পাকিস্তান বিশ্বাসঘাতক-১৯৫ পাক আর্মির বিচার হবে যেভাবে-
প্রীতম: আগামী পৃথিবীকে সংঘাত মুক্ত রাখার জন্যই ১৯৫ পাকিস্তানীর বিচার করতে হবে। এটা এখন বিশ্ববাসীর সঙ্গে সারা-বাংলাদেশের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশের তদন্ত ১৯৫ জনেই থেমে থাকে এবং এইসব যুদ্ধাপরাধীকে ১৯৭৩ সালের ২৮ অগাস্ট স্বাক্ষরিত দিল্লী চুক্তির অধীনে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
এই টানাপোড়েনের একটি আপাত সমাধান হয় ৯ এপ্রিল ১৯৭৪ ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ।তবে,পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নমনীয় হতে বাধ্য হলেও বাংলাদেশ এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি থেকে সরে আসেনি।ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তিতে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের উদ্যোগেই বিচারের ব্যাপারে সম্মত হয় পাকিস্তান। বিশ্বাসঘাতক রাষ্ট্র পাকিস্তান এই চুক্তি রক্ষা করেনি।
চারজন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী – ( বামদিক থেকে লাল
পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেভাবে হতে পারে- দাগ চিহ্নিত ) এডমিরাল এম শরিফ,ব্রিগেডিয়ার সৈয়দ শাহ আবুল কাসিম,লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ খান নিয়াজি,ব্রিগেডিয়ার আতা মোহাম্মদ খান মালিক। সূত্র:পাকিস্তানি জেনারেলদের মন বাঙালি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ – মুনতাসীর মামুন।
গণহত্যা,যুদ্ধাপরাধ,মানবতাবিরোধী অপরাধ-
গণহত্যা,যুদ্ধাপরাধ,মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের যতগুলি প্রকরণ সংজ্ঞায়িত হয়েছে এ পর্যন্ত,তার প্রায় সবকটিই সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে,বাংলাদেশে।বিংশ শতাব্দির নৃশংসতম এই গণহত্যার মূল রূপকার পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং অক্সিলিয়ারি ফোর্স অর্থাৎ শান্তি কমিটি,রাজাকার বাহিনী,আলবদর বাহিনী,আলশামস বাহিনী,মুজাহিদ বাহিনী ইত্যাদি।অক্সিলিয়ারি ফোর্সের যেসব সদস্য যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল তাদের বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ।ইতিহাসের বাকি-বকেয়া পরিশোধের এই অঙ্কে খুব স্বাভাবিকভাবে যে হিসাবটি সামনে চলে আসে তা হলো গণহত্যার নেতৃত্বদানকারী পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটি।কথিত আছে,১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত ত্রিপক্ষীয় যুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি ঘটেছে ।আসলেই কি তাই?
ফ্লাশব্যাক–
একটু ফ্লাশব্যাকের সাহায্য নেয়া যাক।১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হবার পরপরই সবধরণের যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ।বাঙালী সহযোগীদের বিচারের উদ্দেশ্যে দালাল আইন প্রনয়ন করা হয়।পরবর্তীতে সাধারণ ক্ষমার অধীনে বহুসংখ্যক দালাল মুক্তি পেলেও গুরুতর অপরাধসমূহ অর্থাৎ হত্যা,ধর্ষণ,লুণ্ঠন,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির সাথে জড়িতদের বিচার অব্যাহত রাখা হয়।এর পাশাপাশি পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজও চলতে থাকে।প্রথম পর্যায়ে ১৫০ জন এবং পরে আরো ৪৫ জন পাকিস্তানি সেনাসদস্যের বিরুদ্ধের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়।১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এই প্রসঙ্গে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে।এই প্রেস রিলিজে পূর্বোক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাংলাদেশেই ( ঢাকায় ) সম্পন্ন করার ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হয়।
সূত্র:The Weaknesses in the International Protection of Minority Rights – Javaid Rehman (pg-261)
পুরো প্রক্রিয়াটির সাথে সমান্তরাল ভাবে এই বিচারের বিরোধিতা চালিয়ে যায় পাকিস্তান এবং চিন।জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রশ্নে চিনের ভেটো দানের ক্ষমতাকে কাজে লাগায় পাকিস্তান,এর সাথে যুক্ত হয় পাকিস্তানে আটকে থাকা বাংলাদেশী নাগরিকদের ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারটি।পাকিস্তান হুমকি দেয় – যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে আটকে থাকা বাংলাদেশীদেরও বিচার করা হবে।সেই সাথে জাতিসংঘের সদস্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও চাপে রাখা হয়।( বিস্তারিত দেখুন এখানে এবং এখানে ) এর ফলাফল দুটি – যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশের তদন্ত ১৯৫ জনেই থেমে থাকে এবং এইসব যুদ্ধাপরাধীকে ১৯৭৩ সালের ২৮ অগাস্ট স্বাক্ষরিত দিল্লী চুক্তির অধীনে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।এই টানাপোড়েনের একটি আপাত সমাধান হয় ৯ এপ্রিল ১৯৭৪ ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ।তবে,পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নমনীয় হতে বাধ্য হলেও বাংলাদেশ এসব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবি থেকে সরে আসেনি।ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তিতে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে নিজেদের উদ্যোগেই বিচারের ব্যাপারে সম্মত হয় পাকিস্তান। বিশ্বাসঘাতক রাষ্ট্র পাকিস্তান এই চুক্তি রক্ষা করেনি।
বিচারের সুযোগ এবং যৌক্তিকতা
পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে পূর্বোক্ত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ১৩ এবং ১৫ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে।ধারা দুটি এখানে উদ্ধৃত করা হলো –
13. The question of 195 Pakistani prisoners of war was discussed by the three Ministers in the context of the earnest desire of the Governments for reconciliation, peace and friendship in the sub-continent. The Foreign Minister of Bangladesh stated that the excesses and manifold crimes committed by those prisoners of war constituted, according to the relevant provisions of the UN General Assembly resolutions and international law, war crimes, crimes against humanity and genocide, and that there was universal consensus that persons charged with such crimes as 195 Pakistani prisoners of war should be held to account and subjected to the due process of law. The Minister of State for Defense and Foreign Affairs of the Government of Pakistan said that his Government condemned and deeply regretted any crimes that may have been committed.
15. In the light of the foregoing and, in particular, having regard to the appeal of the Prime Minister of Pakistan to the people of Bangladesh to forgive and forget the mistakes of the past, the Foreign Minister of Bangladesh stated that the Government of Bangladesh had decided not to proceed with the trials as an act of clemency. It was agreed that the 195 prisoners of war might be repatriated to Pakistan along with the other prisoners of war now in the process of repatriation under the Delhi Agreement.
প্রথমত,এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের উপর থেকে বাংলাদেশের দাবি ছেড়ে দেয়ার কথা কোথাও বলা হয়নি।লক্ষ্য করুন,১৫ ধারায় এসব যুদ্ধাপরাধীদেরকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু ক্ষমা করার কথা বলা হয়নি।Forgive and forget শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে যেটি বলা হয়েছে সেটা সামগ্রিক অর্থে প্রযোজ্য এবং এই ১৯৫ যুদ্ধাপরাধী তার অধীনে পড়েনা।বরং এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব পাকিস্তানের উপরেই দেয়া হয়েছে,বাংলাদেশ যে দাবি থেকে সরে এসেছে সেটা হলো বিচারের কাজ বাংলাদেশেই সম্পন্ন করার দাবি।বিচারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান এর আগে ১৩ ধারাতেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।কাজেই পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তোলার যৌক্তিক অবস্থান বাংলাদেশের আছে।
দ্বিতীয়ত,এই ক্ষেত্রে চুক্তিভঙ্গ ঘটেছে এবং চুক্তিভঙ্গের জন্য দায়ী পক্ষটি পাকিস্তান।ভিকটিম হিসেবে বাংলাদেশ যেহেতু বিচারের যৌক্তিক দাবিদার কাজেই বিষয়টি নিস্পত্তি হয়েছে এরকম ধারণা ভিত্তিহীন।দীর্ঘদিন পার হওয়ার পরেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বিচারের জন্য কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি,একমাত্র উদ্যোগ অর্থাৎ হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট কখনো আলোর মুখ দেখেনি।যুদ্ধাপরাধীরা বিভিন্নভাবে পাকিস্তানের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।যেকোন চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভঙ্গ করা হলে সেই চুক্তি কার্যকরিতা হারিয়েছে বলে গন্য হতে পারে।কাজেই, পাকিস্তান চুক্তির মর্যাদা রক্ষা করেনি এটা ধরে নিয়ে বাংলাদেশ যদি ১৯৭৪ পুর্ব সময়ের অবস্থানে ফিরে যায় অর্থাৎ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় তাহলেও বাংলাদেশের যৌক্তিক অবস্থানটি অটুট থাকে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহযোগিতার কমতি কখনোই ছিল না।চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরেও বাংলাদেশ তথ্য প্রমাণ সরবরাহ করছে,বিচারের ব্যাপারে পাকিস্তানকে তাগাদা দিয়ে গেছে। হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে তা স্বীকার করা হয়েছে –
During his meeting with the Prime Minister of Pakistan at Dacca on Friday, the 28th of June 1974, the Bangladesh Prime Minister Sh. Mujibur Rehman, complained inter-alia that Maj Gen Rao Farman Ali had written in his own hand on Government stationery that “The green of East Pakistan will have to be painted red.” Sh. Mujibur Rehman promised to supply a photostat copy of this document to the Government of Pakistan.” The same has since been received and is added to annexure “A” to this chapter.
এখান থেকে তিনটি সিদ্ধান্তে আসা যায় –
১)বাংলাদেশ কখনোই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি থেকে সরে আসেনি
২)বিচারের প্রশ্নে,পাকিস্তানের হাতে দায়িত্ব দেয়ার পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যা কিছু করার ছিল বাংলাদেশ করেছে
৩)পাকিস্তান তাদের দায়িত্ব পালন করেনি
এখন দুটি বিষয় বিবেচ্য।প্রথমত যুদ্ধাপরাধ,গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বিশ্বশান্তির জন্য অপরিহার্য।জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন অনুসারে প্রতিটি রাষ্ট্রই এই ব্যাপারে দায়বদ্ধ।সেই সূত্রে বিচার প্রার্থী হিসাবে বাংলাদেশের সুবিচার প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে,অন্যদিকে পাকিস্তানেরও দায় রয়েছে বিচার সম্পন্ন করার।পাকিস্তান যেহেতু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না সেহেতু বাংলাদেশের অধিকার রয়েছে চাপ প্রয়োগ করার।
দ্বিতীয়ত যুদ্ধাপরাধ কখনো তামাদি হয় না,কাজেই বিচারের দাবিও কখনোই অপ্রাসঙ্গিক হবেনা।
যেভাবে হতে পারে বিচার
বিচারের দায় প্রধানত পাকিস্তানের উপরেই বর্তায়।১৯৭৪ এর চুক্তির উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে দাবি জানাতে পারে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য।বাংলাদেশে যেহেতু বাঙালী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে তাই বিশ্ব মানবতার স্বার্থেই বাংলাদেশ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারেও এগিয়ে আসতে পারে।সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যৌক্তিক অবস্থান হবে বিচারহীনতা নিরসনের পক্ষে।এর পাশাপাশি যেহেতু পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে চুক্তিবদ্ধ তাই বাংলাদেশ এই বিচারের কাজ শুরু করার জন্য সব ধরণের অধিকার সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ।
ঠিক একই যুক্তিতে বাংলাদেশ নিজেই এই বিচারের কাজে হাত দিতে পারে।এই ক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে চুক্তি পালনে পাকিস্তানের অসহযোগিতা,অনাগ্রহ এবং উদাসীনতা।যেহেতু পাকিস্তান চুক্তি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে কাজেই ‘৭৪ পুর্ব অবস্থানে ফিরে যাবার অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে।১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আইনেও এই বিচারের সুযোগ রয়েছে –
3(1) A tribunal shall have the power to try and punish any individual or group of individuals, or any member of any armed, defence or auxiliary forces, irrespective of his nationality, who commits or has committed, in the territory of Bangladesh, whether before of after the commencement of this Act, any of the crimes mentioned in subsection
এর পাশাপাশি জাতিসংঘও উদ্যোগ নিতে পারে বিচারের।এক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি রয়েছে –
১)নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ট্রাইবুন্যাল গঠন করে বিচার করা যেতে পারে।এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে রুয়ান্ডা এবং সাবেক ইউগোশ্লাভিয়ার ক্ষেত্রে।নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ইউগোশ্লাভিয়ায় যেসব মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যা সংঘটিত তার বিচারের জন্য ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুন্যাল ফর দ্যা ফরমার ইউগোশ্লাভিয়া ( আইসিটিওয়াই ) । এটি গঠন করতে জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ৮২৭ পাশ করে যা জাতিসংঘ চার্টারের পঞ্চম অধ্যায়ের অধীনে কার্যকরী।এই ট্রাইবুনালের অধীনে বিচার চলাকালে স্লোবদান মিলোসেভিচ এর মৃত্যু হয়।ভ্লাদিমির দর্দেভিচ,র্যাঙ্কো চেসিক,মিরোস্লাভ ব্র্যালোর মতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আইসিটিওয়াই এর অধীনেই সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুন্যাল ফর দ্যা ফরমার ইউগোশ্লাভিয়া অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
২)জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আদালতে বিচার হতে পারে।ক্যাম্বোডিয়ার খেমার রুজ গণহত্যার অন্যতম হোতা কাং কেক লেভের বিচার এধরণের একটি ট্রাইব্যুনালের অধীনে হয়েছে। এক্সট্রাঅর্ডিনারি চেম্বারস ইন দ্যা কোর্ট অফ ক্যাম্বোডিয়া ( ইসিসিসি ) নামে পরিচিত এই ট্রাইবুনালটি জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গঠিত একটি জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিশ্র আদালত।এই ট্রাইবুন্যালের বিচারক যারা হবেন তাদের মনোনিত করবেন সুপ্রিম কাউন্সিল অফ ম্যাজিস্ট্রেসি অফ ক্যাম্বোডিয়া।চূড়ান্ত সিধান্ত গ্রহণ করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব।পুরো প্যানেলটি স্বদেশী এবং বিদেশী দুই ধরণের বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত। সূত্র : উইকিপিডিয়া
পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই দুটি পদ্ধতিতেও হতে পারে।জাতিসংঘ চার্টারের পঞ্চম অধ্যায় অনুসারেই বাংলাদেশ বিচারের জন্য আবেদন করতে পারে।দ্বিতীয় উপায়েও বিচার সম্ভব।
পাপমোচনের দায়
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও গত শতাব্দীর সবচেয়ে নির্মম গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা সম্ভব হয়নি এখনো।এই লজ্জার দায়ভার বাংলাদেশের একার নয়।পাকিস্তান এবং চিনের অসহযোগিতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।দায় এড়াতে পারেনা জাতিসংঘও। গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘ যেখানে দায়বদ্ধ সেখানে ১২ অক্টোবর ১৯৭৩,জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এস এ করিমকে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছিলেন ,তিনি আশা করেন বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করেই স্বীকৃতির প্রশ্নে পাকিস্তানের সাথে সমঝোতায় আসতে পারবে –
The Secretary-General said that the Delhi Agreement and the measures to resolve the humanitarian problems, which followed upon the Agreement, were a most encouraging development. The only stumbling block which now remained to Bangladesh’s entry into the United Nations was the case of the 195 Pakistani prisoners of war accused of war crimes. He noted that this matter had been deliberately left aside in the Delhi Agreement. He hoped very much that the Prime Minister of Bangladesh would, in one way or another,find a way to resolve this issue without bringing the prisoners to trial.
৪৫ বছর পর বাংলাদেশ পাপমোচনের উদ্যোগ নিয়েছে।বাঙালী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে সাথে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নটিও তাই সামনে আসা উচিৎ।বাংলাদেশ এই গণহত্যার ভিকটিম বলেই শুধু নয়,বরং আগামী দিনের পৃথিবীকে সংঘাত মুক্ত রাখার জন্যই এই বিচার হওয়া প্রয়োজন।আধুনিক বিশ্বে বিচার কোন প্রতিশোধ্মূলক উপায় নয়,বরং একটি সহনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধের বিলুপ্তি সাধনই আধুনিক বিচার প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য।যুদ্ধাপরাধ,গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ নির্মূল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সচেতনতাও এখন অনেক বেশি।কাজেই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিকতা কিংবা প্রয়োজনীয়তা সেদিনও ছিল,আজও আছে।এই মুহূর্তে যদিও বাঙালী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দিকেই অখণ্ড মনযোগ দিতে হবে,পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যাপারটি সামনে আনলে যেটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে নানা কারণেই ।তবুও মাথায় রাখতে হবে,বিষয়টি নিস্পত্তি হয়নি,বরং বিচার চাওয়ার ন্যায্য অধিকার আমাদের রয়েছে।এর জন্য প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রাপ্তির বিষয়েও সুবিধাজনক সময়ে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।আন্তর্জাতিক সমর্থন যদি পর্যাপ্ত নাও পাওয়া যায়,তবুও জোর গলাতেই জানিয়ে দিতে হবে – ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত এই অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে যারা তাদের বিচারের দাবি থেকে আমরা সরে আসিনি,কখনোই সরে আসব না।