পদ্মা সেতুর অজানা অধ্যায়..
অাশরাফুল আলম খোকন : বিশ্বের অন্যতম সেরা শক্তিশালী সেতু হচ্ছে পদ্মা সেতু। কি আছে এবং কি নেই এই সেতুতে? তা জানলে অনেকেই চমকে যাবেন। পদ্মা সেতুর একেকটি পিলার পানির নিচে থাকছে ৪০তলা ভবনের সমান । এর একেকটি পাইলের ওজন ৮ হাজার ২০০ টন।
এছাড়া পদ্মাসেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হ্যামার লাগবে, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। পৃথিবীর কোথাও আর কোনো সেতুতে এমন শক্তিশালী হ্যামার ব্যবহৃত হয়নি। এই হ্যামারটি জার্মানি থেকে বিশেষ অর্ডারে তৈরি করে আনা।
সম্প্রতি ভারতে চালু হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ ভূপেন হাজারিকা সেতু ৯.১৫ কিলোমিটার আর আমাদের পদ্মা সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেশি। কেন বেশি এই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।
অনেকেই দুর্নীতির গন্ধ বের করার চেষ্টা করছেন, যেখানে খোদ বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির প্রমাণ দিতে না পেরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে নাকে খত দিয়ে গেছে। আসুন দুই সেতু’র মধ্যে পার্থক্যটুকু দেখা যাক …।
ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড মাত্র ৬০ টন। সেখানে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন। ভারতের ওই সেতুর একেকটি পিলার ১২০ টনের। আর পদ্মা সেতুর একটি পিলার ৫০ হাজার টনের। সে হিসেবে ভারতের সেতুটির চেয়ে পদ্মাসেতু হতে চলেছে ১৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী।
বিশ্বের আর কোনও সেতু তৈরিতে পদ্মার মতো নদীর এতো তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথতে হয়নি, বসাতে হয়নি এত বড় পিলার। আর পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী এমন নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। পদ্মাসেতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের সব চেয়ে ব্যতিক্রমী সেতু হবে।
কারণ খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজান নদীর পরই বিশ্বে বাংলাদেশের পদ্মানদীর অবস্থান, যার ওপর দিয়ে সেতু করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো দ্বিতল (গাড়ি ও ট্রেন) সেতু পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকটি আছে। আর দুই লেনের ভূপেন হাজারিকা সেতুর উদাহরণ পৃথিবীতে কয়েকশ’ পাওয়া যাবে।
পদ্মানদীর শুধু মাওয়া পয়েন্টে মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় তা রাজধানী ঢাকার সারাদিনের যত পানি লাগে তার সমান। হিসাব মতে, পদ্মা নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহ রয়েছে। পানি প্রবাহের দিক বিবেচনায় বিশ্বে আমাজান নদীর পরেই এই প্রমত্তা পদ্মা।
পদ্মানদীতে পাথরের স্তর মিলেছে ১০ কিলোমিটার গভীরে। বিশ্বের অন্যান্য নদী ও নদীর ওপর সেসব সেতু আছে সেগুলোর কোনোটিরই পাথরের স্তর এতো নিচে নয়। এ কারণে ৪০০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়েছে। যা পৃথিবীর সেতু নির্মাণে বিরল ঘটনা। একেকটি পাইলের ওজন ৮ হাজার ২০০ টন। আর পাইল এতো গভীরে যাচ্ছে যে- ভেতরে এটি ৪০তলা ভবনের সমান হবে।
পদ্মাসেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হ্যামার লাগবে, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। পৃথিবীর কোথাও আর কোনো সেতুতে এমন শক্তিশালী হ্যামার ব্যবহৃত হয়নি। এই হ্যামারটি জার্মানি থেকে বিশেষ অর্ডারে তৈরি করে আনা।পদ্মাসেতুতে যে পাথর ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটির ওজন এক টন। এ পাথর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে (পাকুর পাথর) আমদানি করা হয়েছে। মাত্র ১৫ টুকরো পাথরে ভরে যায় একটি বড় ট্রাক।
আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারখানা বলা যায় পদ্মাসেতুর পাইল ও স্প্যান ফেব্রিকেশন ইয়ার্ড। যেখানে প্রস্তুত হচ্ছে সেতুর পাইল আর স্প্যান। এই ইয়ার্ডের আয়তন ৩০০ একর। এর একদিকে প্লেট ঢুকছে অন্যদিকে পাইল বের হচ্ছে।
এই রকম আরও ভুরি ভুরি তুলনামূলক উদাহরণ দেওয়া যাবে। শেখ হাসিনা’র চ্যালেঞ্জ এই পদ্মা সেতু বিশ্বের বুকে ইতিহাস। সুতরাং আঙ্গুল তুলে যখন কথা বলবেন, তখন একটু জেনে শুনেই বলা ভালো। নয়তো মূর্খদের কাতারেই রয়ে যাবেন।