• বুধবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৪

পার্টি গার্লের ৩ নম্বর ইনিংস


প্রকাশিত: ১১:৩৭ এএম, ২৯ জুন ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৮৪ বার

মীরা নায়ার   :  জীবনের তিন নম্বর ইনিংস খেলার আগে বিস্ফোরক কলকাতার পার্টি গার্ল কনীনিকা 2বন্দ্যোপাধ্যায়। কনীনিকার সাক্ষাৎকার নিতে সকলে নাকি ভয় পায়? ইন্ডাস্ট্রির খবর—আপনি নাকি সারাক্ষণ রেগে থাকেন?

আমি আমার নিজের তালে চলি। একটু অ্যারোগেন্ট আমি।  প্রথমে সকলকে সম্মান করি।  সম্মান না পেলে তাঁদের দেখতে পারি না। আবার অন্য দিকে কেউ ভালবাসলে তাঁর জুতো পালিশ পর্যন্ত করে দিই। বড় বড় মহারথীর কথা অবশ্য আলাদা। তাঁরা শুধু সম্মানের যোগ্য। আমি আধ-পাগল তালকাটা। ইন্ডাস্ট্রির ওপর রাগব কেন? সময় যখন হবে আমি আমার জায়গা ঠিকই পাব।

মানে আপনি আপনার প্রাপ্য জায়গা পাননি…
কী বলছেন? আমি তো আমার জায়গা নিজে ছেড়ে দিয়েছি। ‘আবার আসব ফিরে’ করার পর আমি বুঝতে পারি এই স্টারডম আমি ধরে রাখতে পারব না। তখন আমার বয়স মাত্র পঁচিশ।

4কেন?
আমি পুরুষসঙ্গে ভয় পেতাম। সিগারেট-মদ খাওয়াকে খারাপ ভাবতাম। লাজুক ছিলাম। এ ভাবে কি ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা যায় নাকি? ‘তিন এক্কে তিন’ ছবিতে আমার একটা ডায়লগ ছিল —‘ট্যালেন্ট মারিয়ে কিছু হয় না।’ আজ জানি এটা কতটা খাঁটি। নিজের ঢাক নিজেকেই পেটাতে হয়। আমি বুঝেছিলাম চাকার উল্টো দিকে ঘুরছি। সাপলুডো খেলতে গিয়েছিলাম নিয়ম না জেনে। দোষটা আমারই। তাই বারবার সাপের মুখে পড়েছি। লোকে চিট করেছে।

কলকাতা থেকে পালিয়ে তা হলে মুম্বই যাওয়া?

হ্যাঁ, মুম্বইয়ে গিয়ে ‘এক’ টাকার মানে বুঝতে শুরু করি। ওখানেও কাজ পাইনি। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। প্রযোজকদের গার্লফ্রেন্ড আমার কাজগুলো নিয়ে নিত। আসলে তখন তো প্রযোজকের সঙ্গে গিয়ে সন্ধেবেলা কফি খেতে পারতাম না।
এখন পারেন?

হ্যাঁ, অবশ্যই এখন পারি। আজকের ‘কোনি’ অন্য মানুষ। এখন বুঝি মুম্বইয়ের ওই স্ট্রাগলটা আমায় কাজ কম দিলেও মানুষ হিসেবে তৈরি করেছে। তাই এখন কাজ কম পেলে মাটিতে পড়ে যাই না। আবার ভাল কাজ পেলে খুশিতে আত্মহারাও হয়ে যাই না।

এত কম কাজ করেও ফেসবুকে এত ফলোয়ার! ‘পেজ থ্রি’ পার্টির ছবিতে রোজ আপনার মুখ। পেজ থ্রি-র সব ফোটোগ্রাফারের নম্বর কি আপনার স্পিড ডায়ালে?

3আমার কোনও পিআর নেই। ফেসবুকে আমার ৮৫ হাজার ফলোয়ার। এঁদের মধ্যে অন্তত চার থেকে পাঁচ জন রোজ জিজ্ঞেস করেন  ‘আপনার পরের ছবি কী?’ তখন মনে হয়, কোথাও তো ডিপ্রাইভড নই! আমি ওদের মনে আছি।

“আমি লাকি সৃজিত আমাকে ‘রাজকাহিনী’তে নেয়নি…এত মহিলা চরিত্র!
সবাই একে অপরের কাছে চাপা পড়ে গিয়েছে।”

ডিপ্রাইভড না হোন। ২০০৪য়ে আপনার ডিপ্রেশন হয়েছিল না?

দেখুন, আমার ব্যক্তিগত জীবনে কী হয়েছে সেটা আমি বাজারে বিক্রি করতে চাই না। ওই সময় একটা বিশেষ কারণে আমার কাজ চলে গিয়েছিল। পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাই না।

কিন্তু পুরনো প্রেম? কনীনিকা মানেই প্রচুর সম্পর্ক ভাঙার গল্প। এত সম্পর্কের ভাঙাগড়া নিয়ে থাকলে কাজটা করবেন কখন?

আমি তো এমন অনেককে জানি যারা প্রতি সপ্তাহে বয়ফ্রেন্ড বদলায়। আমার সম্পর্কগুলো বরং লং-টার্মের। বহু দিন আগে একটা লং টার্ম সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। সম্পর্কটা যে থাকবে না সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি। বিশ্বাসঘাতকতা এলে তো ডিপ্রেশন আসবেই। তবে ওই সম্পর্ক ভাঙার ফলে আমি শেষ হয়ে যায়নি। সেখান থেকে শিখেছি। আবার শুরু করেছি।

কী শিখেছেন?
আমাদের মতো অভিনেতার মেয়াদ খুব কম। আজ আছি তো কাল নেই। ‘ষড়রিপু’ দেখার পর ফেসবুকে অনিকেতদা (চট্টোপাধ্যায়) লিখেছে, ‘‘কোনি এ বার যোগ্য জায়গা পাবে।’’ যোগ্য জায়গা বলে কিছু নেই জানেন….। কত আর্টিস্ট তো লেট ফর্টিতে স্টার হচ্ছেন। আমি আসলে সময়ে বিশ্বাস করি। মা-বাবা আমার জন্য কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু আমাকে আপনি কাঁদতে দেখবেন না। পালিয়ে গিয়েও ফেরত এসেছি। আসলে থিয়েটার করা মধ্যবিত্ত মেয়ে তো!

কিন্তু ‘পেজ থ্রি’তে থেকে থেকেই আপনার মুখ…

বলছি। মুম্বই থেকে ফেরার পর আমি সেই সমস্ত কাজ করেছি যেগুলো ছোটবেলা থেকে আমায় বারণ করা হত। আমি মদ খেয়েছি, গাঁজা খেয়েছি, পার্টি করেছি। ভুল-ঠিক বিচারের দায়িত্ব আমার। আমার দোকান যে খোলা আছে, সেটা ফ্রিতে বোঝানোর একমাত্র উপায় পেজ থ্রি। ইন্ডাস্ট্রিকে তো বুঝতে হবে আমি শহরে আছি! লোকে ভাবে খুব এনজয় করছি আমি। এনজয় মাইনাস একটা সময় গেছে যখন নিজে জোর করে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চোখে কাজল দিয়ে বেরিয়েছি। পেটে দু’ পেগ মদ পড়ার পর পার্টিতে লোকের আসল চেহারাটা দেখেছি, আমিও পাগলামি করি। কাউকে দোষ দিচ্ছি না। পার্টি-তেই নিজের গ্রুপ তৈরি করেছি। পিআর করেছি। কাজের জন্য যুদ্ধ যে ভাবেই করো সেটা লজিক্যাল। ভাই, তিন নম্বর ইনিংস খেলছি! এত সহজে ছাড়লে তো চলবে না। সরি এ ভাবে হার্শ কথা বললাম।

আচ্ছা ইন্ডাস্ট্রিতে এই যে নায়িকারা প্রযোজকদেরই বিয়ে করছেন…

বুঝেছি, আমি বলছি। ‘ষড়রিপু’ দেখে  সকলে বলছে কী ভাল! সুরজিৎ (সুরজিৎ হরি- ‘ষড়রিপু’র প্রযোজক)  তোর-ই জন্য ছবি করল। বিষয়টা এই রকম নয়। আমার জন্য কেউ কিছু করেনি কিন্তু, আমার লড়াই চলছে। তবে অয়নদা (অয়ন চক্রবর্তী) আর অদিতিদিকে (অদিতি রায়) ধন্যবাদ। ওরাই ‘কোনি’র চরিত্রটা আমায় দিয়েছে। মনে আছে, আগের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সময় অদিতিদি আমার পাশে ছিল।

1সম্পর্ক ভাঙার চার বছর পর আবার সম্পর্ক। রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না?

‘ষড়রিপু’র ডাবিংয়ের পর সুরজিৎ-য়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় আমার। কয়েক দিন বাদেই  ও সোজা বলেছিল, ‘‘আমায় বিয়ে করবে?’’

কিন্তু আপনার প্রেমিক তো বিবাহিত। ছেলেও আছে…

বন্ডিংটা একটু একটু করে স্ট্রং হয়। ওর বন্ধুত্ব আমায় পরিপূর্ণ করে। প্রথম সপ্তাহেই বাবামায়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম। সুরজিতের এগারো বছরের ছেলে আমার খুব বন্ধু। (আলতো হেসে) জীবনটা খুব ইন্টারেস্টিং জার্নি। কী হবে কেউ জানে না…

এই সম্পর্ক যদি না টেকে?না হলে ওদের জন্য প্রে করব।
বোনের বিয়ে এত ভাল করে দিয়েছেন। নিজেরটা কবে?

‘ষড়রিপু’র রিলিজের পর মনে হচ্ছে আমার মেয়ের বিয়ে এটা। তবে সুরজিৎ জীবনে থাকলে এই বছরের শেষে বিয়ের ইচ্ছে আছে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘চতুষ্কোণ’য়ে ক্যামিও রোল করেছিলেন। মনে হয়নি ‘রাজকাহিনী’তে এত অভিনেত্রীদের কাস্টিং করল, আমায় কেন নিল না?

‘চতুষ্কোণ’ করার পর মানুষ জেনেছিল আমি বেঁচে আছি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। ‘রাজকাহিনী’তে তো ও বলেছিল, আমায় নেবে। কী জানি কেন নিল না! তবে একটা কথা বলব?

বলুন না…

আমি লাকি সৃজিত আমাকে ‘রাজকাহিনী’তে নেয়নি। ও এত বড় একজন পরিচালক সেটা মাথায় রেখেই বলছি ‘রাজকাহিনী’তে এত মহিলা চরিত্র! সবাই একে অপরের কাছে চাপা পড়ে গিয়েছে। অ্যাক্টরদের প্রবলেম কী জানেন? তাদেরকে রেগুলেটরের সুইচের মতো
কমিয়ে রাখতে হয়। সবাই ফুল স্পিডে ঘুরতে চাই আমরা। মেগা সিরিয়াল থেকে শিখেছি ছোট্ট চরিত্র করেও সকলের নজর কাড়া যায়। ‘রাজকাহিনী’তে সমস্ত মহিলার চরিত্রে এ যুগের সেরা  সেরা অভিনেত্রী। কিন্তু  সকলে সেটা প্রকাশ করার স্পেস পায়নি।

থার্ড ইনিংসে কী ভাবে খেলবেন?

‘বুদ্ধু ভুতুম’ চলছে। এখন আর কাজ নেই। জানেন কাজ কমলে জীবন এনজয় করা যায়। অনেক জমি কিনে চাষ করব ভেবেছি। প্লিজ হাসবেন না… কাজ না থাকলে অন্য কিছু নিশ্চয়ই চলে আসবে। তবে সব পেতে চাই না। সব পেলে নষ্ট জীবন…