পাতার বাঁশির সুরের স্রষ্টা’র বিদায়
নেত্রকোনা প্রতিনিধি : পাতার বাঁশির সুরের স্রষ্টা বারী সিদ্দিকী চলে গেলেন বড় অবেলায়। এই সেই বারী সিদ্দিকী যিনি স্কুলজীবন থেকেই বাঁশি বাজিয়ে সুরের জাদু বিলাতেন। বারী দুটি পাতা একত্র করে বাঁশি বাজিয়ে সুমিষ্ট সুর তুলতে পারতেন।তার সুরে ছাত্র ও মানুষজন আকৃষ্ট হতো।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান বিমল জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান দেশবরেণ্য শিল্পী বারী সিদ্দিকী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামে। এখানেই ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী।
বারী সিদ্দিকীর বন্ধুরা জানান, ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর একসঙ্গে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন। তাঁরা ১৯৭৯ সালে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এসএসসি ও সাতপাই এলাকায় নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
এ সময় বারী তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ইংরেজি জানতেন এবং পরীক্ষায় ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেতেন। কখনো ৮৫ নম্বরের নিচে পেতেন না। ফলে তাঁর সহপাঠী ও ওপরের ক্লাসের অনেকেই বারীর কাছে ইংরেজি পড়তেন।
বারী সিদ্দিকীর বন্ধুরা জাতিরকন্ঠকে জানান, বারী স্কুলজীবন থেকেই দুটি পাতা একত্র করে বাঁশি বাজিয়ে সুমিষ্ট সুর তুলে ছাত্র ও মানুষদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভাবুক প্রকৃতির বারী বন্ধুবৎসল ছিলেন।
তিনি নিজ শহর নেত্রকোনায় এলেই বন্ধুসহ পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা করতেন, খবর নিতেন। নিজ জেলায় খুব কম আসরেই গান গেয়েছেন। তবুও গানের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলতেন, বন্ধুদের নাম বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন। মঞ্চ থেকে নেমেই জড়িয়ে ধরতেন।
যে গানটি গাইতেন, তা শ্রোতাদের গানের পেছনের ইতিহাস, মর্মার্থ বোঝাতেন। তাঁর বন্ধুদের দাবি, সমকালীন বাউল সাধকদের মধ্যে বারী সিদ্দিকীই প্রকৃত বাউল সাধক। তিনি নেত্রকোনার বিশিষ্ট বাউল রশিদ উদ্দিন, জালাল খাঁ, উকিল মুন্সিসহ বিভিন্ন সময়ের বাউল সাধক ও তাঁদের রচিত গান গেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
শিল্পী বারী সিদ্দিকীর আপনজন নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা শামছুর রহমান বলেন, ‘বারী ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল সদর উপজেলা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তাঁর নিজ গ্রাম কারলিতে ২৫০ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা আশ্রম “বাউলবাড়িকে” নিয়ে। তিনি প্রায়ই বলতেন, এই বাউলবাড়িতে দেশ-বিদেশের বাউলদের সম্মিলন ঘটবে।
ছোট বাচ্চারা দৌড়াবে, গান গাইবে, দিনের পর দিন বাউলগান চলবে, আলোচনা হবে। তাই এমন নিরিবিলি পরিবেশে এই বাউলবাড়ি গড়েছিলেন বুকভরা আশা নিয়ে।’বারী সিদ্দিকীর মরদেহ বেলা তিনটায় নেত্রকোনায় পৌঁছায়। পরে সরকারি কলেজমাঠে রাখা হয়। সেখানে নেত্রকোনার সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় ওই স্থানে তৃতীয় জানাজা হয়। সেখান থেকে নিজ গ্রামের বাড়ি কারলিতে দাফন করা হয় বারী সিদ্দিকীকে।