‘পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য হলে ভারতের পাশে থাকবে বাংলাদেশ’
সচিবালয় প্রতিনিধি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য হলে ভারতের পাশে থাকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইস্যুতে সংলাপে প্রধান অতিথির ভাষণে এ মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিএনআরএফ-এর নিজস্ব কার্যালয়ে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের পুরনো ও বিশ্বস্ত বন্ধু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা তা কোনওদিন ভুলবো না। তাই ভারত যদি কারও দ্বারা আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের পাশে থাকবে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সীমানা নেই। পাকিস্তানকে আমরা ৭১ সালে পরাজিত করে তাড়িয়ে দিয়েছি। তাই তাদেরকে নিয়ে আমরা ভাবতে চাই না।
তাদের নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথাও নাই। তাছাড়া দেশটি সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছে। যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত বিচার বাংলাদেশের নিজস্ব আইনেই হয়েছে। এ বিষয়ে দেশটির আচরণে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ কারণে আমরা সার্ক শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেইনি।
তিনি বলে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গেই কাজ করবে। ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমাদের পাকা কথা হয়েছে। তিনি বলেন,‘ আমি যখন জুলাই মাসে ভারত সফর করি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সেভাবেই আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন, তুমি তোমার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ একা নয়, ভারত সঙ্গে আছে।’
অনুষ্ঠানে ভারত থেকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে চিহ্নিত আসামিদের ফেরত আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে আমাদের। সে চুক্তি অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজ করছে।
তাহমিদকে কেন জামিন দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, তাহমিদের কাছ থেকে আমাদের গোয়েন্দারা উল্লেখযোগ্য কোনও তথ্য পায়নি। তারপরেও যখনই তাকে প্রয়োজন হবে তখনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তাহমিদকে জামিন দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশের আদালত স্বাধীন, তাই তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও এখতিয়ার নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা তো কোনও অপরাধ করেনি। তারা যদি বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনে সাধারণ নাগরিকের মতো জীবনযাপন করে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কেন অবিচার করবো। তবে তারা যদি বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন-কানুন ভঙ্গ করে তাদের অভিভাবকদের বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং কোনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে। সীমান্তে একটি লোক মারা যাক তা আমরা চাই না।
এসময় সাংবাদিকরা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন গত কয়েক বছরে সীমান্তে ৭৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করা হলেও ভারতের একজনও মারা যায়নি। ভারতের এ ধরনের আচরণকে সমর্থন করেন কিনা?
এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক না। বাংলাদেশিরা মারা গেলেও ভারতের একজনও মারা যায়নি সেটাও ঠিক না। তবে আমরা বলতে চাই আমরা সীমান্তে একটি হত্যাকাণ্ডও চাই না। এটা আমরা সমর্থনও করি না। আমরা সীমান্ত হত্যাকাণ্ড জিরোতে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। এজন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে।
তিনি বলেন, অনেক সময় অতি উৎসাহী হয়ে বিএসএফ সদস্যরা এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। এগুলো যাতে না তারা না ঘটায় সেজন্য দু’পক্ষে আলাপ আলোচনা চলছে।
অনুষ্ঠানে পুলিশ বাহিনীতে হেলিকপ্টার সংযোজন প্রসঙ্গ উঠে এলে তিনি বলেন, সন্ত্রাস দ্রুত নির্মূলে আমরা পুলিশ বাহিনীতে হেলিকপ্টার সংযোজন করতে চাই। সেক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে রকম বরাদ্দ দেওয়া হবে, যে রকম টাকা ছাড় পাবো সেভাবেই হেলিকপ্টার কিনবো।
অনুষ্ঠানে কোস্টগার্ডের জাহাজ কেনা ও জলসীমা পাহারা দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের জলসীমার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। তাই এই সুবিস্তৃত জলসীমা পাহারা দেওয়া কোস্টগার্ডের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ । তাই সরকার কোস্টগার্ডের জন্য চারটি অত্যাধুনিক জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে দুটি জাহাজ এ বছরেই আসছে। এগুলো কোস্টগার্ডের বহরে যুক্ত হবে। এ চারটি জাহাজ পেলে আমাদের কোস্টগার্ড আধুনিক হবে এবং বিশ্বের যে কোনও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে তা সমান তালে সমুদ্রসীমা পাহারা দিতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিদেশে কর্মরত ১ কোটি ৫১ লাখ প্রবাসীকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক প্রবাসীকে আমরা এমআরপি দিয়েছি। একজন বিদেশিও এমআরপির অভাবে দেশে ফেরত আসেননি।’
বিএসআরএফ-এর সভাপতি শ্যামল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা একেএম শামীম চৌধুরী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।