নড়াইল এক্সপ্রেসের যাদুর পরশে বাংলাদেশ
দিনা করিম: নড়াইল এক্সপ্রেসের যাদুর পরশে বাংলাদেশ। একেই বলে নড়াইল এক্সপ্রেসের যাদুর পরশ। য়ার স্পর্শে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। একের পর এক জয় ছিনিয়ে আনছে ওই যাদুকর। গত বছর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটিও ওয়ানডে সিরিজে হারেননি।
জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবারও জিম্বাবুয়ে-ঘরের মাটিতে টানা পাঁচ সিরিজ জয়। মাঝখানে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। মাশরাফির ২০১৫ শেষ হলো সাদামাটা একটি দলকে বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন করে।বিপিএলে এর আগেও দুবার ট্রফি হাতে তুলেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের অধিনায়ক হিসেবে। পরশু ট্রফির হ্যাটট্রিক হয়ে গেল।
মাশরাফির সাফল্যযাত্রার শুরু গত বছর। ওই সময় অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতালেন ৫-০তে। ২০১৪ আর ২০১৫-এর মধ্যে কত পার্থক্য? বলতে পারেন, মাত্র এক বছর। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই দুটো বছর একই মুদ্রার দুই পিঠ যেন। পাশাপাশি, কিন্তু একেবারে ভিন্ন দুই ছবি।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ ম্যাচ খেলে ২২টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ! একটি টেস্ট ড্র, চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুটো ওয়ানডে জয়, সেটিও আফগানিস্তান ও নেপালের মতো দলের বিপক্ষে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটি সিদ্ধান্ত নিল। টেস্টের দায়িত্ব মুশফিকুর রহিমের কাছে রেখে রঙিন পোশাকের দায়িত্ব তুলে দিল মাশরাফি বিন মুর্তজার কাঁধে। যাঁর নিজেরই অধিনায়কের অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না।
দুই দফায় সেই চেনা শত্রু চোট জাতীয় দলের পাশাপাশি ছিটকে দিয়েছিল অধিনায়কের দায়িত্ব থেকেও।এবার মুদ্রার ওপিঠ দেখলেন মাশরাফি। সুখের, জয়ের, গর্বের, আনন্দের। গত বছর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটিও ওয়ানডে সিরিজে হারেননি। জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবারও জিম্বাবুয়ে-ঘরের মাটিতে টানা পাঁচ সিরিজ জয়। মাঝখানে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। মাশরাফির ২০১৫ শেষ হলো সাদামাটা একটি দলকে বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন করে।
বিপিএলে এর আগেও দুবার ট্রফি হাতে তুলেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের অধিনায়ক হিসেবে। পরশু ট্রফির হ্যাটট্রিক হয়ে গেল। কী জাদু জানেন মাশরাফি? কী সেই রসায়ন? সরল মাশরাফির সরল উত্তর, ‘রসায়নটা আমি জানি না। সৌভাগ্যবান ছিলাম। তিনবারই বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগপর্যন্ত বলছি, তিনটা ফাইনাল খেলেছি। এখন বলতে পারছি তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সত্যিই আমি খুব লাকি।
’বিশ্বকাপ, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে-সাফল্যের পর বিপিএলে কুমিল্লার ট্রফি হাতে বছরটা শেষ করলেন মাশরাফি।শুধু কি ভাগ্য? ভাগ্য তো সাহসীদেরই পাশে এসে দাঁড়ায়। সাহসী মাশরাফি একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সবগুলো বাজির দানেই জিতেছেন জ্যাকপট। এর কৃতিত্ব মাশরাফি যেন নিতেই চান না। পুরো কৃতিত্ব দিয়ে দিতে চান কোচ আর খেলোয়াড়দের।
কুমিল্লার জয়ের প্রসঙ্গে বললেন, ‘কোচ সালাউদ্দিনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। কোচ আড়ালে থাকেন। দূর থেকে কোচের কাজটা দেখা যায় না। যে দলটা পেয়েছিলাম, সেটিকে চ্যাম্পিয়ন বানানোয় কোচের অনেক অনেক অবদান আছে। শুরু থেকে অনেক কাজ করেছেন। কোন খেলোয়াড়কে কোন ভূমিকায় খেলাতে হবে, কী কাজ করতে সেটার পরিকল্পনা করেছেন। পুরো দলও তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।’
বিপিএল নিয়ে বলতে গিয়েও কুমিল্লার বিজয়ী অধিনায়ক নয়, জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফিরই দেখা মিলল, ‘স্থানীয় খেলোয়াড়েরা পারফর্ম করেছে। এটা খুবই স্বস্তিদায়ক। জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান-বোলার পারফর্ম করেছে নিয়মিত। নতুনরাও উঠে আসছে। এর পাশাপাশি দলের বাইরে থাকা অলক-শাহরিয়ার নাফীসের মতো অভিজ্ঞরাও ভালো খেলেছে। একাদশে থাকার জন্য সুস্থ প্রতিযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই রান করছে। শুধু আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি জন্য নয়। সাব্বির, রিয়াদ, নাফীসরা রান করেছে; ইমরুল শেষ চারটি ম্যাচে দারুণ খেলেছে। এটা ইতিবাচক দিক।’
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কঠিনতম দিনগুলোর সাক্ষী বলেই হয়তো এও যোগ করছেন, ‘অধিনায়ক হওয়ার পরও এখনো আমার কঠিন সময়ও যায়নি। তাই সবাই অধিনায়কত্ব নিয়ে এত কথা বলছে। এটার পেছনে পুরো কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। খেলোয়াড়েরা ভূমিকা পালন না করলে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পারলে কোনো অধিনায়কের পক্ষেই ভালো দল গড়ে তোলা সম্ভব না। একটা পরিকল্পনাও লাগে। বাংলাদেশ দলে যে কাজটি করেন হাথুরু। কুমিল্লা দলে করেছেন সালাউদ্দিন।
এ বছর আর কোনো খেলা নেই। টানা ক্রিকেট সূচির পর লম্বা বিরতি পাচ্ছেন মাশরাফি। বর্তমান সূচি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া কাপে আবার নেতৃত্ব দেবেন দলকে।
মাশরাফি এখানে নিজের কথা বললেন না, ‘অনেক ভালো একটা বছর গেছে। তবে শুধু আমার না, পুরো বাংলাদেশ দলের। যতটুকু কঠোর পরিশ্রম করেছি, সে অনুযায়ী ফল পেয়েছি। সামনের দিনগুলোতে এর থেকে খুব ভালো চাই না। এভাবে চললেই আমি খুশি।’
কেবল মাশরাফির অধিনায়ত্বের জন্য কুমিল্লার সমর্থক বনে গিয়েছিল বাংলাদেশের বড় একটা অংশ। যে কুমিল্লা প্রথমে তাঁকে পেয়ে কিংবা সাকিবকে না পেয়ে হতাশ হয়েছিল; সেই তারাই পরে শুধু অধিনায়কের ভূমিকায় মাশরাফিকে খেলিয়েছে। ব্যাটিং-বোলিং কোনোটাই মাশরাফি করেননি।