প্রতিমন্ত্রী টুসি’তে খুশী এলাকাবাসী
‘মানুষের মন জয় করার সক্ষমতা রয়েছে’
মোস্তফা কামাল : গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী-মির্জাপুর)২৪ বছর পর প্রতিমন্ত্রী পেয়ে উচ্ছ্বসিত গাজীপুর ৩ আসনের জনগণ। এআসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রথম নারী সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় ওই আসনের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা খুশীর আমেজ বিরাজ করছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারী) রাত থেকে খবরটি নির্বাচনী এলাকায় প্রচার হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। ওইসব মিছিল থেকে টুসি’র প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবর শ্লোগানের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারই বাবা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর বাবা এ আসনে পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপিকা রোমানা আলী টুসি প্রাথামিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় এলাকার মানুষ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য বিরাজ করছে।
গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জর্জ বলেন, দীর্ঘ ৫২ বছরের বর্ণ্যাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অ্যাডভেঅকেট মো. রহমত আলী গাজীপুর-৩ আসনকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ বানিয়েছেন। তাঁর কন্যা বাংলাদেশ কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসিকে প্রথমে সংরক্ষিত নারী সাংসদের দায়িত্ব দিয়ে যাচাই করেছেন। অবশেষে কর্মদক্ষতার আলোকে তাঁকে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান কবির বলেন, গাজীপুর-৩ আসনটি নৌকা প্রতীকের ঘাঁটি। যে সময় সারাদেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে অন্য একটি দল মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেছিল ঠিক সে সময় গাজীপুরের সব ক’টি আসনে নৌকা বিজয়ী হয়েছিল। তাছাড়া সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবশেষ গাজীপুর-৩ (১৯৬) আসনের বিজয়ী প্রার্থী রহমত আলী প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। টানা প্রায় ২৪ বছর এ আসনে মানুষ প্রতিমন্ত্রীও পান নি। এবার টুসি’র প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় আমরা বেশ উচ্ছ্বসিত। তাছাড়া তিনি এর আগে নারী সাংসদ থাকাকালে দেশব্যাপী নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামের কৃষক জুনাইদ হাসিব বলেন, এমপি তো সব এলাকাতেই থাকেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কয়টি এলাকায় থাকেন? আমরা এমপি’র পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রী পেয়েছি, এটা আমাদের বড় পাওয়া। এমপি হলে এলাকাতে যেরকম উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, প্রতিমন্ত্রী হওয়াতে উন্নয়ন অনেকাংশে বেশি হবে।
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, যেখানে নারী নেতৃত্বের জায়গায় থাকে সেখানে নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পায়। সর্বক্ষেত্রে নারীরা আলাদা গুরুত্ব পায়। তাছাড়া গাজীপুর-৩ আসনে একজন নারী এই প্রথম সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আবার তাকেই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া মানে গাজীপুরের মানুষ হিসেবে সরকার আমাদেরকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
গৃহবধূ রিয়া নাসরিন বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি বলতে পারি তাঁর মধ্যে মানুষের মন জয় করার সক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া আমি নিজেও একজন নারী। নারী হিসেবে সহজেই তাঁর কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বলতে পারব। আমার মতো অন্যান্য নারীরাও এমনটি পারবে।
শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহরাব হোসেন বলেন, অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি একজন সৎ এবং শিক্ষিত নারী হিসেবে আমারা চিনেছি। বিগত ৫ বছর তিনি সংরক্ষিত নারী সাংসদ ছিলেন। তাঁর আচরণ কথাবার্তা, চাল চলনে মার্জিত স্বভাবের পরিচয় পেয়েছি। বাবার মতো মানুষের সাথে মেশার প্রবণতাও উনার মধ্যে রয়েছে। এরকম একজন নারীকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পেয়ে অমরাও গর্বিত। আমরা তাঁর কাছ থেকে ন্যায় বিচারসহ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পাব বলে আশা রাখি।
অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি বলেন, নিজেকে ধন্য মনে করছি। এটা খুবই আনন্দের। জয়ের ব্যাপারে আমার শতভাগ বিশ্বাস ছিল। তবে ফলাফল ঘোষণার পরে বুঝতে পেরেছি শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী-মির্জাপুরবাসী আমাকে কত বড় সম্মান দিয়েছে। আমি সারাজীবন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। তাদের পাশে থাকতে চাই। বিশেষ করে কৃষক, ভ্যানচালক থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া মানুষের কাছে আমি ঋণী। তাদের প্রতি সীমাহীন কৃতজ্ঞা। আমি যত বড়ই হই না কেন তাদের যেন ভুলে না যাই সে জন্য দোয়া করবেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি শ্রীপুর ভবন প্রাঙ্গনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তারা (পরাজিত প্রার্থী ও তাঁর কর্মীরা) কিন্তু আমাদের বাইরের কেউ না, এই জনপদেরই মানুষ। তারা আওয়ামী লীগেরই মানুষ, তারা আমাদেরই মানুষ। সবাই কিন্তু একসঙ্গে আমরা চলেছি একটা সময়। তারা আমাদের শত্রু ছিল, এটা মনের ভেতরে রাখবেন না। নির্বাচন হয়েছে। এতে জয়-পরাজয় থাকবেই, এটাই নিয়ম।
যাঁরা আজকে পরাজিত হয়েছেন, তাঁদের তো মনটা খারাপ। আপনারা আনন্দিত। আমাদের সহনশীলতার সঙ্গে তাঁদের দেখতে হবে। খুব ন¤্র ব্যবহার দিয়ে তাঁদের মন জয় করতে হবে। আপনাদের কাছে আমি নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা এবং সহনশীলতা আশা করি, যাতে কোনোভাবে তাঁদের দিকে তাকিয়ে কটুক্তিও আমরা না করি। কারণ, তাঁরা আপনাদেরই, আমাদেরই মানুষ।