প্রধান উপদেষ্টার যোগ্য ‘সাথী’ সিরাজ উদ্দিন
তার প্রথম বই ‘বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য’ সম্পাদনা করেছেন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আমলাতন্ত্র নিয়ে তাঁর বইগুলো হলো বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র’ ও ‘আমলাতন্ত্রের অন্দরমহলে বত্রিশ বছর’।
শফিক রহমান : অবশেষে প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর প্রশাসনিক কাজকর্মের যোগ্য ‘সাথী’ খুঁজে পেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার এই যোগ্য ‘সাথী’ হচ্ছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী। যিনি নামেও সাথী কাজকর্মেও তুলনাহীন পান্ডিত্যে’ও সাথী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লেখালেখির শুরু সেই ছাত্রজীবনে।
তাঁর লেখা সংবলিত প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য। এর অন্যতম সহ-লেখক তিনি। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পাদিত এবং গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক ১৯৮১ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থটি পরে ইংরেজিতে Jorimon and Others of Beltoil Village নামেও প্রকাশিত হয়। ১৯৫৫ সালে তদানীন্তন ঢাকা জেলার (বর্তমান নরসিংদী জেলা) পলাশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
সিরাজ উদ্দিন সাথী নামে পরিচিত এই কর্মকর্তা আমলাতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজ বিবর্তন, ধর্ম চিন্তা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৩২টি বই লিখেছেন। তার প্রথম বই ‘বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য’ সম্পাদনা করেছেন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। আমলাতন্ত্র নিয়ে তাঁর বইগুলো হলো বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র’ ও ‘আমলাতন্ত্রের অন্দরমহলে বত্রিশ বছর’।
শৈশব-কৈশোর কেটেছে শীতলক্ষ্যার পাড়ে বর্তমান পলাশ উপজেলায় এক অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স)সহ এমএ, এলএলবি এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েলস্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। কর্মজীবনের শুরুতে কলেজে অর্থনীতির শিক্ষকতা করেছেন। উকিল হতে চেয়েছিলেন, পরে যোগ দিয়েছেন সিভিল সার্ভিসে।
ঘুরেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ, দেখেছেন প্রাচীন মানুষের হারিয়ে যাওয়া অনেক সভ্যতা। মানব সভ্যতার এসব আদি নিদর্শনকে ঘিরে মানুষ সম্পর্কে জানতে ও লিখতে তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর লেখা গ্রন্থসমূহের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী, দাস প্রথা, দাস বিদ্রোহের কথা, মানুষের পৃথিবী, বাংলার সাহসী মানুষের কথা, সক্রেটিস, পবিত্র মক্কা নগরীর ইতিকথা, The Holy City Makka, কোরআনের কথা ও কাহিনী, পেশোয়ার থেকে কন্যাকুমারী, ইউরোপ ও আমেরিকায় উল্লেখযোগ্য। এই উপন্যাসের মাধ্যমে কথাশিল্পী হিসেবে তাঁর সার্থক আত্মপ্রকাশ।
সমসাময়িক কালে অনালোচিত সাবেক আমলাকে নিয়োগের বিষয়ে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারির পর তাঁর পরিচয় নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি যুগ্মসচিব হিসেবে অবসরে যান।
তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার স্থলাভিষিক্ত হলেন। হাসিনা সরকারের পতনের দুই দিন পর গত ৭ আগস্ট তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তি বাতিল করা হয়। তখন থেকে ফাঁকা থাকা এই পদে নিয়োগ পেলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত এই কর্মকর্তা।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সিরাজ উদ্দিন মিয়া ১৯৮২ বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ২০০৯ সালে যুগ্ম সচিব অবস্থায় ওএসডি হন এই কর্মকর্তা। পরে ২০১৬ সালে তিনি অবসরে যান।
তাকে মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪৯ ধারা অনুযায়ী মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়াকে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী ২ বছরের মেয়াদে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলো।