• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রবল আস্থার সংকট -ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে


প্রকাশিত: ১২:৫১ এএম, ৩০ এপ্রিল ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫২ বার

সম্পদ কমেছে এক মাসে ১৩ হাজার কোটি

শফিক রহমান : প্রবল আস্থার সংকট চলছে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে। এক মাসের ব্যবধানে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ কমেছে বলে জানিয়েছে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (২৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংক ও অর্থায়ন বিষয়ক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকগুলোর সম্পদ ছিল ৭ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরে নেমে আসে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের হাত ধরে। ১৯৮৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশে গড়ে উঠেছে আরো নয়টি পূর্ণাঙ্গ ধারার ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ছাড়াও এ ধারার অন্য ব্যাংকগুলো হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটিই প্রচলিত ধারা থেকে ইসলামী ধারায় রূপান্তর হয়েছে।

প্রচলিত ধারার ১১টি ব্যাংক চালু করেছে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা। আরো ১৪টি প্রচলিত ধারার ব্যাংক উইন্ডো চালুর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত তিন দশকে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় দ্বিগুণ।

কিন্তু প্রথমবারের মতো গত এক বছরে এ ধারার ব্যাংকগুলো পিছিয়ে পড়েছে। এ সময়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ এর জুন পর্যন্ত এক বছরে ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। অথচ এ সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশের বেশি।

জুন শেষে ইসলামী ধারার ১০টি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, যা দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের প্রায় ২৫ শতাংশ।মূলত আস্থার ঘাটতি তৈরি হওয়ার কারণেই ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের অন্য সব সংকট কেটে যেত।

ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যও কমেছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রফতানি হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ কম। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২২ সালে একই সময়ে এ ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছিল। সে হিসেবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি কমেছে ৩৪ শতাংশ।

তবে সাধারণ ধারার ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডো ও শাখার সম্পদ বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সম্পদ কমলেও মাসের ব্যবধানে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়ে ৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা।এর আগে গত ২৩ এপ্রিল নিলামের মাধ্যমে ৩২টি ব্যাংক ও চারটি এনবিএফআই রেপো ও তারল্য সহায়তা সুবিধার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ধার নেয়। তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া অব্যাহত রেখেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

ওই সময় জানা যায়, নিলামের মাধ্যমে ১৮টি ব্যাংক ও চারটি এনবিএফআই সাতদিন মেয়াদি রেপো সুবিধার মাধ্যমে ৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ধার নেয়। আর একদিনের তারল্য সহায়তা সুবিধার মাধ্যমে ৫ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা ধার নিয়েছে ১৪টি ব্যাংক। সুদের হার ছিল যথাক্রমে ৮ দশমি ১০ শতাংশ ও ৮ শতাংশ।