• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

পরকীয়া প্রেমিক খুন করলো মেয়রকে লাশ তোলা হল আজিমপুর থেকে


প্রকাশিত: ১২:২৫ এএম, ৪ মার্চ ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৪ বার

RAJSHAHI-PHOTO--3--MARCH-15-11স্টাফ রিপোর্টার.ঢাকা: প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ থাকা রাজশাহীর পবার নওহাটা পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল গফুর সরকারের লাশ রাজধানীর আজিমপুরের কবরস্থান থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা হয়েছে। মেয়র নিখোঁজের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এক নারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং তাঁর দেখিয়ে দেওয়া কবর থেকে পুলিশ লাশটি তোলে।

পুলিশ জানিয়েছে, জান্নাতুন সালমা ওরফে মিম নামের ওই নারী তাঁদের কাছে স্বীকার করেছেন, তাঁর স্বামী হারুন অর রশিদ পৌর মেয়র আবদুল গফুরকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছেন। মিমের সঙ্গে আবদুল গফুরের পরকীয়ার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজশাহীর পবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি জানান, গত ১ জানুয়ারি মেয়র আবদুল গফুর সরকার ঢাকা যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন।

কিন্তু গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি মেয়রের ফোন নম্বর থেকে একটি এসএমএস যায়, তাতে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলা হয়। ওই দিন বিকেলে মেয়রের স্ত্রী ফজিলাতুন নেসা পবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে জিডিটি অপহরণ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এ মামলায় কথিত চিকিৎসক জান্নাতুন সালমা ওরফে মিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি নওগাঁর সালমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক।
পুলিশের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, সালমাকে প্রথমে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রথম দফার রিমান্ড শেষ হলে গতকাল পুলিশ দ্বিতীয় দফায় তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়।

পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে সালমা বলেছেন, ৭ জানুয়ারি রাতে হারুন অর রশিদ তাঁদের মোহাম্মদপুরের বাসায় মেয়র গফুরকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। ৮ জানুয়ারি রাতে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে গফুরের লাশ দাফন করেন সালমা। লাশ দাফনের সময় সালমা নিজেকে গফুরের বোন ও তাঁর স্বামী হারুন অর রশিদ ভগ্নিপতি হিসেবে পরিচয় দেন।

পুলিশের দাবি, প্রথম দফা রিমান্ডে মেয়র গফুরকে হত্যার কথা সালমা স্বীকার করেন। তবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য সালমাকে রাজশাহীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। পরে আবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার সংসদ ভবন এলাকা থেকে সালমাকে আটক করা হয় এবং আটকের পর সালমা নিজেকে মেয়রের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের দাবি, সালমার বাবার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। তাঁর বিয়ে হয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের সঙ্গে। হারুন ঢাকায় একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। কয়েক বছর আগে সালমা পবার নওহাটায় ‘সায়াগ্রাম’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন।

ওই এনজিওর নামে একটি ক্লিনিক খুলে নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক দাবি করে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালাতেন। দুই বছর আগে ওই এনজিও ও ক্লিনিকটি গুটিয়ে নেন। এরপর নওগাঁয় গিয়ে ‘সালমা ক্লিনিক’ নামের একটি ক্লিনিক চালু করেন। সালমা ও তাঁর বোন জান্নাতুন নাইম ওই ক্লিনিক দেখাশোনা করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আজ সালমাকে নিয়ে ঢাকায় আজিমপুর কবরস্থানে যায়। সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর পবা-মোহনপুর আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন।

সাংসদ আয়েন উদ্দিন জানান, কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক সোহেল কথিত চিকিৎসক জান্নাতুন সালমা ওরফে মিমকে শনাক্ত করেন। সোহেল পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, এই নারী কবরের ওপরে ঘাস লাগানোর টাকাও বাকি রেখে চলে গেছেন। পরে আর ফোন ধরেননি। তত্ত্বাবধায়ক সালমাকে চিনতে পেরেছেন এবং তাঁর ফোন নম্বরও শনাক্ত করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের সময় যে নামফলক দেওয়া রয়েছে, তাতে মেয়রের নাম ঠিকমতোই লেখা আছে। নামফলকে মৃত্যুর তারিখ দেওয়া হয়েছে ৩ জানুয়ারি ২০১৫। তবে কবরস্থানের রেজিস্টারে মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে ৮ জানুয়ারি ২০১৫।

সাংসদ আয়েন উদ্দিন আরও জানান, এই দলের সঙ্গে ঢাকা মহানগরের ম্যাজিস্ট্রেট রেহানুল হক ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রাজশাহীর পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমানও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

নিখোঁজ মেয়রকে জীবিত উদ্ধারের দাবিতে এলাকাবাসী গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।