পাপ বাপরেও ছাড়েনা-নারীবাজ যুবলীগার ধরা পড়লো যেভাবে-
মোস্তফা কামাল প্রধান : গাজীপুরের কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা এলাকায় ঢালাইকৃত সিমেন্টের আস্তর ভেঙে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামী যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুমকে তার বাড়ি থেকে আটক করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আলম চাঁদ বলেন, উদ্ধারকৃত লাশটি নাগরী ইউনিয়নের সাবেক সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নারী মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুমের ২য় স্ত্রী নাসিমা বেগমের।
পুলিশ জানায়, অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর বিকৃত লাশটি ২ মাস ৭ দিন পর হাত পা-বাধা লেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নাসিমার প্রথম স্বামী দুলাল মিয়া জানান, আমার অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের মৃত তোরাব আলীর ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাসুম ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে মিথ্যা প্রলোভনের ফাদেঁ ফেলে আমার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী নাসিমা বেগমকে জোরপূবর্ক তুলে নিয়ে বিয়ে করে।
বিয়ের পর দুই মাস পরে নাসিমা পুনরায় আমার বাড়ি চলে আসলে ওই যুবলীগ নেতা হুমকির মুখে জিম্মি করে পুনরায় তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। দুলাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, নাসিমা বারবার আমার বাড়িতে চলে আসতে চাইলে সে (মাসুম) তাকে জোরপূর্বক আটকে রাখে। পরে তাকে হত্যা করে লাশকে গুম করার জন্য সে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ‘পালিয়ে গেছে’ বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে।
নিহতের ছোট ভাই সোলাইমান বলেন, আমার বোনকে হত্যা করে ওই (যুবলীগ) নেতা হত্যাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য তার নামে মিথ্যা অপবাদ (পর পুরুষের হাত ধরে চলে গেছে) রটিয়ে দেন।
নিহতের ছোট ভাই সোলাইমান বলেন, আমাদেরকে থানায় মামলা না করার জন্য বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার আকুল আবেদন, আমি আমার বোনের হত্যাকারীর বিচার চাই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৮ নভেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত ওই যুবলীগ নেতার বাড়িতে পিঠা উৎসব চলে। পরে বন্ধুদের নিয়ে নাসিমাকে হত্যা করে মসজিদের বাথরুমের সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয়। মসজিদের ইমাম সাহেব ঘটনাটি আঁচ করায় তাকে হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করে।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, সেনপাড়া গ্রামের সোবাহানের পালিত কন্যা নাসিমাকে প্রতিবেশী দুলালের সঙ্গে বিয়ে দেয়। দুলালের সঙ্গে ঘর করে নাসিমা দুই সন্তানের মা হন।
অন্যদিকে তার স্বামী দুলালের বন্ধু মাসুম আকন্দ জমি ব্যবসা করতে মাসুমকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোন দেয়। পরে ওই টাকা নিয়ে উভয়ের মাঝে বিরোধের সৃষ্টি হলে তৎকালীন ওসি কালীগঞ্জ থানায় নিয়ে ৩টি জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে মাসুম আকন্দ স্বীকারোক্তি দেয়। ওই টাকা উদ্ধারের জন্য নাসিমা যুবলীগ নেতা মাসুমের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করতে গিয়ে ফেঁসে যায়। পরে দুলালকে ছেড়ে মাসুমকে বিয়ে করেন।
এলাকাবাসী জানায়, এলাকায় মাসুমের বাড়ির ৩শ গজ উত্তর পাশে মসজিদের বাথরুম থেকে দুর্গন্ধ আসছিল। স্থানীয় এক মহিলা শুকনো পাতা কুড়াতে গিয়ে কয়ার ভেতরে কাপড় দেখতে পায়। এলাকাবাসীকে জানালে বুধবার সকালে বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুইপার এনে ঢালাইকৃত সিমেন্টের আস্তর ভেঙে নাসিমাকে হাত-পা বাঁধা ও লেপদিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় মৃতদেহটি উদ্ধার করে।