পুলিশ সদস্যরাই প্রশ্ন তুলেছেন-কেন খুন হলো কনস্টেবল কালাম?
স্টাফ রিপোর্টার.সাভার: ডিএমপির আশুলিয়া থনার বাড়ইপাড়ায় চেকপোস্টে দায়িত্বপালনকালে আততায়ীর অতর্কিত ছুরিকাঘাতে পুলিশ কনস্টেবল মুকুল নিহত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে রাজধানীতে।খোদ পুলিশ সদস্যরাই প্রশ্ন তুলেছেন কেন ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত অপর পুলিশ সদস্যরা কোন পদক্ষেপ নিল না?
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়ইপাড়ায় পুলিশের ওপর দুর্বৃত্তের হামলার ঘটনায় সতীর্থরা সাহায্যে এগিয়ে না এসে উল্টো দৌড়ে আত্মরক্ষা করে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই সময় চেকপোস্টোর অপর তিন পুলিশ সদস্য দৌড়ে নিজের জান বাঁচানোর চেষ্ঠা করে। আজ বুধবার সকালে ওই হামলায় পুলিশ সদস্য মুকুল (২৫) নিহত এবং নূরে আলম (২৭) গুরুতর আহত হয়েছেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪ এর সহকারী পরিচালক সামছুল হক জানান, নবীনগরের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে দুই যুবক চেকপোস্টের কাছাকাছি এসে মোটরসাইকেলটি থামান। কিছু দূর পায়ে হেঁটে চেকপোস্টের কাছে গিয়ে তাঁরা সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য মুকুল ও নূর আলমের ওপর ধারালো অস্ত্রের আঘাত করেন। এ সময় সেখানে সশস্ত্র অবস্থায় থাকা পুলিশের অন্য তিন সদস্য হামলাকারীদের প্রতিহত না করে উল্টো দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
হামলায় গুরুতর আহত দুজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মুকুল মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।নিহত মুকুল বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল পূর্বপাড়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে। তিন বছর আগে তিনি পুলিশে যোগদান করেন। সর্বশেষ শিল্পপুলিশ আশুলিয়া জোনে কর্মরত ছিলেন।
এ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বিএম আশরাফ উল্লাহ বলেন, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেন, নূরে আলম সিদ্দিক, পিনারুজ্জামান, ইমরান আজিজ ও আপেল মাহমুদ সশস্ত্র অবস্থায় ওই চেকপোস্টে অবস্থান নেন। এর কিছু সময় পরই দুই মোটরসাইকেল আরোহী তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে কালিয়াকৈরের দিকে পালিয়ে যান।
এএসপি আশরাফ আরও বলেন, হামলার পর মুকুলকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে, আর নূরে আলমকে পুলিশের ভ্যানে করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সন্ত্রাসীরা মুকুলের মুখ, পেট, ঘাড় ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মুকুল মারা গেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মুকুলের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। আর নূরে আলমের বাম হাতের কনুইয়ের ওপর ও হৃৎপিণ্ডের নিচের অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই তিন কনস্টেবলের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ঘটনার পর এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নূরে আলমকে দেখতে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ঘটনাস্থলে থাকা তিন কনস্টেবলের কাছে অস্ত্র থাকার পরও কেন তাঁরা গুলি করলেন না— এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পরে বলা যাবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়:
ঘটনার পর আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) একরাম হোসেন জানিয়েছিলেন, আশুলিয়া থানার অধীন শিল্প পুলিশের একটি দল নন্দন পার্কের সামনের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একটি মোটরসাইকেলে করে দুই যুবক কালিয়াকৈরের দিক থেকে নবীনগরের দিকে যাচ্ছিলেন।
সকাল পৌনে আটটার দিকে চেকপোস্টে পৌঁছালে পুলিশ সদস্যরা মোটরসাইকেলটিকে থামান। সেটির কাছে যাওয়া মাত্রই ওই দুই যুবক মুকুল ও নূর আলমকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। আহত অবস্থায় মুকুল ও নূর আলম দৌড়ে সড়কের পাশের একটি হোটেলের মধ্যে ঢুকে পড়েন। পরে ওই দুই যুবক পিছু পিছু এসে ওই হোটেলে ঢুকে আবারও তাঁদের ছুরিকাঘাত করেন এবং গুলি করেন। এরপর কয়েকটি ফাঁকাগুলি করে যুবকেরা চলে যান।
এসআই একরাম আরও বলেন, স্থানীয়রা গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুকুল মারা যান।