• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পাটের তৈরী শাড়ি ব্লেজারে বিশ্বমাত!


প্রকাশিত: ৬:০৭ পিএম, ৬ মার্চ ১৮ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৩৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি :  উন্নতমানের পাটপণ্য তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাটের তৈরী শাড়ি ব্লেজার রপ্তানি করে বিশ্বমাত করতে হবে। পাট পণ্যের 06-03-18-PM_National Jute Day-22বাজার বাড়াতে উন্নত পাটপণ্য তৈরিতেও  গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রীর। মঙ্গলবার জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাটের বাজার এখন খুলে গেছে। যতই উন্নতমানের পণ্য তৈরি করতে পারব, ততই আমাদের বাজার বৃদ্ধি পাবে।”“কৃষি ও শিল্পপণ্য হিসেবে যে বহুমুখী ব্যবহার; এটাই আমাদের জন্য বিরাট সম্পদ।”দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বহুমুখী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধন করেন।

পাটের সুতায় তৈরী পাটের শাড়ি এবং পাটের স্যান্ডেল পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের সময়ও পাটের হ্যান্ডব্যাগ দেখিয়ে বলেন, “এটা কিন্তু কোনো বিদেশি ব্র্যান্ড না, এটা বাংলাদেশের পাট দিয়ে তৈরি।”“আমাদের বোনরা আছে- তাদের দেখাই। এখানে বোনরা আছে, তারা ব্যবহার করবে। আর, ছেলেরা আছে, তারা কিনে বউকে একটা উপহার দেবে।”

দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় পাট দিবসের অনুষ্ঠানের মূলমঞ্চ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় সাজানো হয়। মঞ্চের মাঝে বিশাল একটি নৌকার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। ওই নৌকার ওপরই টেবিল রাখা হয়। আর টেবিলটি ঢেকে দেওয়া হয়েছিল পাটের তৈরি কাপড়ে।মঞ্চে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী পাটসুতার কাপড়ের তৈরি নীল রঙের ব্লেজার পড়েছিলেন।

পাটের তৈরী শাড়ি, স্যান্ডেল পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাটছেন পাটের কার্পেটের ওপর দিয়ে, পাটের তৈরী ব্লেজার পড়েছেন মন্ত্রী ও সাংসদরা (নীল রং)
পাটের তৈরী শাড়ি, স্যান্ডেল পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাটছেন পাটের কার্পেটের ওপর দিয়ে, পাটের তৈরী ব্লেজার পড়েছেন মন্ত্রী ও সাংসদরা (নীল রং)

কৃত্রিম তন্তুর চাহিদা এক সময় বৃদ্ধি পেলেও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এখন পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন সকলে সচেতন। পরিবেশবান্ধব পণ্য তারা চায়।“পাট সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। পাট একাধারে কৃষিপণ্য অপরদিকে শিল্পে ব্যবহার হয়। এর চাহিদা কখনো শেষ হতে পারে না।” পাটের জিনম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের কথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাটের ওপর আমাদের যে অধিকারটা থাকে; সেটাও আমরা নিশ্চিত করেছি।”

গবেষণার ফলে অনেক ধরনের পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।পাট দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির ওপর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “একটা দুইটা পণ্যের ওপর নির্ভর করতে পারি না। পাটের বহুমুখীকরণ করতে হবে। পাটের রপ্তানি বাড়াতে হবে। নতুন নতুন বাজার ধরতে হবে।”প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে মির্জা আজম গত দুই বছরেও পাটকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে ঘোষণা না দেওয়া বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “দুই বছর আগে পাটকে কৃষি পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার ঘোষণা আপনি দিয়েছিলেন। আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় এই পণ্যকে প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেনি। তারা স্বীকার করে; পাট প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য। কিন্তু, এটাকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে তাদের আন্তরিকতার অভাব দেখছি।”

অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর উপস্থিতির কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে তিনি বলেন, “অর্থ সচিব এখানে উপস্থিত আছেন, তাকে নির্দেশনা দিয়ে যাবেন যেন অতিসত্ত্বর পাটকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তাহলেই পাটের সোনালী স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।”এর আগে সাবের হোসেন চৌধুরী অর্থ মন্ত্রণালয়ের যথাযথ সহায়তা না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, “পাট ক্রয়ের জন্য যে অর্থ ও সময় আমাদের দরকার; তা কখনোই সঠিকভাবে আমরা পাই না। সে কারণে আমরা যে পাট ক্রয় করি; তার মান নিশ্চিত করতে পারি না এবং মূল্য অনেক বেশি হয়।”

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমাদের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের মধ্যে ধারণা এই পাটের কোনো সম্ভাবনা নাই। বিজেএমসিকে কখনোই লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না। তিন বছরে যে লোকসান ছিল ৮০০ কোটি টাকা, সেটাকে কমিয়ে ৪০০ কোটিতে নিয়ে এসেছি। এই লোকসান কোনো বাণিজ্যিক লোকসান নয়। আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজেএমসির শ্রমিকদের যে বেতন কাঠামো তাদের আমরা নিশ্চিত করি; সেটা বেসরকারি যে সংস্থাগুলো আছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ।”

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাসে পাঁচ হাজার ১০০ কোটি টাকা মজুরি দেওয়া হলেও বিজেএমসির প্রতিষ্ঠানগুলোতে এগারো হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।বাংলাদেশের পাটকলগুলোর উৎপাদনের সক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “আমাদের মিলগুলো পঞ্চাশের দশকে স্থাপিত হয়েছিল। সেই মিলের সক্ষমতা কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। সঠিক সময়ে আমরা অর্থ পাই না।”

পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে খুলনায় চারটা এবং সিরাজগঞ্জে একটা বন্ধ পাটকল চালুর কথা বলেন।বেসরকারি খাতকে সব থেকে বেশি সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকারিভাবে করলে কিছুদিন ভালো চলে.. তো সরকারি বেতন তো পেয়েই যাবে, কাজ করলেই বা কী আর না করলেই বা কী.. এই মানসিকতাটা থাকা উচিত না।”

শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই শিল্পটা আপনাকে সবরকম জীবন-জীবিকার সহায়তা দিচ্ছে। সে শিল্পটাকে বাঁচাতে হবে, তার উৎপাদন বাড়াতে হবে।”সরকারি পাটকলের পুরনো যন্ত্রপাতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যন্ত্রপাতিগুলো অত্যন্ত পুরনো। এই মেশিনারিজগুলো সব বদলাতে হবে। নতুন মেশিনারিজের ব্যবস্থা করতে হবে।”“আপনারা তো জানেনই, অর্থমন্ত্রীর কাছে অর্থ চাইতে গেলে তো একটু বাধা দেবেই।”

তিন হাজার কোটি টাকা দেনা মিটিয়ে সরকারি বন্ধ পাটকল পুনরায় চালুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তবে, তিনি একটা কাজ করে দিয়েছেন, এই পাটকলগুলোর তিন হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ঋণ ছিল। এই তিন হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের টাকা মওকুফ করে দেওয়া- এটা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমরা করে দিয়েছি। বিরাট বোঝা ছিল, এই বোঝা আমরা লাঘব করে দিয়েছি।“এখানে যে একেবারে কৃপণতা করা হয়, তা নয়। সব দায়দেনা মুক্ত করে তারপর কিন্তু পাটকলগুলো আমরা চালু করে দিয়েছি। এটা সচল রাখার দায়িত্ব; যারা দায়িত্বে আছেন তাদের, শ্রমিক ও কর্মচারীদের।”

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী আশা করে বলেন, “সমস্যা যা দেখা দেয়; আমরা তা সমাধান করব।”পাট উৎপাদন, পাট সংগ্রহ ও পাট সংরক্ষণে আধুনিকতার ওপর গুরুত্বারোপও করেন প্রধানমন্ত্রী।‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০’ বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

ইতোমধ্যে ১৭টি পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পাট দিবস উপলক্ষ্যে দুই বিভাগে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম তিনজন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।এছাড়াও পাটের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য ১১ ক্যাটাগরিতে ১২ জনের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার তুলে দেন।