পদ্মা কেড়ে নিচ্ছে নড়িয়া’র সর্বস্ব
শরিয়তপুর ও নড়িয়া প্রতিনিধি : প্রমত্মা পদ্মা কেড়ে নিচ্ছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সর্বস্ব। উপজেলার মুলফৎগঞ্জ এলাকায় ফের ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মায়। আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। শনিবার রাতে মুলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী (গাজী কালুর মেহমানখানা) নামে চারতলা বিলাসবহুল বাড়িটি পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। একই সময় খানবাড়ি জামে মসজিদ ও মোহাম্মদ দিলু খাঁর দোতলা পাকা বাড়িটিও চলে গেছে পদ্মার পেটে।
গত ৪ দিনে শত শত পাকা ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শনিবার দুপুরে নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভাঙন আতঙ্কে পদ্মাপাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। এ ছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুলফৎগঞ্জ বাজার, উপজেলা খাদ্যগুদাম, উপজেলা পরিষদ, পৌরভবনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে সব ধরনের মালামাল ও স্থাপনা।
নড়িয়ার বাঁশতলা এলাকার আবু তাহের ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পদ্মার ভাঙনে গত রাত অনুমান সাড়ে ৯টায় মুলফৎগঞ্জ এলাকার মুন্নি খানের চারতলা একটি সুসজ্জিত ভবন, পাশের বায়তুল মামুর জামে মসজিদ ও মসজিদের পাশের একটি দ্বিতল ভবনসহ আরো একটি বাড়ি বিলীন হয়েছে।তারা জানান, মুন্নি খানের বোন আমেরিকা প্রবাসী আসমা আকতার ও বন্যা দুজনে মিলে পাশাপাশি দুটি বহুতল সুসজ্জিত বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। বাড়িটির নামকরণ করা হয়েছিল গাজী কালুর বাড়ি। বাড়ির মূল ফটকে লেখা ছিল মঈন উদ্দিন চিশতি।
রঙিন গ্লাস দিয়ে নির্মিত বাড়ি দুটি এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সর্বনাশা পদ্মা এ বাড়ি দুটির একটি শনিবার রাতে গ্রাস করে নিয়ে যায়। অপর বাড়িটিও ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে এ বাড়িটিও নদীগর্ভে চলে যাবে।বাড়িটির মালিক মুন্নি খান বলেন, অনেক কষ্ট করে আমার বোনদের টাকাপয়সা দিয়ে দুটি বাড়ি করেছিলাম। একটি বাড়ি রাতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরটিও চলে
যাবে। আমাদের আর কিছুই রইল না।ওই এলাকার গোলাম ফারুক বাবুল জানান, দুপুরে ওই বাড়িটির ছবি মোবাইলে তুলেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাতে শুনলাম বাড়িটি পদ্মাগর্ভে চলে গেছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে বেশি দিন লাগবে না শরীয়তপুরের মানচিত্র থেকে নড়িয়া হারিয়ে যেতে।
মুলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নুর হোসেন দেওয়ান বলেন, এক মাস ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনে এ এলাকার প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। নড়িয়া-সুরেশ্বর পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর, জমিজমা সবই পদ্মার পেটে। আমাদের কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। কোনো ক্রেতা বা লোকজন ভয়ে বাজারে আসে না।বাঁশতলা এলাকার সাইদুর রহমান বলেন, আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এত বিপদে আছি যে কোথায় যাব, কী করব, কীভাবে বাঁচব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, শুক্রবার নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়কের বিরাট একটি অংশ বিলীন হয়ে গেছে। শনিবার রাতে মুন্নি খানের বাড়ি, মসজিদ ও পাশের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কিছু লোকজনের মধ্যে সহায়তা প্রদান করেছি।শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ৫ কোটি টাকার জিওব্যাগ ফেলেও কোনো সুফল হয়নি। বর্ষা মৌসুমে কাজ করে ভাঙন কমানো সম্ভব। কিন্তু ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।