• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

নয়া চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ-অবশেষে বেসিক ব্যাংকের রাঘব বোয়াল পর্ষদ বাতিল


প্রকাশিত: ৬:৩৮ পিএম, ৬ জুলাই ১৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৪ বার

 

 

Basic bank -Alauddinশফিক আজিজি

অবশেষে সরকার বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্থ রাঘব বোয়াল পর্ষদ বাতিল করেছে। তবে রহস্যজনক কারণে সরকার এখনো ব্যাংটির পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্ঠ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেনি।তবে ব্যাংকটির একটি সূত্র বলেছে ইতিমধ্যে দুদককে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতির কন্ঠকে জানান, সরকার কোন দুর্নীতি সহ্য করবে না এবং কোন দুর্নীতিগ্রস্থ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও ছাড় দেবে না। তিনি জানান, ইতিমধ্যে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তি, সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।শিগগির নতুন কোন কিছু দুশ্যমান হবে।

সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করেছে সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
আজ রোববার এ বিষয়ে আলাদা তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বেলা সোয়া তিনটার দিকে এ প্রজ্ঞাপনগুলো জারি করা হয়।
এর মধ্যে একটি প্রজ্ঞাপনে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাইয়ের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর (১৯৯১ সালের ১৪ নম্বর আইনে) ধারা ৪৬(৬) অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. মতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদকে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক/চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির দিন (রোববার) থেকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ দেওয়া হয়।
আলাউদ্দিন এ মজিদ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির বোঝা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই। গত শুক্রবার অর্থমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

২০০৯ সালে সেপ্টেম্বরে শেখ আবদুল হাইকে তিন বছরের জন্য বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর নিয়োগ নবায়ন করা হয়। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাংকটিতে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। চেয়ারম্যানসহ বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করলেও সরকার তা করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে পর্ষদ ভেঙে না দিয়ে, বরং চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করার কথা বলা হচ্ছিল। আর সেই কারণেই তিনি পদত্যাগ করেন।

 

 

` হাইকে অপসারণ না করে তাঁকে পদত্যাগের সুযোগ করে দেওয়াটা অনৈতিক কাজ হয়েছে’

 

অবশেষে পদত্যাগ করলেন বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। তাঁর সময়েই রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ী করেছে ব্যাংকটির পর্ষদকে।
সাধারণ মানুষের আমানতের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের দায় থাকলেও সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সম্মানজনকভাবে বিদায়ের ব্যবস্থা করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, সরকারের পক্ষ থেকেই শেখ আবদুল হাইকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল।
গত শুক্রবার ছুটির দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসায় গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন শেখ আবদুল হাই। অর্থমন্ত্রী গতকাল শনিবার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়টি স্বীকার করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বেসিক ব্যাংককে এখন দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হবে। এ জন্য কাল রোববার (আজ) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেব, যিনি একজন প্রসিদ্ধ ব্যাংকার। চেয়ারম্যান নিয়োগের পাশাপাশি ঢেলে সাজানো হবে বেসিক ব্যাংকের পুরো পর্ষদকেও।’ যদিও পুরোপুরি ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে না—এমন আশঙ্কাও রয়েছে অর্থমন্ত্রীর।
কী কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন শেখ আবদুল হাই—জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী মৃদু হাসলেন। হাসতে হাসতেই তিনি বলেন, ‘এগুলো তো সাধারণত স্বাস্থ্যগত-ফত কারণ দেখিয়েই করা হয়।’
তবে জালিয়াতি ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবদুল হাইকে অপসারণ না করে তাঁকে পদত্যাগের সুযোগ করে দেওয়াটা অনৈতিক কাজ হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।