প্রথম শ্রেণীর বইয়ে ‘ও-তে ওড়না’ বিতর্ক
বিবিসি অবলম্বনে ডেস্ক রিপোর্টার : বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণীর পাঠ্য বইতে বাংলা ভাষায় যেভাবে বর্ণ পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন আগে যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে সেখানে প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইতে দেখা যাচ্ছে ‘ও’ বর্ণটি দিয়ে “ওড়না” পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন ‘ও’তে “ওড়না” শব্দটি ব্যবহার না করে ভিন্ন কোন শব্দ ব্যবহার করলেই ভালো হতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “বাংলা ভাষায় শব্দসম্ভার বেশ সমৃদ্ধ। সেজন্য ওড়নার স্থলে অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করাই যেত।”অনেকেই বলছেন, “ওড়না” শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি জেন্ডার বৈষম্য প্রকাশ পেয়েছে।
তারা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর বয়স অনুযায়ী এ শব্দটি যথাযথ হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডঃ মরিয়ম বেগম বলছেন, “একেবারে ছোট বয়স থেকে নারী ও পুরুষের পার্থক্য তৈরি করে এমন কোন শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়।”
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, “যেহেতু এই শব্দটি নিয়ে একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেজন্য এটাকে পুনরায় মূল্যায়ন করা উচিৎ।”
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে “ওড়না” একটি পরিচিত শব্দ।
গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই স্কুল ড্রেসের অংশ হিসেবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ওড়না পরতে হয়। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় এ শব্দটি “অশ্লীল” কোন শব্দ নয়।
তাহলে এটি নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
অধ্যাপক মরিয়ম বেগমের মতে, কোন ক্লাসে এটি পড়ানো হচ্ছে এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের বয়স কত, সে বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি মনে করেন, “প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের জন্য জেন্ডার নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ।”
অভিভাবকদের অনেকে “ওড়না” শব্দটিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। শিক্ষাবিদদের অনেকে বলছেন, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের জন্য জেন্ডার নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ।
ঢাকার একজন অভিভাবক তাসলিমা আখতার মনে করেন, “কোন চিন্তাধারা থেকে এধরণের শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে সেটি আমার বোধগম্য নয়। আমরা তো ছোটবেলায় পড়েছি ও তে ‘ওলকপি’ হয়।”
তবে শিক্ষাবিদদের অনেকে বলছেন, যারা এই বই লিখেছেন তারা হয়তো বিষয়টিকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেননি।
অধ্যাপক ঘোষ বলেন, “যারা এই বইটি রচনা করেছেন, তারা হয়তো নতুন কোন শব্দ ব্যবহার করতে চেয়েছেন। এতো বছর ধরে যেসব শব্দ ব্যবহার হয়ে আসছে, সে জায়গায় তারা হয়তো ভিন্ন কোন শব্দ আনতে চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে যে সমালোচনা হতে পারে তা খেয়াল করেন নি।”
অধ্যাপক ঘোষ মনে করেন, এ সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শব্দ এবং বর্ণ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও সাবধানী হওয়া দরকার।