের বিল না দিলে চলবে কি করে। কর্মচারীদের বেতন চিকিৎসা সেবা চলবে কি করে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে করোনা রোগী হিসেবেই এখানে নিয়ে আসা হয়-এমন প্রশ্নে ডা. আলীম বলেন, তারা বলেছে শ্বাসকষ্টের কথা। করোনা নয়। আমাকে মিথ্যা বলা হয়েছে।