পুলিশের থাপ্পরে আলমসাধুচালকের বারোটা
আব্দুর রহমান জসিম,চুয়াডাঙ্গা থেকে : চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ির এক কনস্টেবলের থাপ্পড়ে সংজ্ঞা হারিয়ে হাসপাতালে আলমসাধুচালক শরিফুল ইসলাম (২৫)। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।
আলমসাধুচালক শরিফুল ইসলাম তিয়রবিলা বাগানপাড়ার মওলা বক্সের ছেলে। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। আজ বিকাল ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
পুলিশ কনস্টেবল কেন থাপ্পড় মেরেছে? সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চিকিৎসনাধীন শরিফুলের শয্যাপাশে থাকা তার নিকটজনেরা বলেছেন, তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ির টহল দলকে বহন করতে প্রতিরাতেই পালাক্রমে এলাকার শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধ আলমসাধু চালকদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তেলও কিনতে হয় ওই আলমসাধু চালকের নিজের টাকা দিয়েই। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে শরিফুলকে ফাঁড়িতে পৌঁছুতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছায় শরিফুল।
সারারাত টহল পুলিশকে বহন করতে হবে ভেবে শরিফুল আলমসাধু পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যে রেখে পার্শ্ববর্তী বাড়িতে ভাত খেতে যায়। রাতের খাবার খেয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে ফিরলে তাকে এক কনস্টেবল থাপ্পড় মারে। কানচোয়ালে থাপ্পড়ে কাঁপুনি ওঠে শরিফুলের। থাপ্পড়ের পর কাঁপুনি দেখে পুলিশ দল ঠাট্টা শুরু করে। বলে, নাটক করছিস? জোর করেই আলমসাধু চালাতে বলে।
আলমসাধু নিয়ে কিছুদূর যেতেই পড়ে যায় সে। জ্ঞান হারায়। তার বাড়িতে খবর দেয়া হয়। শরিফুলের বড় ভাই সোনা ছুটে যায়। তাকে আলমসাধু চালাতে বাধ্য করিয়ে অন্যদের বলে ওকে (শরিফুলকে) হাসপতালে নিতে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে শরিফুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জ্ঞান না ফেরায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী নেয়ার পরামর্শ দেন। রাতে টাকা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। আজ রাত্রের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন না হলে রাজশাহী নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার মা রাবেয়া খাতুন।
পুলিশ কনস্টেবলের থাপ্পড়ে সংজ্ঞাহীন আলমসাধুচালক, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আব্দুল হাকিম বলেছেন, ঘটনা আমার সামনেই ঘটেছে। আলমসাধুযোগেই প্রতি রাতে টহল দেয়া হয়। এছাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে টহল পুলিশ বহন করার কোনো বাহন নেই।
এদিকে পুলিশের থাপ্পড়ে আলমসাধু চালক শরিফুল অজ্ঞান হয়ে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে গতরাতেই একদল আলমসাধুচালক হাসপাতালে শরিফুলের শয্যাপাশে হাজির হয়। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, আলমসাধুচালকদের পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা মানুষই মনে করে না। মাসে মাসে টাকা দিতে হয়। পালাক্রমে আলমসাধুযোগে টহল পুলিশ বহন করতে হয়। ৩শ টাকা দিলে রাতের ওই ডিউটি করতে হয় না। তাছাড়া পুলিশ ফাঁড়ির মালামাল বহন করিয়ে একটি টাকাও দেয় না। সারারাত টহল পুলিশ বহন করলেও এক কাপ চাও দেয়া হয় না।