পরকীয়া’য় জোড়া খুন-নায়িকা আরজিনা
স্টাফ রিপোর্টার : পরকীয়া প্রেমের কারণে স্বামী ও মেয়েকে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেছিলেন আরজিনা বেগম (২৩)। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, শাহিন মল্লিকের হাতে সোনার গহনা দিয়ে দেন আরজিনা। সেগুলো নিয়ে শাহিন খুলনায় চলে যায়। আর ডাকাতের হাতে স্বামী ও মেয়ে খুন হয়েছে এমন বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে অভিনয় শুরু করেন।
শনিবার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এসএম মোশতাক আহম্মেদ এসব তথ্য জানান।১ নভেম্বর উত্তর বাড্ডার ৩০৬ নম্বর বাসায় জামিল শেখ ও তার মেয়ে নূসরাত খুন হয়। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করে নিহত জামিল শেখের ভাই শামীম শেখ।
উত্তর বাড্ডার বাসায় জামিল তার স্ত্রী আরজিনা বেগম, মেয়ে নূসরাত ও ছেলে আলবি থাকতো। জামিল গাড়ি চালক ছিলেন। তারা আগে উত্তর বাড্ডার একটি বাসায় ভাড়া থাকতো। ওই বাসার একতলায় থাকতো জামিল ও তার পরিবার। দ্বিতীয় তলায় থাকতো রঙমিস্ত্রী শাহিন ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগম।
ওই বাসা থেকেই শাহিনের সঙ্গে আরজিনার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কয়েক মাস পর জামিল ও তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে উত্তর বাড্ডার ৩০৬ নম্বর বাসায় ভাড়া নেয়। ভাড়া ৭ হাজার টাকা হওয়ায় আরজিনা বাসায় সাবলেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। জামিলকে রাজি করিয়ে শাহিন ও তার স্ত্রীকে সাবলেট দেয় বলে জানান মোশতাক আহম্মেদ।তিনি বলেন, ‘একই বাসায় থাকায় তারা আরও ঘনিষ্ঠ হয়। এক সময় তারা বিয়ে করার পরিকল্পনা করে। তারা পালিয়ে যেতেও চেয়েছিল।
আরজিনা তার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চাইলে, শাহিন অন্য কোনও উপায় বের করতে বলে। তারপর তারা দু’জনে মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’ডিসি বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শাহিন বাসার নিচ থেকে একটি কাঠ নিয়ে আসে বাসায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই দিন রাতের খাবার শেষে রুমের দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন আরজিনা। মধ্যরাতে শাহিন ঘরে ঢুকে কাঠ দিয়ে জামিলের মাথায় আঘাত করে। জামিল ঘুম থেকে জেগে গিয়ে শাহিনকে বলতে থাকেন, তুই আমাকে মারিস কেন? এরপর ফের আঘাত করে। তখন মেয়ে নূসরাত জেগে যায়।
সে শাহিনকে প্রশ্ন করে, শাহিন আঙ্কেল আব্বুকে মারো কেন? জামিল অচেতন হয়ে গেলে আরজিনা ও শাহিন রুমের বাইরে চলে যায়। এরপর ঘরে ফিরে নূসরাতের গলাচেপে ধরে শাহিন। মেয়েটি চিৎকার করলে তার মুখে বালিশ চাপা দেয় সে। অন্য কক্ষে থাকা শাহিনের স্ত্রী চিৎকার শুনে আরজিনাদের রুমে চলে আসে। এরপর শাহিন তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলে, ঘটনা একটা ঘটে গেছে।
এখানে থাকা যাবে না। ভোরে বাড়ির গেট খুললে স্ত্রী মাসুমাকে নিয়ে চলে যায় শাহিন। শাহিনের কাছে আরজিনা নিজের গহনা দিয়ে দেয়। আর বাসায় স্বামী ও মেয়ের লাশ নিয়ে ডাকাতির নাটক সাজায়। সে বাসার সিঁড়ির সামনে বসে থাকেন। ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ওই বাড়ির এক লোক তাকে দেখে যায়। নামাজ পড়ে ফেরার সময়ও একই জায়গায় তাকে দেখতে পেয়ে, তার স্ত্রীকে খোঁজ নিতে বলেন। তখন প্রতিবেশী সবাই জেনে যায় এই হত্যাকাণ্ডের কথা।’
প্রতিবেশীদের কাছে আরজিনা বলেন, তিন-চারজন ডাকাত তার ঘরে ডাকাতি এবং স্বামী-সন্তানকে হত্যা করেছে। এমনকি তাকে ধর্ষণও করেছে।ডিসি মোশতাক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এসব কথা বলেছেন। মামলার তদন্তের এখনও বাকি আছে। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। আর কোনও উদ্দেশ্য ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।