• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পাওনা টাকা চাওয়ায়-প্রকাশ্য কুড়ালে ধাওয়া দিল যুবলীগার হাবিব


প্রকাশিত: ১১:০১ পিএম, ৪ জুলাই ২৩ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬২ বার

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা খাতুনের সরকারি গাড়িচালককে সোমবার উপজেলা পরিষদ ভবনেই এক যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগী প্রকাশ্যে ধারালো চাইনিজ কুড়াল ও হাঁসুয়া নিয়ে ধাওয়া করেছেন। এ ঘটনায় নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা খাতুন সোমবার বিকালে উপযুক্ত বিচার চেয়ে নলডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মূল হামলাকারী মো. আহসান হাবিব নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে ভুক্তভোগীরা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন।এ সম্পর্কে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন এবং এ বিষয়ে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে জানা গেছে, সোমবার বিকালে লিখিতভাবে অভিযোগ করে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা খাতুন বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১০ ঘটিকার দিকে উপজেলার মাধনগর গ্রামের মৃত হামিদ মাস্টারের ছেলে মো. আহসান হাবিব ও একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলে ধারালো অস্ত্রসহ হত্যার উদ্দেশ্যে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের নিচতলায় আক্রমণ করে। তখন মো. রুবেল হোসেন জীবন বাঁচানোর জন্য দ্রুত দৌড়ে নিচতলা থেকে ৩য় তলায় উঠে আসেন। অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা তার পিছু পিছু ধাওয়া করে নিচতলা হতে দ্বিতীয়তলা পর্যন্ত আসে।

এ সময় কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা গাড়িচালক রুবেল হোসেনকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসলে অস্ত্রধারীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে থাকে এবং ভবিষ্যতে তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। গাড়িচালক মো. রুবেল হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাওয়াকারী অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউএনও জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি গাড়িচালক নাটোর সদর উপজেলার উলুপুর ফুলবাগান এলাকার মৃত আবুল বাশারের ছেলে রুবেল হোসেন জানান, তার বড় ভাই খোকন রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করেন। নলডাঙ্গার স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আহসান হাবিব ঈদের আগে তার ভাইয়ের প্রাইভেটকারটি ভাড়া নিয়ে পাঁচ দিন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন; কিন্তু ভাড়া না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন আহসান হাবিব। এ নিয়ে সোমবার সকালের দিকে তার ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটি হয় হাবিবের।

এ সময় ভাড়া পরিশোধের কথা বললে আহসান হাবিব ছোট ভাই রুবেলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তার বড় ভাই খোকন তাকে অবহিত করেন। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউএনও অফিসের গেটের সামনে এসে তাকে তার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে রাজি না হলে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ইউএনও অফিসের সামনে নিয়ে যায়। এ সময় ধারালো অস্ত্র বের করে তাকে মারতে গেলে আত্মরক্ষায় দৌড়ে পালিয়ে ইউএনও অফিসে ঢুকে পড়েন তিনি। এ সময় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে তারাও মারার জন্য পিছু নেয় এবং দোতলা পর্যন্ত উঠে আসে। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি দেখে তারা চলে যায়। পরে বিষয়টি ইউএনও এবং পুলিশকে জানান।

রুবেল হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে, তাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি এ ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে বলেছেন, স্বয়ং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িচালককে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে মারার চেষ্টায় তারা হতবাক হয়েছেন।

হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার ফোন করলেও অভিযুক্ত আহসান হাবিবের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন নকুল জানান, উপজেলা যুবলীগের কমিটি গঠনের সময় তাদের মতামতের বাহিরে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে তাকে সাংগঠনিক পদ দেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছেন কিন্তু ওই কমিটির কোনো অনুমোদন ছিল না।নলডাঙ্গা থানার ওসি আবুল কালাম জানান, নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা খাতুন লিখিতভাবে বিষয়টি পুলিশকে জানালেও সেটি মামলা নয়। এ বিষয়ে তার গাড়িচালক রুবেল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করলে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।