পাকিস্তানের গলার কাঁটা তালেবান-এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্টার: পাকিস্তানের পেশোয়ারে বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বুধবার সকালে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়।আজ বুধবার সকালে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়েছে। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে সেনা বাহিনীর সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পাকিস্তানের পেশোয়ারে বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছে। নিষিদ্ধ তেহেরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি টেনেছে দেশটির সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। খবর এএফপি, রয়টার্স ও ডন অনলাইনের। আঞ্চলিক পুলিশ প্রধান সায়েদ ওয়াজির এএফপিকে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছে।
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়টি পেশোয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে চরসাদ্দা এলাকায় অবস্থিত। যার নামে এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই বাচা খানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ক্যাম্পাসে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সকালের দিকে একে একে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে জড়ো হতে থাকেন। তখনো তাঁরা জানতেন না, কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তাঁরা।
হঠাৎ করেই বন্দুকধারীরা অনুষ্ঠানস্থলে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকেছিল তারা। এ সময় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্রুতই বন্দুকধারীদের হটাতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আরশাদ আলী বলেন, বন্দুকধারীরা দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে। চরসাদ্দা থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতার দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় সেনাসদস্যরাও।
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফজল রহিম মারওয়াত বলেন, বন্দুকধারীরা দক্ষিণ দিক থেকে হামলা চালাতে শুরু করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী-পুরুষ শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। তবে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছে। হামলার খবরে এসব শিক্ষার্থীর উদ্বিগ্ন স্বজনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জড়ো হন। তবে অভিযান পরিচালনাকারীদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ও অন্যদের ঘটনাস্থলের দূরে থাকতে বারবার সতর্ক করে দেওয়া হয়।
বেসরকারি সংস্থা ইদি ফাউন্ডেশনের এক স্বেচ্ছাসেবক প্রাথমিক পর্যায়ে দাবি করেন, তিনি নিজে অন্তত ১৫টি মরদেহ দেখেছেন। হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া একজন প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন অধ্যাপকও আছেন। উদ্ধারকারীরা বলছেন, অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করার পর ২০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে।
অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লে. জেনারেল অসিম বাজওয়া বলেন, চার হামলাকারী নিহত হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীরা ভেতরে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। চার হামলাকারীর শরীরে আত্মঘাতী বিস্ফোরকবাহী কোমড়বন্ধনী ছিল। তবে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানোর আগেই নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে চার হামলাকারী নিহত হয়।
এদিকে প্রাদেশিক মন্ত্রী শাহ ফারমান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতরে ৫৪ জন নিরাপত্তাকর্মী অবস্থান নিয়েছে। প্রায় ২০০ জনকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সময়মতো উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করায় ব্যাপক প্রাণহানি এড়ানো গেছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পেশোয়ারে সামরিক বাহিনীর বিদ্যালয়ে হামলায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মীসহ ১৪০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নিষিদ্ধ টিটিপি নেতা ওমর মনসুর তাঁর ফেসবুক পেজে এই হামলার দায় স্বীকার করেন। বলেছেন, ওই হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য চারজনকে পাঠানো হয়েছে।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, আট থেকে ১০ জনের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায়। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তারা সাধারণ পোশাকে ছিল, তবে মুখ ঢাকা ছিল। বেঁচে ফিরে আসা ঘটনার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী বলেছেন, হামলাকারীদের বয়স তাদের মতোই ছিল।