পাকিস্তানের বিতর্কিত সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ’র নয়া ধান্ধা !
আন্তজার্তিক ডেস্ক রিপোর্টার : রাজনীতিতে নামি নামি করছেন তিনি। টিভি চ্যানেল বোল এর সাক্ষাতকারে সেটাই প্রমাণ করে।সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের বিতর্কিত সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ’র নয়া রাজনীতির পাঠ দিয়েছেন ! জানা গেছে, পাকিস্তানের বিতর্কিত সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফ সম্প্রতি একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন।
টেলিভিশনের পর্দায় মি: মুশাররফ সে অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন। পাকিস্তানের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘বোল’ মি: মুশাররফের সাক্ষাৎকার ধারাবাহিকভাবে কয়েক খণ্ডে প্রচার করছে।
সে সাক্ষাৎকারে তিনি আমেরিকার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরির উপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি পাকিস্তানের বর্তমান নির্বাচিত সরকার এবং ভারতের কড়া সমালোচনা করেছেন। টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসব বিষয়ে মন্তব্য করার কারণে পাকিস্তানের ভেতরে অনেকই মি: মুশাররফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নানা ধরণের অনুমান করছেন।
২০১৩ সালে জেনারেল মুশাররফ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। নির্বাচনে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন। ফলে তখন তিনি দেশ ছেড়ে দুবাই চলে যান।
অনেকে ধারণা করছেন, মি: মুশাররফের যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল সেটি পূরণের জন্য তিনি আবারো তৎপরতা শুরু করেছেন – যার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আবির্ভূত হওয়া।
মি: মুশাররফ যে অনুষ্ঠানে আসছেন সেটি প্রতি রবিরার প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটির নাম ‘সাব সে পেহেলে পাকিস্তান’ অর্থাৎ ‘সবার আগে পাকিস্তান’। মি: মুশাররফ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তার প্রধান শ্লোগান ছিল ‘সবার আগে পাকিস্তান’।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা মি: মুশাররফকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে তার মতামত জানতে চান। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক এমনকি পরিবেশগত বিষয়। মি: মুশাররফ দুবাইতে বসেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।
পাকিস্তানে এ ধরনের অনুষ্ঠান নতুন কিছু নয়। সাধারণত কিছু টেলিভিশন চ্যানেল নানা বিষয়ে মন্তব্য এবং বিশ্লেষণের জন্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সাবেক কোন সরকার প্রধানকে এ ধরনের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করার নজীর এটাই প্রথম।যে টেলিভিশন চ্যানেলটিতে এ অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে, সে চ্যানেলটি সেনাবাহিনী-পন্থী, ভারত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত।তারা ঘোষণা করেছে যে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারীকে নিয়েও এ ধরনের অনুষ্ঠান করবে।
এ অনুষ্ঠানে মি: মুশাররফ বলেছেন, পাকিস্তানের একটি ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সেজন্য আমেরিকার সাথে ভালো সম্পর্ক দরকার। এছাড়া ইসরায়েলকে চিরশত্রু হিসেবে গণ্য করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাবেক এ সামরিক শাসক মনে করেন, পাকিস্তানের জন একটি বড় হুমকি হলো ভারত। তবে সে হুমকিকে সামরিক উপায়ে পরাস্ত করা যাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পাকিস্তানের বর্তমান সরকার যেভাবে জঙ্গিদের মোকাবেলা করছে সেটির কড়া সমালোচনা করেছেন মি: মুশাররফ। তিনি বলেন তারা শিকড় না উপড়ে শুধু ডাল-পালা ছাটাই করছে। রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য পাকিস্তানের বর্তমান সরকার বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে রাখছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মি: মুশাররফের এ ধরনের মন্তব্য শুনে অনেকেই অবাক হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তার বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ ছিল। গবেষক এবং লেখক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ” তার ( মুশাররফের) রাজনৈতিক আশা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেকে এখনো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখাতে চাইছেন।”
২০০৮ সালে মি: মুশাররফ ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। ২০১৩ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে এসে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও সেটি সম্ভব হয়নি। বেনজীর ভুট্টো এবং একজন বালুচ উপজাতীয় নেতা হত্যা মামলায় তিনি অভিযুক্ত হন। এ দু’টো হত্যাকাণ্ডের সময় মি: মুশাররফ ক্ষমতায় ছিলেন।
এর পর তিনি চিকিৎসার জন্য দেশ ছেড়ে দুবাই যান। অনেকে মনে করেন, সামরিক বাহিনীর সহায়তায় মি: মুশাররফ তখন দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।সম্প্রতি তিনি আবারো রাজনীতিতে আসার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। সম্ভাব্য রাজনৈতিক জোট নিয়ে তিনি বিভিন্ন দলের সাথে আলাপ-আলোচনাও করেছেন।
মি: মুশাররফের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, পাকিস্তানে ফিরলে তিনি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। যদি জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়, তাহলে দেশে ফিরে মি: মুশাররফ মামলা মোকাবেলা করবেন বলে তার সহযোগীরা বলছেন।
মি: মুশাররফ আশা করেছিলেন, ২০১৩ সালে নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে তিনি হয়তো কিছু আসনে জয়লাভ করতে পারতেন। বিশেষকরে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তার কিছু জনপ্রিয়তা আছে। কারণ সেখানে তিনি অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করেছেন।
অনেকে মনে করেন, রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্র তৈরির অংশ হিসেবে মি: মুশাররফ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। তবে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে এটি তাকে সহায়তা করবে কিনা সেটি কেবল সময়ই বলে দেবে।