• শনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পিএসসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্ধ ফারুকের আর্তনাদ –


প্রকাশিত: ১২:৪৪ এএম, ২১ আগস্ট ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৪ বার

ঠকুরগাঁও প্রতিনিধি  :  পিএসসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্ধ ফারুকের এক আর্তনাদ -পাঠিয়েছেন। ফারুক Bliend faruk-www.jatirkhantha.com.bdজাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র অন্ধ হওয়ার কারণে ক্যাডার বা ননক্যাডার পদে উত্তীর্ণ হতে দেননি ফারুক আহম্মেদকে।  বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি)।আর একারণে পিএসসির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্ধ ফারুকের আর্তনাদ করে বিচার চেয়েছেন।-

ফারুক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ভূল্লী এলাকার বাসিন্দা। জন্মেছিলেন স্বাবাভিকভাবে। তিনি নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৯৬ সালে স্কুলে খেলার অনুশীলন করার সময় মাথা নিচে পা উপরে করার পর চোখে ব্লাড পেসার এসে যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়।

দীর্ঘ পাঁচ বছর বেঁচে থেকেও একজন মৃত মানুষ হয়ে ছিলেন তিনি। পরে অদম্য সাহস আর ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানিয়েছে তার সমস্ত প্রতিকূলতা।সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। লিখিত পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে তিনি মৌখিক পরীক্ষাতেও অংশ গ্রহণ করেন।

মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েও ক্যাডার বা ননক্যাডার পদে উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি।এতে করে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর প্রতি অসাহানুভূতি/মানবধিকার লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করে মনের কষ্টগুলো বলেছেন দৃষ্টিশক্তিহীন ফারুক আহম্মেদ।

ফারুক আহম্মেদ বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় লিখিত বিষয়ে পাশ করার পর আমি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করি চলতি বছরের ১৫ মার্চ। প্রস্তুত হয়ে আমি ভাইভা বোর্ডে গিয়েছি। প্রথমে আমার বিষয়ে সবকিছু ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করি। বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাকে বলেন, ফারুক সাহেব আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল। তারপর যদি আপনি ক্যাডার হোন আপনার কর্মস্থলে কিভাবে যাতায়াত করবেন, সমস্যা হবে কি না, নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে একজন জাহানারা ইমাম সম্পর্কে, সংবিধানের মূল নীতি বিষয়ে, ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে, জিজ্ঞাসা করলেন। আমি সবকিছুই ভাল করে ব্যাখ্যা দিয়েছি। পরে আমাকে আশ্বানিত করা হলো, চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ‘বেষ্ট অব লাক’ ফারুক সাহেব। আমি মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে আশ্বানিত হয়েছি, আমি ক্যাডার বা ননক্যাডার পেয়েই যাব। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক গত ১৭ আগস্ট ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। আমি যখন আমার রোলটি ক্যাডার অথবা ননক্যাডার লিস্টে না পেয়ে মর্মাহত ও খুবই বিচলিত হই।

মর্মাহত হয়ে অভিব্যক্ত করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফারুক আহম্মেদ আরো বলেন, আসলে আমি ভালই করেছি মৌখিক পরীক্ষায়। ভাইবা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছিলেন কোন সমস্যা নেই আপনি সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আমি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বিসিএস’র সকল ধাপ পার করেও ভাইবা বোর্ড থেকে এভাবে বিমুখ হয়ে গেলাম আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম। আমি আবার এই ধাপে কখন পৌঁছাবো। ৩৭ তম বিসিএস পরীক্ষা আবার অংশ গ্রহণ করবো।

পরবর্তীতে আবার প্রিমিয়ার ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারি কি না শঙ্কাবোধ করছি। আমি আমার জীবন চলার পথে যে ধাক্কা খেলাম, মনোবাসনা ছিল সেখান থেকে পিছিয়ে গেলাম এখন নিজেকে খুবই অসহায় মনে করছি। হয়তো আমার জীবনের পথ চলা কিছুটা হলেও থমকে গেল। আমি খুব ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করছি পিএসপি আমার প্রতি বিবেচনা করেনি। আমার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। পরবর্তীতে আমি যদি বিসিএস ক্যাডার না হতে পারি এই বেদনার্থ কখনো ঘুচাতে পারবো না।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফারুকের পড়াশুনা ও বেড়ে ওঠা: দৃষ্টিশক্তির হারার পর পরিবারের উৎকণ্ঠা ও হতাশার মাঝেই শুরু হয় আবার পথ চল। ৫ বছর পর ২০০১ সালে জেনেছি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলেও পড়াশুনা করা যায়। তারপর একটু আশ্বানিত হয়ে জীবনটা নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন দেখা শুরু হয় ফারুকের।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়া ব্যয়বহুল অপরদিকে পারিবারিকভাবে তেমন স্বচ্ছলতা ছিল না। পরিবার তেমন সচেতন ছিল না পরবর্তীতে পড়াশুনা করে লাভ কি হবে। ফারুক নিজের উদ্যোগে দিনাজপুর জবলি স্কুল রিসোর্স সেন্টারে মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে পড়াশুনা শুরু করে। এর পরে ২০০৩ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা কৃতকার্যের সাথে উত্তীর্ণ হয় সে।

পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশ করে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে দৃষ্টিশক্তিহীন ফারুক। তারপর ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।

প্রতিবন্ধী ফারুকের পেছনে যার অবদান: দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার পর বাবা-মার পরে ফারুকের এতদূর অগ্রসর হওয়ার পেছনে যার সবচেয়ে বড় অবদান সে তার স্ত্রী তাহমিনা আহম্মেদ। এইচএসসি পরীক্ষার পর ফারুক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তিনি এখন ২টি সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পড়াশুনা ও সংসার চালাতো। বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত ফারুকের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পেছনে একমাত্র স্ত্রীর অবদান বেশি। গর্ভবতী অবস্থায় পরীক্ষার আগে প্রতিটি বই পড়ে শুনাতো স্ত্রী তাহমিনা। স্ত্রী তাহমিনার চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতো ফারুক এমনটি মনোব্যক্ত করেছেন।

স্ত্রীর অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে দৃষ্টিহীন ফারুক বলেন, এই রকম বন্ধন যেন প্রতিটি মানুষের জীবনে হয়। তাহলে সমাজ অবশ্যই একদিন আলোকিত হয়ে উঠবে। বিসিএস পরীক্ষা উত্তীর্ণ না হওয়ায় আমার স্ত্রী তাহমিনা খুবই মর্মাহত। পিএসসি বোর্ড আমার প্রতি খুবই অমানবিক আচরণ করেছে মন্তব্য করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফারুক।