পূজার ছুটি কেড়ে নিল ওদের..
আবু তাহের . ঠাকুরগাঁও থেকে : মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) ভোরের দিকের ঘটনা। পুলিশ সদস্য খরেশ চন্দ্রের বাড়ির সবাই তখন ঘুমিয়ে। একতলা বাড়িটির ওপর দিয়ে গেছে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। সেখান থেকে হঠাৎ একটি তার ছিঁড়ে নিচে পড়ে। মুহূর্তে শর্ট সার্কিট হয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে পুরো বাড়িটি। বিদ্যুতের তার থেকে আগুন ধরে যায় পুরো বাড়িতে।
ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা খরেশের পরিবার বাঁচাও বাঁচাও আর্তনাদ করছিল, কিন্তু বের হওয়ার পথও বন্ধ। চারদিকে আগুন। প্রতিবেশীরা চেষ্টা করলেও বিদ্যুতের তারের কারণে বাড়িটিতে ঢুকতে পারছিলেন না নিজেরাও বিদ্যুতায়িত হওয়ার আশঙ্কায়। সে আগুনেই পুড়ে করুণ মৃত্যু হয় খরেশ চন্দ্রসহ তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও শ্যালিকা। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জনগ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেশীরা জানান, ওই বাড়ির ঘরের ভেতরে ছিল খরেশের মোটরসাইকেল। আগুন ছড়িয়ে পেট্রোলে স্পর্শ করতেই দাউ দাউ করে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সে আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান খরেশের স্ত্রী কেয়া রানী (৩৫) ও তার বোন স্বর্ণা রানী (২০)। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ঘর থেকে বের করা হয় খরেশ ও তার দুই সন্তানকে। কিন্তু রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় তার ছেলে নিলয় (১০) ও নাইস (১৫)। আর হাসপাতালে নেওয়ার পরও বাঁচানো সম্ভব হয়নি পুলিশ সদস্য খরেশ চন্দ্রকে (৪৫)।
নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, বাড়ির ওপর দিয়ে টানা ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইনের একটি তার ছিঁড়ে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পুলিশ কনস্টেবল খরেশ চন্দ্রের ভাতিজা ললিত চন্দ্র অভিযোগ করেন, বিদ্যুতের ১১ হাজার ভোল্টের তার বাড়ির ওপর দিয়ে টানার সময় অনেকবার বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা তার সরিয়ে নেয়নি। তার ছিঁড়ে ঘরের ওপর পড়ার কারণেই ঘরে আগুন ধরে যায়।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ সদস্য খরেশ চন্দ্র দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়িতে আসেন। রাতে স্ত্রী ও সন্তানসহ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আকস্মিকভাবে ঘরে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন বাড়ির ৫টি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেননি। স্থানীয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে ঘটনাস্থলেই মারা যান খরেশ চন্দ্রের স্ত্রী কেয়া রানী ও তার শ্যালিকা স্বর্ণা রানী। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় খরেশ চন্দ্র ও তার দুই সন্তানকে। তাদের প্রথমে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনজনেরই মৃত্যু হয়।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, দুজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ কনস্টেবল খরেশ চন্দ্র যান। তার শরীর একশ ভাগই পুড়ে যাওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।