• বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর ২০২৪

পাষণ্ডরা কি ছিল হিংস্র জন্তুর চেয়েও অতি ভয়ানক?


প্রকাশিত: ২:২২ এএম, ২৫ জুলাই ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৮৭ বার

11------------- জাপান .টোকিও থেকে ইমদাদুল হক: কি এমন অপরাধ করেছিল রাজন? মানুষ নামের ওই পাষণ্ডরা কি ছিল হিংস্র জন্তুর চেয়েও অতি ভয়ানক? কার্যত ভয়ানক হলেও এর উৎস কীসের? কেন তারা এতখানি নিষ্ঠুর, পাষণ্ড ও নির্মম হতে পারল? সবকিছুই যেন এলোমেলো। কোন সমাজ তাদের এই শিক্ষা দিয়েছিল? সেই সমাজের কি কোনো দায়ভার নেই? কোন প্রশাসনের অধীনে ওই রক্ত খেকোরদের বসবাস ছিল? ওই প্রশাসনের কি কোনো দায়ভার নেই?বাবা-মা অতি আদরে ছেলের নাম রেখেছিলেন, শেখ মোহাম্মদ সামিউল আলম রাজন৷ অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন ছেলেকে নিয়ে৷ কিন্তু…।
৮ জুলাই, বুধবার সকালে চোর অপবাদ দিয়ে পৈশাচিক, বর্বরোচিত ও নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ১৩ বছর বয়স্ক শিশু রাজনকে হত্যা করা হয়। নিহত রাজন কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার ৮ নম্বর কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদের আলী ভাইয়ারপাড় গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে।
কথায় আছে চোর যখন চুরি করে, তখন কোনো না কোনো পদচিহ্ন রেখেই যায়৷ ঠিক তেমনি শিশু রাজনকে পিটিয়ে মারার দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করে নির্যাতনকারীরা নিজেরাই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়৷ ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তোলপাড় সৃষ্টি করে দেশ-বিদেশে৷
রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ২০ জুলাই সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় টোকিওর আকাবানে বিভি141ও হলে জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের অধীনে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। সুখেন ব্রম্ম সঞ্চালিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুর রাজ্জাক, হুসাইন মুনির, আশরাফুল ইসলাম, ছালেহ মো. আরিফ, নারমীন হক, কাজী ইনসানুল হক, জুয়েল আসহান কামরুল, মো. আবু তাহের, মুকুল মোস্তাফিজ, মো. নোমান, রাহমান মনি, হাসিবুল হাসান, হক মো. ইমদাদুল ও খন্দকার আসলাম হিরা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, ছোট্ট রাজনেরও নিশ্চয়ই বেঁচে থাকার সেই অদম্য জীবনশক্তি ছিল৷ বেঁচে থাকার জন্য তার আকুতিটুকু ২৮ মিনিটের পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম ভিডিওটিতে রয়ে গেছে। কিন্তু সে বাঁচতে পারেনি৷ বাঁচতে পারেনি বললে ভুল হবে; বরং বাঁচতে দেয়নি ওই পিশাচেরা। তার ছোট্ট শরীরটাতেই ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ ওইটুকু শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন থাকার জায়গাটুকু কোথায়? চিহ্ন ছাড়া আঘাতের সংখ্যা কত? সেটা কল্পনা করাও হয়তো বা দুষ্কর মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে শিশু রাজনের মনের ভেতর ঠিক কি চিন্তা কাজ করেছিল কোনো দিনই জানা যাবে না। কিন্তু অনুমান করা যায়, এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর প্রতি এক গভীর অভিমান তার বুকের ভেতর হাহাকার করে গিয়েছিল।
বক্তারা আরও বলেন, শিশু রাজন হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি না দিলে দেশে শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে না৷
সভায় বক্তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন ধরনের পৈশাচিক ঘটনা যেন আর কখনোই না ঘটে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানান। পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণির জনগণের প্রতি আরও অধিক সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান৷
সমবেতরা রাজন হত্যাকারীদের চরমভাবে ঘৃণা ও নিন্দা জানান৷ সবশেষে রাজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়৷
(ইমেইল: ekpata@gmail.com)