‘পুলিশ মানুষের সেবক-শাসক নয়’
স্টাফ রিপোর্টার. রাজশাহী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন পুলিশ সদস্যদের সততা, পেশাদারত্ব ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দেশের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থেকে জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নবীন সদস্যদের শিক্ষা সমাপনী প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ, প্যারেড পরিদর্শন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের (শিক্ষানবিশ) মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
একাডেমির কুচকাওয়াজের অভিবাদন মঞ্চের কাছে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এবং পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সাংসদ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আপনারা আরও প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা এমন পুলিশ গঠন করব, যে পুলিশ হবে মানুষের সেবক, শাসক নয়।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশকে আমি সব সময় আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই। দেশের প্রচলিত আইন, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধই হবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথনির্দেশক।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও সংঘাতপূর্ণ কর্মতৎপরতা রোধসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বিভিন্ন মহলে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী দক্ষ ও জনবান্ধব পুলিশ সার্ভিস গঠনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ‘হোম অব পুলিশ’খ্যাত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদার সার্বিক উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছি। নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত একাডেমিসংলগ্ন পদ্মা নদীর তীরের অতিরিক্ত ১০০ একর খাস জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন ক্যাডারের ৭৩৯টি পদ সৃষ্টি, বাংলাদেশ পুলিশে আরও ৫০ হাজার জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’ গঠন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ সৃষ্টি, আরও বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট যেমন : ‘পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’, ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ’, ‘নৌ-পুলিশ’ এবং দুটি ‘স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন’ ব্যাটালিয়ন, ‘গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
এ সময় নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পথ অনুসরণ করে পুলিশের বিভিন্ন স্তরে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট পদেও নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা প্রথম পুলিশে নারীদের নিয়োগ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে সন্দ্বীপ সরকার ‘বেস্ট প্রবেশনার’, মো. মাশকুর রহমান ‘বেস্ট একাডেমিক’ এবং মো. বেলাল হোসেন ‘বেস্ট ইন হর্সম্যানশিপ’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন। বিসিএস ৩৪তম ব্যাচে সফলভাবে মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী ২৬ জন নারীসহ ১৪১ জন নবীন সহকারী পুলিশ সুপার এ দিন কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।