পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ
স্পোর্টস ডেস্ক : অবশেষে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এটা শুধু জয় নয় এটাকে বাংলাওয়াশ বলাই ভাল।কারণ, মঙ্গলবার যখন চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়, তখনই রাওয়ালপিন্ডিতে জয়ের সুবাস পেয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের শেষ দিনের খেলা শুরু হলে ধীরে ধীরে সেই লক্ষে এগিয়ে যায় শান্ত বাহিনী। লাঞ্চ বিরতির পর কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছে যায় তারা। জয় তুলে নেয় ছয় উইকেটে। এর মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিকদের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ।ধারণা করা হচ্ছিলো, ১৮৫ রানের টার্গেট বেশ ভালোভাবেই উতরে যাবে বাংলাদেশ। তবে দিনের শুরুতে মারমুখী জাকিরকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান মির হামজা। ৩৯ বলে ৪০ রান করা জাকিরের ইনিংসে ছিল দুই ছক্কা ও দুটি বাউন্ডারি।
এরপর সাদ্দামও টেকন নাই বেশি ক্ষণ। পরে ৫৭ রানে একটি জুটি গড়ে ক্যাপ্টেন শান্ত ও মুমিনুল হক।পরে ৩২ রানে জুটি গড়ে জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক-সাকিব জুটি। উইনিং শটটি আসে সাকিবের উইলো থেকে।এ নিয়ে বিদেশের মাটিতে তৃতীয়বার টেস্ট সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। এরপর ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট জিতে দ্বিতীয় সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন লিটন কুমার দাস। আর প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছে মেহেদি মিরাজ।
এক প্রতিক্রিয়ায় মিরাজ বলেন, আমি সত্যিই খুশি, দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পেয়ে। অলরাউন্ডার হিসেবে খেলাটা কঠিন কাজ, কিন্তু আমি শুধু স্ট্রাইক রোটেট করতে চেয়েছিলাম এবং মুশফিক ও লিটন দাসের সঙ্গে ব্যাটিং উপভোগ করেছি। পাঁচ উইকেট পেয়ে সত্যিই খুশি, চেষ্টা করবো আরও ভালো বল করার। লিটন বলেন, নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল। পাকিস্তান সেই স্পেলে ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু আমি আর মিরাজ শুধু লম্বা ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। আমার ভালো ব্যাটিং করার কৃতিত্ব মেহেদিরও। আমরা পাকিস্তানে এসে কঠোর অনুশীলন করেছি। এই ধরনের গরমে খেলা সহজ নয় মন্তব্য করে লিটন বলেন, এই জয় ক্রেডিট দলের প্রচেষ্টা এবং কোচিং স্টাফদের।
পাকিস্তানের অধিনায়ক শান মাসুদ বলেন, আমরা অত্যন্ত হতাশ। আমাদের গল্পটা অস্ট্রেলিয়ার মতোই হয়েছে, আমরা আমাদের শিক্ষা নেইনি। আমরা শিখিয়েছি আমরা অস্ট্রেলিয়ায় ভালো ক্রিকেট খেলছি। কিন্তু কাজটি করছি না, এটি এমন কিছু যা আমাদের কাজ করতে হবে। আমার মেয়াদে চার বার এমন হয়েছে যে, আমরা যখন আধিপত্য বিস্তার করছিলাম তখন আমরা দলকে প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে দিয়েছি।মাসুদ বলেন, আমি মনে করি, টেস্ট ক্রিকেট ফিটনেসের ক্ষেত্রে অন্য কিছুর দাবি রাখে। আমরা প্রথম টেস্টে চার জন ফাস্ট বোলার খেলেছিলাম। কারণ আমরা ভেবেছিলাম কাজের চাপ তিন জনের পক্ষে পরিচালনা করা খুব বেশি কঠিন হবে। আর সেটা এই ম্যাচে প্রমাণ হয়েছে, যখন আমরা প্রতিটি ইনিংসে একজন ফাস্ট বোলারকে হারিয়েছি।
প্রথম ইনিংসে ২৭৪ ভালো স্কোর ছিল মন্তব্য করে মাসুদ বলেন, আমি আর সাইম লিটনের মতো আরও রান পেতে পারতাম। ২৬/৬-এ তাদের থাকার থেকে আমাদের আরও ভালো করা উচিত ছিল। তবে এখানেই শেষ নয়, সব সময় শেখার আছে। আমরা শাহীন এবং নাসিমকে ফিরে পেয়েছি। শাহীন এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খেলেছে। কিন্তু আমাদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
বিজয়ী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, এই জয়ের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা এখানে জিততে চেয়েছিলাম এবং সবাই যেভাবে তাদের কাজ করেছে তাতে আমরা খুব খুশি। আমাদের পেসারদের কাজের নীতি দুর্দান্ত ছিল এবং সেই কারণেই আমরা ফলাফল পেয়েছি। শান্ত বলেন, প্রথম টেস্টে শাদমান যেভাবে ব্যাট করেছিলেন তা দুর্দান্ত ছিল। এমনকি জাকিরও এই টেস্টে ইতিবাচক আউট হয়ে আমাদের গতি এনে দিয়েছে। পরবর্তী সিরিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই জয় আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। মুশফিক ও সাকিবের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। তারা ভারতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।