‘প্রতারণার মামলা দুদক থেকে ফের পুলিশে-দুর্নীতি আইনে আটক ব্যক্তি জামিন পাবেন’
সংসদ রিপোর্টার : আটক ব্যক্তির জামিন পাওয়ার অধিকার দিয়ে সংসদে দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১৬ কণ্ঠভোটে সংসদে পাস হয়েছে। একইসঙ্গে এ আইনে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলার তদন্ত ভার আবারও পুলিশের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডবিধি ১৮৬০’র আলোকে পুলিশ এখন আগের মতো প্রতারণার অপরাধ তদন্ত করতে পারবে এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার করা যাবে।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের বৈঠকে বিলটি পাস হয়। সংসদ কার্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। বিলের ওপর বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলটি পাসের আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও ফখরুল ইমামের দেয়া দুটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
বিলটি পাস হওয়ায় সরকারি সম্পত্তি সম্পর্কিত এবং সরকারি ও ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত প্রতারণা বা জালিয়াতি মামলা ছাড়া অন্যসব প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলার দায়িত্ব পাবে পুলিশ।
২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ ও অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের মতো বিষয়গুলো দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের তালিকায় ছিল।
২০০৯ সালে মুদ্রা পাচারের অভিযোগও দুদকের তফসিলে যুক্ত হয়। আর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এক সংশোধনীতে ৪২০ (প্রতারণা), ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯ ও ৪৭১ ধারার অপরাধ তদন্তের দায়িত্বও দুদকের ওপর চলে যায়। অন্য ধারাগুলো ব্যক্তিগত অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলার ধারা।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত এসব ধারার মামলাগুলোর তদন্ত করতো পুলিশ। বিচার চলতো হাকিম আদালতে। কিন্তু ‘ক্রিমিনাল ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধগুলোর বিচারের এখতিয়ার জেলা জজ আদালতের হাতে চলে যায়। আর জজ আদালতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এসব মামলার বিচারকাজে তৈরি হয় দীর্ঘসূত্রতা।
সংসদে উত্থাপিত বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংশোধনের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০১৪ এর তফসিলভুক্ত ‘দ্য পেনাল কোড-১৮৬০’ এর কতিপয় ধারা পূর্বের ন্যায় পুলিশ কর্তৃক তদন্তযোগ্য এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হওয়ার বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
সেক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণ এর সুফল লাভ করে বলে আশা প্রকাশ করা যায়। এছাড়া এই সংশোধনীর মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর অধীন কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতাভুক্ত হবে।
যার ফলে এ জাতীয় মামলাগুলোর তদন্ত অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করা যাবে। বিলে এসব অপরাধসমূহ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাতীত তদন্তাধীন, বিবেচনাধীন থাকলে তা এখতিয়ার তদন্ত সংস্থা ও সম্পন্ন আদালতে স্থানান্তরিত করার বিধান করা হয়।
বিলে বিদ্যমান আইনের ধারা ২৮ক-এর পরিবর্তে নতুন ২৮ক প্রতিস্থাপন হয়েছে। নতুন ধারায় বলা হয়, এ আইনের অধীনে অপরাধসমূহে আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর সিডিউল ২-এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ জামিন পাওয়ার সুযোগ লাভ করবেন।