• মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

পাঁচ দশকের শিল্পকলার ইতিহাস-ভাস্কর্যের নিরীক্ষা


প্রকাশিত: ৫:৫১ পিএম, ২৮ মে ১৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭০ বার

মোবাশ্বির আলম মজুমদার:
ঐতিহ্যের অনুসন্ধানে, শিল্পী: দেবাশীস পালআন্তমৃত্তিকার অনুরোধ  শিল্পী: সৈয়দ তারেক রহমানআমাদের দেশে পঞ্চাশের দশকে ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য গড়ার সাহস দেখিয়েছেন নভেরা আহমেদ৷ সেই থেকে আজ অবধি ভাস্কর্যের গড়নে যুক্ত হয়েছে নানা মাধ্যম ও নিরীক্ষা৷ বিগত পাঁচ দশকের শিল্পকলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এ দেশে ভাস্কর্যশিল্পের বিবর্তন ঘটেছে নানাভাবে৷ জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝা গেল৷ জাতীয় পর্যায়ে শুধু ভাস্কর্য নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীতে প্রদর্শনীর আয়োজন এটিই প্রথম৷ মোট ১২৫টি ভাস্কর্যের সমাহারে এ প্রদর্শনীতে ভাস্কর্যচর্চা ও বিবর্তনের পুরো বৃত্তান্ত পাওয়া না গেলেও ছিল সাম্প্রতিক ভাস্কর্যের খণ্ড খণ্ড চিত্র৷ বিশেষত এখানে ছিল আশি ও নব্বই দশকের ভাস্কর্যের বিচিত্র মাত্রা৷
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও আব্দুর রাজ্জাকের হাত ধরে আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যশিল্প চর্চার সূচনা৷ পরে বাস্তবধর্মী ভাস্কর্য তৈরির পাশাপাশি নিতুন কুণ্ডু, হামিদুজ্জামান খান ও শামীম শিকদার এ মাধ্যমে যোগ করলেন সিমেন্ট, প্লাস্টার ও ধাতব পদার্থ৷ সেই পরম্পরায় লোককলার ফর্ম, পাশ্চাত্যের জ্যামিতিনির্ভর সৃষ্টি, আবহমান বাংলার জনজীবন, মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বর্ণনা—ভাস্কর্যের কত-না রূপমাধুরী!
ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, শিল্পী: ইমাম হোসেনএবারের প্রদর্শনীর অনেক কাজের মধ্যেই পাওয়া গেছে সমাজ-ভাবনার নানা অনুভব৷ এর ভেতরে হাবিবা আক্তারের কাজ নিয়ে বলতে গেলে ‘রহস্যময় স্মৃতি’ শিরোনামে ভাস্কর্যের কথা বলতেই হবে৷ ব্রোঞ্জে নির্মিত এ কাজে ফ্লাওয়ার ভাসের মাঝখানে শুকিয়ে যাওয়া গোলাপের উপস্থিতিকে শিল্পী দেখিয়েছেন অতীত দিনের স্মৃতি হিসেবে৷ মাধ্যমের বৈচিত্র্য আর বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাবিবা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম৷
গোসাঁই পাহলভী তাঁর ‘স্তন’ শিরোনামে একটি গোলকৃতির সিরামিক ভাস্কর্যে ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনার সঙ্গে প্রয়োগ করেছেন দুটি বিন্দু৷ অন্যদিকে প্রদ্যোত কুমার দাশ নারীর শরীর তৈরি করেছেন লোহার পাত জোড়া দিয়ে৷ এ ভাস্কর্যের আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা; গড়নে আছে জ্যামিতির আশ্রয়৷ উপরন্তু, লোহার পাত ও রড যুক্ত করে ভঙ্গুরহীন নারীদেহকে নির্দেশ করেছেন প্রদ্যোত৷ তাঁর কাজের মধ্যে বৈচিত্র্য স্পষ্ট৷
শেখ নাঈমা তাঁর ‘নীরবতা’ সিরিজের কাজে বজায় রেখেছেন প্লাস্টারের নিখুঁত ও মসৃণ ধারা৷ তেজস হালদার ‘কক্ষ’ শিরোনামের কাজে আধশোয়া মানুষের দেহভঙ্গির সঙ্গে যোগ করেছেন একটি স্থির পাখির অবয়ব৷ আবার মাসুদ বিপ্লবের ‘শান্তি’-র মধ্যে আছে মানুষের ছুটে চলা৷
এবার চলুন দেখে নিই মিঠুন কুমার সাহার ভাস্কর্য৷ তিনটি মানুষের মুখে তিন রকম অভিব্যক্তি তৈরি করেছেন তিনি৷ ‘রাকু’ পদ্ধতিতে করা তাঁর কাজের শিরোনাম ‘চাপ’৷ রূপম রায়ের কাজের শিরোনাম ‘শব্দের ভেতর প্রকৃতি-৮’৷ এখানে সিলভার মাধ্যমের তারে জড়ানো শব্দযন্ত্রের আকৃতি তৈরি করেছেন তিনি৷
সৈয়দ তারেক রহমান ‘অধোমৃত্তিকার অনুরোধ-৪’ শীর্ষক ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন কাঠের পাটাতন যুক্ত করে৷ দণ্ডায়মান এক মানুষের মধ্যে জ্যামিতিক কৌণিক আকৃতি উপস্থাপন করে মানুষের শরীরে মৃত্তিকালগ্ন আবেশ সৃষ্টির চেষ্টা আছে তাঁর কাজে৷ আবার প্রমথেশ দাশের কাজে দেখা গেল যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রযাত্রা৷ ইলেকট্রনিক রিমোট ও হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশের সঙ্গে শোলার তৈরি ফুলের মালার সমন্বয় ঘটিয়ে ‘অগ্রগতি’ নামের এ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন তিনি৷ ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শিল্পীই নতুন৷ নানা উপকরণের নিরীক্ষা যেমন আছে তাঁদের কাজে, তেমনি আছে নতুন পথে যাওয়ার দিশাও৷ ১১ মে শুরু হওয়া প্রদর্শনী শেষ হয়েছে ২০ মে৷