• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পৌর ভোট-হাসি কান্নার লড়াই আজ


প্রকাশিত: ৩:০২ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৭ বার

11111এস রহমান:  আজ বুধবার পৌরসভা ভোট। আজ  ৯৪৫ জন মেয়র প্রার্থীর মর্যাদার লড়াই। হাসি কান্নার লড়াই। আজ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের-লড়াই।
আজ ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এবারের পৌর নির্বাচনে দলীয় মার্কায় ভোট দেবেন ভোটাররা। তাই স্থানীয় এই নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের তাৎপর্য পেয়েছে। এক কথায় আজ ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষে’র লড়াই। আজ সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। চলবে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। গতকালই ভোটের যাবতীয় সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে পেঁৗছে গেছে।

শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির সদস্যবৃন্দ।
সাতটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন_ পিরোজপুর সদরে মো. হাবিবুর রহমান মালেক, জামালপুরের মাদারগঞ্জে মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবির, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা, ফেনীর সদরে হাজী আলাউদ্দিন ও পরশুরামে নিজামউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নোয়াখালীর চাটখিলে মোহাম্মদ উল্লাহ পাটোয়ারী ও চাঁদপুরের ছেংগারচরে রফিকুল আলম। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

এবার ইসি কখনও কখনও শক্ত ভূমিকা কখনও নতজানু হয়েছে। সকল চাপ উপেক্ষা করে ইসি মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ইসির বিরুদ্ধে অবশ্য বিএনপির অভিযোগ অন্তহীন। খালেদা জিয়ার বারবার তাগাদা সত্ত্বেও ইসি সেনা নিয়োগ করেনি। এতে বিএনপি দারুণ ক্ষুব্ধ। তবে কারচুপি, কেন্দ্র দখলের আশঙ্কার কথা বলার পাশাপাশি বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন। তারা প্রমাণ করবেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। তাই ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

বিভিন্ন জনমতে আওয়ামী লীগ এগিয়ে। তবে বেগম খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৮০ ভাগ আসনে জয়ী হবে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাদের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে থাকতে পারছেন না। কর্মীরা পলাতক।
এদিকে আওয়ামী লীগের শিরঃপীড়ার কারণ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এখনও অর্ধশতাধিক প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছেন। তাদের কারণে আওয়ামী লীগ বেশ কিছু পৌরসভায় হারতে পারে। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ২৫-এ এসে নেমেছে।

এদিকে নিবন্ধন হারানো জামায়াত ৪৮ পৌরসভায় মনোনয়নপত্র জমা দেয়। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় দলটির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। ১০টি পৌরসভায় প্রার্থিতা বাতিল হয়। ৫টিতে বিএনপির সমর্থনে প্রত্যাহার করে নেয়। জামায়াত প্রার্থীদের ১৭ জন জগ, ১০ জন মোবাইল ফোন ও ৬ জন নারিকেল গাছ প্রতীকে লড়ছেন। বিএনপির সঙ্গে জোট হয়নি জামায়াতের। জামায়াত যে ৩৩ পৌরসভায় নির্বাচনে লড়ছে, তার ৩২টিতেই বিএনপিরও প্রার্থী রয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে বিএনপি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে।

এক সপ্তাহের জন্য লাইসেন্সধারীদের সব অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। বহিরাগতের বেশিরভাগ এলাকা ছাড়েনি। অনেক ওসিকে প্রত্যাহার করতে চাইলেও ইসি তা পারেনি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি শুধু সতর্কতায় শেষ হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ইসির ব্যর্থতা স্পষ্ট। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নেই। শুরুতে এ নিয়ে বেশ তর্কবিতর্ক ছিল। কোনো কোনো নির্বাচন কমিশনার ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, সাংবাদিকরা ভোটের দিন নির্বিঘ্নে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

২৩৪টি পৌরসভায় একজন করে মেয়র, ৭৩১ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং দুই হাজার ১৯৩ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এ জন্য মেয়র পদে ৯৪৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আট হাজার ৭৪৬ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৪৮০ জনসহ মোট ১২ হাজার ১৭১ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাতজন মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪০ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রতিটি পৌরসভায় রিটার্নিং এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ করবেন। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে তিন হাজার ৫৫৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি বুথে একজন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং প্রতি ভোটকক্ষে দু’জন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যন্ত্রচালিত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

মেয়র পদে লড়ছেন ৯৪৫
পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রার্থী ৯৪৫ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৩৪ জন। কম করে হলেও অর্ধশতাধিক পৌরসভায় আওয়ামী লীগের রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। দল থেকে বহিষ্কারের পরেও তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। অনেক এমপি বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন করছেন।
বিএনপিতে ২২৩টি পৌরসভায় মেয়র পদে দলের প্রার্থী থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ২০ থেকে ২৫টি পৌরসভায়। বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন। ৭৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ২০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের ৫৭ জন, জাসদের ২১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৭ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আটজন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ছয়জন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চারজন এবং এলডিপি, ন্যাপ, বিকল্পধারা, বাসদ, তরীকত ফেডারেশন, পিডিবি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির একজন করে প্রার্থী মেয়র পদে লড়ছেন।

২১ পৌরসভায় সরাসরি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই
মাদারীপুরের কালকিনি, শিবচর এবং চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভায় বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তবে ২১টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি ভোটের লড়াই হচ্ছে। এই পৌরসভাগুলো হচ্ছে_ বগুড়ার সান্তাহার, রাজশাহীর কাঁকনহাট, ভবানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, পাবনার ঈশ্বরদী, যশোরের কেশবপুর, ভোলার দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, দুর্গাপুর, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুুর, ফেনীর দাগনভূঞা, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, বারৈয়ারহাট ও সন্দ্বীপ।

মেয়র পদে ১৫ নারী
মেয়র পদে ১৫ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সাতজন আওয়ামী লীগের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চারজন, স্বতন্ত্র তিনজন এবং বিএনপির একজন। তারা হচ্ছেন_ পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের জাকিয়া খাতুন, ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের তহমিনা আখতার মোল্লা, রংপুরের বদরগঞ্জে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শামীম আরা বেগম, রাজশাহীর চারঘাটে আওয়ামী লীগের নার্গিস খাতুন, নাটোরের গোপালপুরে আওয়ামী লীগের রোকসানা মোর্তজা লিলি, নাটোর সদরে আওয়ামী লীগের উমা চৌধুরী, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের বেগম আশানুর বিশ্বাস, কুষ্টিয়ার মিরপুরে স্বতন্ত্র নাসরিন ফেরদৌস, নড়াইলের কালিয়ায় স্বতন্ত্র সোহেলি পারভীন (নিরী), পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাবেয়া খাতুন, নরসিংদী সদরে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফারজানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের তারাবতে আওয়ামী লীগের হাছিনা গাজী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে স্বতন্ত্র তানিয়া বেগম, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির খালেদা বেগম এবং কুমিল্লার লাকসামে বিএনপির শাহনাজ আক্তার।
চার হাজার পর্যবেক্ষক
ইসি জানিয়েছে, চার হাজার ৮৯ জন পর্যবেক্ষক ভোটের মাঠে থাকবেন। দেশীয় ২৯টি সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। ঢাকা থেকে ৭টি সংগঠন ১৩০ জন পর্যবেক্ষকের জন্য কার্ড নিলেও বাকিরা স্থানীয়ভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এবার কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন না।