পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা ছড়াচ্ছে
জাতিরবন্ঠ রিপোর্ট : পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে বাড়ছে সহিংসতা। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটছে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা। আমাদের জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা জানান, প্রচারের সময় হামলা, সংঘর্ষে বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ ঘন্টায় শতাধিক লোক আহত হয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও রামগঞ্জ, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, শরীয়তপুর, বরগুনা পাথরঘাটাসহ কয়েক স্থানে এসব নির্বাচনী সহিংসতা হয়। এর মধ্যে চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ জন আহত এবং প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরিষাবাড়ীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত হচ্ছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশনের শোকজের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা বা কারাদণ্ড দিলেও বিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা কমছে না। এ অবস্থায় দেশের অনেক জেলায় মূলত বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, ইসি সতর্ক করার পরও নির্লিপ্ত রয়েছে মাঠ প্রশাসন। এখন পর্যন্ত থানার ওসিদের বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সচেতন মহল দ্রুত সহিংসতা কমাতে জোরালো ভূমিকা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমানের সমর্থকদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ইমাম হোসেন পাটোয়ারীর সমর্থকদের সংঘর্র্ষে ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষে একটি মাইক্রোবাস ও ৭-৮টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং কমপক্ষে ২০টি দোকান ভাংচুর করা হয়। দু’পক্ষের লোকজন মিছিল নিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়লে এ সংঘর্ষ বাধে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দু’জন হচ্ছেন- খালেদ হোসেন ও হান্নান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিজানুর রহমানের সমর্থকদের একটি মিছিল চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ইমাম হোসেনের সমর্থকদের মিছিলের সামনে পড়ে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষকারীরা চৌদ্দগ্রাম বাজারের পুরনো ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি মাইক্রোবাস ও ৭-৮টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সংঘর্ষ পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের কমপক্ষে ২০টি দোকান লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়। সংঘর্ষে আহত কমপক্ষে ৫০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানান চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মনিরুল ইসলাম। তাদের মধ্যে ৭ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরহাদ জানান, পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) :জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র একেএম ফয়েজুর কবীর তালুকদার শাহীন ও বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী রহুল আমীন সেলিমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে আরামনগর বাজার এলাকায় এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়। আহতরা হলেন- সফিকুল ইসলাম, পাজেল মিয়া, শাহিন আতিক উজ্জ্বল, রাকিব, মনির হাসান আপন, আমিনুর, পলাশ, আকু, আল আমিন ও শহীদ ভিপি। আহতদের সরিষাবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
শরীয়তপুর :শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষকালে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালের বাসভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে হামলাকারীরা। শরীয়তপুর সদর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালের পক্ষে সোমবার দুপুরে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি পক্ষের একাংশের নেতা কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসেন অপু এবং অপর অংশের নেতা সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ভিপি নুরুল আমিন কোতোয়াল। মিছিলের শেষ পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় সংঘর্ষকারীরা নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালের বাড়িতে হামলা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তার স্ত্রী ওসিতুন্নেছা ও পূত্রবধূ আয়েশা খাতুন, ইলিয়াছ, প্রকাশ, দ্বীন ইসলাম, সুজনসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
সাভার :সাভারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বদিউজ্জামান বদির মতবিনিময় সভায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। গতকাল বিকেলে বদিউজ্জমান বদি নিজ বাসায় দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার বাসা লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং চেয়ার টেবিল, বাড়িঘর ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে পালিয়ে যায়। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জড়িতে বলে দাবি করেছেন বিএনপি প্রার্থী বদি।
পাথরঘাটা (বরগুনা) :পাথরঘাটা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তারিকুল ইসলাম লিটন খাঁর গণসংযোগে একই ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জুয়েল পঞ্চায়েত ও তার কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন লিটন খাঁর ৬ কর্মীকে কুপিয়ে আহত করে। রোববার রাত ৯টার দিকে ৯নং ওয়ার্ডের খাদ্য গুদামের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৪ জন হলেন- লিটন খাঁর ভাই স্বপন, রাসেল, রাজু ও নুর আলম। এ ছাড়া পাথরঘাটা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন লিটন ও জাহাঙ্গীর। এদিকে শনিবার ১নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মাহাবুবের বাসায় হামলার ঘটনায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফারুক মলি্লকসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর :লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও রামগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারের সময় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার সকালে রামগতি পৌর নির্বাচনের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের (টেবিল ল্যাম্প) পক্ষে প্রচারকালে অপর কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন আহতরা। আহতরা হলেন- রামগতি পৌর শহরের চরসেকান্তর এলাকার নাজমা, মনি বেগম , তাহমিনা ও শাহাদাত হোসেন। অপরদিকে সোমবার দুপুরে রামগঞ্জে বিএনপির মেয়র প্রার্থী রোমান হোসেন পাটোয়ারীর নির্বাচনী প্রচারে পদ্মার বাজার এলাকায় সস্ত্রাসীদের হামলায় পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিকুল্লাহ, ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার উল্যা মাস্টারসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় রামগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন মেয়র প্রার্থী রোমান।