• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পাঁচ-ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে আগামীতে মেডিকেল-বুয়েটের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নপত্র!


প্রকাশিত: ৭:২০ পিএম, ৭ জুন ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৭৫ বার

 pro-2চলমান এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ছাড়াও প্রতিবেদন-কলামও পড়েছি।পত্রিকায় দেখলাম সরকার এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং কমিটি কিছু দিনের মধ্যে তাঁদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন। পত্রিকা পাঠে জানলাম তদন্ত কমিটি এখনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের উত্স খুঁজে পাননি। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো যাচ্ছে না।

উপরন্তু, শুনেছি প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা পাঁচ-ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে আগামীতে মেডিকেল-বুয়েটের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের। 
একজন শিক্ষাকর্মী হিসেবে দেশবাসীর মতো আমিও উত্কণ্ঠিত। তবে উত্কণ্ঠা প্রকাশের পাশাপাশি আমার দৃষ্টিতে এর সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ ও প্রতিকারও এখানে তুলে ধরতে চাই।
প্রথমত, আমাদের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিলি-বণ্টন ব্যবস্থা মান্ধাতার আমলের। প্রতি পত্র পরীক্ষার জন্য চার সেট প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করা হয়; এর মধ্য থেকে দুই সেট প্রশ্নপত্র বিজি প্রেস থেকে প্রিন্ট করিয়ে পরীক্ষা শুরুর আগেই সকল প্রশ্নপত্র এবং দুই সেটের মধ্যে কোন সেট দিয়ে পরীক্ষা হবে সেইসব কাগজও পৃথক ট্রাংকে করে একইসঙ্গে প্রতিটি থানার পুলিশ হেফাজতে পৌঁছে যায়। 
কাগজের খামে সিলগালা করা এসব তথ্য খুলে মোবাইল ফোনসেট দিয়ে ছবি তুলে অনায়াসে আবার সিলগালা করে রেখে দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, প্রশ্নপত্র ফাঁস বাংলাদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। মনে পড়ে, ২০০৬ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে শুরু করে বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছিলেন। এর পরের খবর আর পত্রিকায়-সংবাদে আসেনি। 
এদের কি শাস্তি হয়েছিল? না হয়ে থাকলে এই বিচারহীনতা বা শাস্তিহীনতা আজকের অবস্থার জন্য দায়ী। তৃতীয়ত, ফেসবুকের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র প্রচারিত হলেও সবাই এ প্রশ্নপত্র পাচ্ছে না। মূলত একটি ডানপন্থি ছাত্রসংগঠনের কর্মী ও কোচিং সেন্টারের মালিকরাই এ প্রশ্নপত্র ফাঁস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এতে করে একদিকে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের শিক্ষাখাতের সাফল্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নব্য পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার নীতিহীনতাও এর জন্য কম দায়ী নয়।
কারণ যা-ই হোক, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় অনুসন্ধান করতে হবে। এ ডিজিটাল যুগে অবিলম্বে পালটাতে হবে পুরাতন পদ্ধতি। প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করতে হবে কমপক্ষে চার সেট। কোন সেট দিয়ে পরীক্ষা হবে তা নির্ধারিত করতে হবে পরীক্ষা শুরুর দিন এবং মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। 
আরো অগ্রসর হলে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র প্রিন্ট বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রতি একহাজার পরীক্ষার্থীর বিপরীতে একটি প্রিন্টার বা ফটোকপি মেশিনের ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর দুই-তিন ঘণ্টা আগে ই-মেইল করে প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্র প্রেরণ সম্ভব। সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বসে ইন্টারনেট থেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে পরীক্ষা দেবে। 
আমরা আশা করি সামরিক সরকারের আমলে নকলের মহোত্সবে নিমজ্জিত পরীক্ষাব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক সরকার যেভাবে ফিরিয়ে এনেছেন; প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ সমস্যা থেকেও আমরা অচিরেই মুক্তি পাবো।