• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

নোবেল বিজয়ীদের বিশ্ববিদ্যালয়-স্বপ্নের দুনিয়া স্ট্যানফোর্ড


প্রকাশিত: ৩:২৫ এএম, ১০ মে ১৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৬৮ বার

যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি প্রযুক্তির শহর, এক স্বপ্নের দুনিয়া। বলা হয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণেই এর চমৎ​কার বিকাশ হয়েছে। বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সান মাইক্রো সিস্টেমস, ইয়াহু, এইচপির সহপ্রতিষ্ঠাতারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার নোবেল পাওয়া ৫৯ জন বিজ্ঞানী ও গবেষক লেখাপড়া করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইউটিউবের সহপ্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জাভেদ করিমও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের একজন।

Stanford_University_Main_Quad_May_2011_001বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা করছেন বেশ কজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পান। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন এমন কজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর অনলাইন সাক্ষাৎ​কার নিই আমরা।

হক মুহাম্মদ ইশফাক পড়ছেন ম্যাথমেটিক্যাল ও কম্পিউটেশনাল সায়েন্সে। স্নাতক শেষ বর্ষের পড়াশোনা শেষ করতে আর কিছুদিন বাকি আছে তাঁর। বাংলাদেশ থেকে এইচএসসি পাশ করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন তিনি। এরই মধ্যে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে মাস্টার্স করার সুযোগ পেয়েছেন।

ইশফাক বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি কত কিছু নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। কখনো বায়োকেমিস্ট্রি, কখনো পরিসংখ্যান, কখনো প্রকৌশল আবার কখনো কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়েও পড়েছি। কাজের সময় পাশের টেবিলে একজন নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানীকে দেখলে কার না ভালো লাগে। আমি তো একবার ১৯৮০ সালে রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পল বার্গের সঙ্গে আধা ঘণ্টার বেশি গল্প করেছিলাম! প্রথম বর্ষে পড়ার সময় ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ আমাদের কম্পিউটার বিজ্ঞান ক্লাসে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন।’ বাংলাদেশ গণিত দলের সদস্য হিসেবে ইশফাক ২০০৮, ২০০৯ ও ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেন। দুবার অনারেবল ম্যানশনও পান তিনি।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম। নবায়নযোগ্য সৌরশক্তির জন্য সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস নিয়েই তাঁর গবেষণা। রাইসুল বলেন, ‘স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে সামনে একটা নতুন জগৎ উন্মুক্ত হয়েছে। সেই জগতে প্রত্যেকে তার নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্য বা গবেষণার জন্য কোনো বাধার মুখে পড়ে না। সিলিকন ভ্যালির মধ্যে হওয়ায় গবেষণার প্রয়োজনেই বিভিন্ন কোম্পানির অনেক বড় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। প্রযুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতির জায়গাগুলো চোখের সামনে দেখতে পাই। এটা প্রযুক্তিবিদ হিসেবে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’

stan--------------3রাইসুল স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশেও একদিন সিলিকন ভ্যালির মতো প্রযুক্তিবান্ধব নগর গড়ে উঠবে।

ফুলব্রাইট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফেলো হিসেবে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি করছেন আরেক শিক্ষার্থী ফারিয়াহ মাহজাবিন। তিনি সেমিকন্ডাক্টর অপটিকস ও অ্যাপ্লিকেশনস নিয়ে গবেষণা করছেন। ফারিয়াহ জানান, গবেষণার জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আলাদা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমাত্রিক পড়াশোনা আর গবেষণার পরিবেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।

বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবের শিক্ষার্থী হলেও কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন। রোবটিকস, কম্পিউটার গ্রাফিকস আর জীববিজ্ঞান নিয়েই গবেষণা জাহিদের। তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তেই প্রযুক্তির দুনিয়ায় কিছু না কিছু বদল আসছেই। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অগ্রণী।
বুয়েট থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স করে ২০১৪ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ফারিয়া হাই। পিএইচডি প্রোগ্রামের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি প্রাথমিকভাবে নোবেল ম্যাটেরিয়াল রিসার্চে আগ্রহী।’ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও গবেষণার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ফারিয়া বলেন, ‘এখানকার শিক্ষক, বিজ্ঞানী আর গবেষকেরা অসম্ভব সৃজনশীল ও কাজের প্রতি নিবেদিত। পাশের সিলিকন ভ্যালির কোম্পানি ইয়াহু, গুগল থেকে শুরু করে অসংখ্য উদ্যোগের শুরু এখান থেকেই। সামনের বছরগুলোয় বাংলাদেশ থেকে আর কিছু জ্বলজ্বলে নতুন মুখ দেখার অপেক্ষায় রইলাম।’

নতুনদের জন্য তথ্য
স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সারা বিশ্বের মেধাবীদের কাছে আরাধ্য বলে এখানে ভর্তি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক হয়ে থাকে। তাই আবেদন করার প্রস্তুতি এসএসসি পরীক্ষার পর থেকেই শুরু করা উচিত বলে জানান হক মুহাম্মদ ইশফাক। তিনি জানান, শুরুতেই ইন্টারনেট থেকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। তারপর আবেদনপত্র, স্কোর, রচনা আর সুপারিশ চিঠি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করে পাঠাতে হবে।
ভর্তির বিষয় ও আবেদন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। স্নাতকে স্যাট ও টোয়েফল পরীক্ষার স্কোর ভর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভালো স্কোরের পাশাপাশি রচনা ও সুপারিশ চিঠিগুলো সঠিক নিয়মে প্রস্তুত করা দরকার। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর কাজে লাগে।
কলেজ পর্যায়ের একাডেমিক ফলাফল, শিক্ষাক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম, বিভিন্ন মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মেলে। প্রতি বছরের ১ নভেম্বর আবেদন করার শেষ দিন। ব্যবসা, আইন ও চিকিৎসা বিভাগে আলাদা ভর্তি-প্রক্রিয়া। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে প্রতিবছর ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হয়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া স্নাতক পর্যায়ের ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রকারের বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা ওয়েবসাইট: http://admission.stanford.edu, http://engage.stanford.edu