পাকিস্তানের কাছে মাশরাফিদের হারের পোষ্টমর্টেম করলেন ওয়াসিম আকরাম
ওয়াসিম আকরাম : প্রথম কয়েক ওভারেই খেই হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তাদের শরীরী ভাষাতেও সেটা বোঝা যাচ্ছিল। এশিয়া কাপে ওরা সিমিং পিচে খেলেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইডেন গার্ডেন ছিল ব্যাটিং উইকেট। তবে আমি এখনো মনে করি, ওরা বিপজ্জনক একটা দল। টুর্নামেন্টে এখনো সামনের ম্যাচগুলোয় জয়ের সম্ভাবনা তাদের আছে।
বাংলাদেশের সমস্যা হচ্ছে, তাদের কোনো বিগ হিটার নেই। তাদের সাকিব ও মুশফিকের মতো বেশ কয়েকজন চৌকস ক্রিকেটার আছে। সাকিব ফিফটি পাওয়ায় একটু আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। মাহমুদউল্লাহ ভালো করতে পারেনি, এটা বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। শেষ দিকে ভালো করার জন্য বাংলাদেশের সাত বা আট নম্বরে একজন বিগ হিটার দরকার।
মাশরাফি অবশ্য ব্যাট করতে পারে। তবে আমি ওকে আফ্রিদির মতো ওপরে উঠে আসতে বলব না। আফ্রিদি একসময় ওপেন করত, একজন বোলারের জন্য কাজটা আসলেই কঠিন।পাকিস্তানকে খুবই নির্ভার মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সহজ জয়ে সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল তাদের শরীরী ভাষা। অধিনায়ককেও বেশ ভারমুক্ত মনে হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এই জয়টা দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য দরকার ছিল। সেমিফাইনালে যেতে হলে এখনো অবশ্য অনেক কিছুই করতে হবে।
আরেকটা বড় ব্যাপার, টপ অর্ডারের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই রান পেয়েছে। এর আগে টপ অর্ডার সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি, এমনকি নিজেকে ওপরে নিয়ে আসার পর শহীদ আফ্রিদিও রান পেয়েছে। সব বিভাগই ভালো করেছে, ফিল্ডিংও ছিল দুর্দান্ত।উপমহাদেশে ভালো করতে না পারলে ক্রিকেটাররা সব সময়ই চাপে থাকে। আফ্রিদিও ব্যতিক্রম নয়। ওকে নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁদের সবাইকে মোক্ষম জবাব সে দিয়েছে।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, ব্যাটিং করেছে, উইকেটও পেয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে সে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলারদের একজন। দল বা নিজে যখন কোণঠাসা থাকে, আফ্রিদি সব সময়ই ভালো করে। আমি ওর কাছ থেকে এটাই আশা করেছিলাম।
আহমেদ শেহজাদের ফেরাটা দারুণ হয়েছে। এশিয়া কাপে কেন ওকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, সেটা আমি জানি না। ওর পেছনে পাকিস্তান কম বিনিয়োগ করেনি।
কিন্তু ওকে হয়তো শৃঙ্খলা বা পারফরম্যান্সর কারণে বাদ দেওয়া হলো। শেহজাদের মতো খেলোয়াড়দের সমর্থন দরকার, কারণ সে ফিল্ডার হিসেবেও দারুণ। খেলোয়াড় হিসেবে আরও পরিণত হচ্ছে। আমি ওকে দলে রাখার পক্ষে।
পাকিস্তানের বোলিং টুর্নামেন্টে সেরা কি না সেটা এখনই বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। তবে অন্যতম সেরা তো বটেই এবং শেষ পর্যন্ত পারফরম্যান্সই সেটি বলবে। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আছে, প্রথম ম্যাচে তারা তিন বাঁহাতি বোলারকে নিয়ে নেমেছে। আফ্রিদি ও ইমাদের মতো দুজন স্পিনার আছে, আর শোয়েব মালিক তো আছেই।
ভারত যেভাবে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে, তাতে পাকিস্তান ম্যাচের আগে একটু বেশিই চাপে থাকবে। তবে ভারতের এই দলটা দারুণ। তাদের আত্মবিশ্বাসও বেশি। তবে দুই দলের আগের দেখায় কী হয়েছিল, সেটা খেলোয়াড়দের কারও মনে থাকে না। আজ কী হচ্ছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ, তাই ভারত-পাকিস্তান দুই দলের জন্যই ১৯ মার্চ হবে নতুন একটা দিন।
ভারতের ব্যাটিং তাকিয়ে থাকবে কোহলির দিকে। আমার মনে হয় ওই দিন ভারতের ব্যাটসম্যানরা ১২৬ রান তাড়া করতে নেমে একটু ভড়কেই গিয়েছিল। কয়েকটা উইকেট পড়ার পরেই তারা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। তাদের জন্য ১৫ ওভারে ৭৫-৮০ রান রাখলেই চলত। যা-ই হোক, মাঝেমধ্যে এ রকম একটু-আধটু ঘটতেই পারে। (টিসিএম)।