• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিরক্ষায় টেন্ডার জালিয়াতরা অর্ধশত ক্রোড়পতি


প্রকাশিত: ১১:২৫ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪৮ বার

 

প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরে আরো অনেকে জড়িত-

কোর্ট রিপোর্টার : প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের টেন্ডার জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষতিসাধনের মামলায় মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. এর দুই কর্মচারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের আরো অনেকে জড়িত রয়েছে টেন্ডার জালিয়াতির সঙ্গে।

গ্রেফতারকৃত আসামিরা হচ্ছে, মো. রবিউল করিম (৪৫) ও শান্তনু কুমার দাশ (৪৬)। বুধবার (২৪ এপ্রিল) আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদ। অপরদিকে আসামি পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল ধার্য করেন।

আদালতে গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির (মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি:) চাকরির বিধি অনুযায়ী চাকরি করাকালীন কোনো কর্মচারী সমজাতীয় পণ্যের ব্যবসা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটি জাপানি কোম্পানি Fuji Film এবং Shimadzu এর একক পরিবেশক হিসেবে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছে।

১ নং আসামি মো. রবিউল করিমকে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয়, মহাদপ্তরে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। গত ১ এপ্রিল প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে কোম্পানি জানতে পারে, ১ নং আসামি কোম্পানিতে কর্মরত থাকাবস্থায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধভাবে এবং সরকারি সংস্থার কাছে তথ্য গোপন করে প্রতারণা ও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে অপর একটি প্রতিষ্ঠান দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। সেই প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং ব্যবস্থাপনার অংশীদার হিসেবে স্বাক্ষর করেন।

এছাড়াও তিনি প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনাল নামীয় অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে কোম্পানি জানতে পারে ২ নং আসামি তথা শান্তনু কুমার দাশ আসামি রবিউলের ব্যবসায়ী অংশীদার হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে এমন বেআইনি কাজ করছে। আসামি রবিউল কোম্পানির লেটার হেড জাল করে জাল স্বাক্ষর করে প্রতারণামূলকভাবে গত ১৩ এপ্রিল প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর পত্র ইস্যু করে এবং উল্লেখ করেন তিনি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে আছেন।

তথ্য গোপন করে ১নং আসামি তার ব্যক্তিগত এবং দ্যা ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল নামীয় কোম্পানি মেডি গ্রাফিক কোম্পানির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং আসামিরা বিভিন্ন নামে বেনামে অনেক সম্পত্তি অর্জন করেন। যদিও তারা সামান্য বেতনে কোম্পানিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অবৈধ অর্জনের মাধ্যমে আসামি রবিউল ঢাকার মধ্যে বিলাসবহুল ৪টি ফ্ল্যাট, রংপুরে বাগান বাড়ি, নাটোর ৫০ বিঘা জমির মালিক হন। আসামিদের কাছে মালামাল বিক্রয়ের হিসাব চাওয়া হলে তারা হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়। আসামি শান্তনু বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ ও বেআইনিভাবে কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, ২টি প্লট, গাড়ি ও ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা নামে-বেনামে জমা রাখেন।

আসামিরা দি ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনালের নামে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. থেকে সম্পূর্ণ খরচ দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করতেন। ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তথ্য গোপন করে মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. এর প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এবং ব্যবসায়িক প্রায় ৩০ কোটি ক্ষতিসাধন করে।
এ ঘটনায় মেডি গ্রাফিকের এডমিন অফিসার শেখ জাকির হোসেন বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার উদ্দেশ্য জাল-জালিয়াতি, নকল দলিল ব্যবহার, কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়।